ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষক লীগের নতুন সভাপতি সমীর, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম

প্রকাশিত: ১১:০৭, ৭ নভেম্বর ২০১৯

কৃষক লীগের নতুন সভাপতি সমীর, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিবর্তনের আভাসই স্পষ্ট হলো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে। কৃষক লীগের দশম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দীর্ঘদিন নেতৃত্বে থাকা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দু’জনই বাদ পড়েছেন। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের নতুন সভাপতি হয়েছেন কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র চন্দ। আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি। নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আগামী সাত দিনের মধ্যে কৃষক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণের পর বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কৃষক লীগের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে নতুন কমিটির নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদে ১৩ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১১ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়। পরে নিজেদের মধ্যে সমঝোতার প্রস্তাব করা হলে তারা কেউই ছাড় দেননি। পরে সাংগঠনিক নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নতুন সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র চন্দ বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে সংগঠনটির সাংগঠনিক ও কৃষি উপকরণ সম্পাদকও ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও সমীর চন্দ্র চন্দ সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের সভাপতি, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের কার্যনির্বাহী সদস্য, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণার পর নতুন সভাপতি সমীর চন্দ্র তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি যে দায়িত্ব পেয়েছি তা সুচারুরূপে পালন করার চেষ্টা করব। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, এই এগিয়ে যাওয়ার পথে কৃষি ও কৃষক বান্ধব রাজনীতির মাধ্যমে কৃষকলীগ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা রাখি।’ নতুন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া উম্মে কুলসুম স্মৃতি বিগত সংসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি কৃষকলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পেশায় তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের একজন আইনজীবী। ওয়ান ইলেভেনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তার জন্ম গাইবান্ধার পলাশবাড়ি এলাকায়। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, আমাকে যে আমানত দেয়া হলো তা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করব। এর আগে সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিলরদের নিয়ে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। এ সময় ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেলন হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কৃষক লীগের সম্মেলনে অনেকই প্রার্থী হয়েছেন। প্রত্যেকেরই যোগ্যতা আছে। যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের জনপ্রিয়তাও আছে। সভাপতি প্রার্থী ১৩ জন, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ১১ জন। বানাতে হবে একজন সভাপতি ও একজন সাধারণ সম্পাদক। তাদের সমাঝোতা করার জন্য ২০ মিনিট সময় দিয়েছিলাম। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কেউ নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করতে রাজি নন। আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামার্শক্রমে, আমাদের অভিভাবক দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি। পদ প্রার্থী সবার নামই তাকে জানিয়েছি। তিনি আমাদের একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বলেন, নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আপনারা তা মানবেন কিনা? জবাবে সবাই তাতে সম্মতি জানান। এ সময় কাদের আরও বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে কেউ বাদ যায় না। দায়িত্বের পরিবর্তন হয়। আজকে আমি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করব। আগামী সাত দিনের মধ্যে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে আমার কাছেও জমা দিতে পারেন, অথবা সরাসরি দলীয় সভানেত্রীর কাছেও জমা দিতে পারেন। এ সময় তিনি সভাপতি পদে কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির নাম ঘোষণা করেন। এ সময় সারাদেশ থেকে আসা কৃষক লীগের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটসরা সমির ও স্মৃতির নামে স্লোগান দেন। এর আগে কৃষক লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। সম্মেলনে মোতাহার হোসেন মোল্লাকে সভাপতি ও খোন্দকার শামসুল হক রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির কার্যক্রমে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ১৫ আগস্টে শহীদ কৃষক নেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত। উভয় দেশের অভিন্ন শত্রু সাম্প্রদায়িকতা ॥ অতুল কুমার এবারের সম্মেলনে একমাত্র বিদেশী অতিথি হিসেবে কৃষক লীগের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সর্বভারতীয় কৃষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক অতুল কুমার অঞ্জন। তিনি বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজীতে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি। এরা কৃষকদের কানে কানে ভাইরাস ছড়াচ্ছে। দু’দেশের এই অভিন্ন শত্রুদের বিরুদ্ধে কৃষক সমাজসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে।
×