ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আর্সেনিকমুক্ত পানি পাবে চুয়াডাঙ্গা পৌরবাসী

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৭ নভেম্বর ২০১৯

আর্সেনিকমুক্ত পানি পাবে চুয়াডাঙ্গা পৌরবাসী

রাজীব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা ॥ চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পানি শোধনাগার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এ শোধনাগার থেকে আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পাবে এক লাখ ৭৮ হাজার পৌরবাসী। চুয়াডাঙ্গা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর কার্যাদেশ পেয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পৌর এলাকায় এক একর জমির ওপর ৯ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার ৬৩০ টাকা ব্যয়ে এ পানি শোধনাগার নির্মাণ কাজ শুরু করে। এ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের ৩০ জুন। পানি শোধনাগারটির ধারণ ক্ষমতা ৩৫০ ঘন মিটার। পাম্প চালানোর জন্য বিদ্যুত সংযোগ পাওয়া গেলে পানি শোধনাগারটির কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, এই শোধনাগারটি নির্মাণ বেশ জটিল প্রক্রিয়া থাকার কারণে এটা শেষ করতে দেরি হয়েছে। নির্মাণ কাজে বিভিন্ন মানের বালি লেগেছে। যেনতেনভাবে যে কোন বালি ব্যবহার করে এটা করতে গেলে পানি শোধনের ক্ষেত্রে সঠিক অবস্থা তৈরি হবে না। সে কারণে বালি মিলিয়ে সংগ্রহ করতে গিয়ে কাজটি শেষ হতে দেরির মূল কারণ। ভূগর্ভস্থ থেকে পাম্পের মাধ্যমে পানি তুলে সেটা ট্যাঙ্কে রাখা হবে। সেখানে একটা বিকিরণের সঙ্গে সঙ্গে পানি থেকে লোহার ভাগ সরে যাবে। এরপর ওই পানি চলে যাবে বালি পরিশোধন স্তরে। সেখানে পানি শোধন হয়ে আরেকটি ট্যাঙ্কে জমা হয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্লোরফর্ম মিশ্রণে ওই বিশুদ্ধ পানি পাইপ লাইনের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে পৌর এলাকার গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আয়ুব আলী বিশ্বাস জানান, পানি শোধনাগার থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার জন্য তৃতীয় নগর উন্নয়ন পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ (সেক্টর) প্রকল্পের আওতায় পৌর এলাকায় ২ কোটি ৭০ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪২ টাকা ব্যয়ে ৮ হাজার ৪৫০ মিটার পাইপ লাইন স্থাপন, ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ৬৯১ টাকা ব্যয়ে ৬৮০ ঘন মিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ১টি ওভারহেড ট্যাঙ্ক নির্মাণ ও ৪ কোটি ২২ লাখ ৪১ হাজার ৪৬২ টাকা ব্যয়ে ৬ হাজার ৪০০টি পানির মিটার স্থাপন করার কাজ চলছে, যা কিছুদিনের মধ্যে শেষ হবে। চুয়াডাঙ্গা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ময়নুদ্দিন বলেন, পৌরসভার পানি শোধনাগারটিতে ১১ হাজার ভোল্টেজের সংযোগ দেয়া হবে। কুষ্টিয়া বিদ্যুত বিভাগের দফতর থেকে নির্দেশনা এলে সংযোগ লেগে যাবে। দ্রুত এ প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী বলেন, চুয়াডাঙ্গা আর্সেনিক প্রবণ এলাকা। এ জেলার পানিতে আর্সেনিকের পাশাপাশি প্রচ- আয়রন থাকায় জনসাধারণের খুবই সমস্যা হচ্ছে। পানিশোধনাগারটি চালু হলে পৌরবাসী নির্বিঘেœ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ পাবে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড গুলশানপাড়ার বাসিন্দা সহকারী অধ্যাপক পারভীন সুলতানা বলেন, পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কথা জেনে ভাল লাগলো। কারণ আমরা দীর্ঘদিন নিরুপায় হয়ে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন ও আর্সেনিকযুক্ত পানি খেয়ে আসছিলাম। তার কারণে আমরা অনেকেই পানিবাহিত জটিল রোগে ভুগছি। পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার বাসিন্দা প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর এমএম আলাউদ্দিন বলেন, পৌরসভা বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করলে আমরা পানিবাহিত রোগ থেকে পরিত্রাণ পাব। অপরদিকে বাড়িতে ব্যবহৃত পানির ফিটিংসগুলো আয়রনযুক্ত হবে না। এতে ফিটিংসও দীর্ঘস্থায়ী হবে। রূপছায়া সিনেমা হলপাড়ার বাসিন্দা চিকিৎসক বেলাল উদ্দিন বলেন, চুয়াডাঙ্গা আর্সেনিকপ্রবণ এলাকা। আমরা এতদিন আর্সেনিকযুক্ত পানি পান ও ব্যবহার করে আসছি। এটা নীরব ঘাতক। আর্সেনিকযুক্ত পানি অনেকটা ইচ্ছা করেই পান করা হচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রে এটা নিয়ে হইচই পড়ে যেত। চুয়াডাঙ্গায় আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই। এর ফলে মানুষ অনিরাপদ পানি পান করে জটিল রোগের ঝুঁকি থেকে বাঁচবে। গুলশানপাড়ার বাসিন্দা শিক্ষক মফিজুর রহমান জোয়ার্দ্দার বলেন, বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি সরবারহ পাব জেনে আমি খুশি। বর্তমানে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন ও আর্সেনিকযুক্ত পানি আমাদের বাধ্য হয়েই পান করতে হচ্ছে। এ কারণে আমরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছি। সেটা অন্তত আর থাকবে না।
×