ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশেষ কমিটির ৮ দফা প্রস্তাব

শিল্পে সার্বক্ষণিক গ্যাস সরবরাহের সুপারিশ

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৭ নভেম্বর ২০১৯

শিল্পে সার্বক্ষণিক গ্যাস সরবরাহের সুপারিশ

রশিদ মামুন ॥ শিল্পে সার্বক্ষণিক গ্যাস সরবরাহ দেয়ার সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত বিশেষ কমিটি। শিল্প কারখানায় জ্বালানি এবং বিদ্যুত সমস্যা নিরসনে সরকার গত সেপ্টেম্বরে ওই কমিটি গঠন করে। কমিটি বলছে তাদের আট দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে শিল্পের সঙ্কট দূর হবে। বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনিস্টিটিউটের (বিইপিআরসি) চেয়ারম্যান সুবীর কিশোর চৌধুরীকে প্রধান করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে বিদ্যুত জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তা ছাড়াও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের রাখা হয়। সব মিলিয়ে ২০ সদস্যের ওই কমিটি শিল্পের সঙ্কট নিরসনে এই সুপারিশ করল। এর আগে বিক্ষিপ্তভাবে শিল্পের জ্বালানি সঙ্কট নিরসনে আলোচনা হলেও এই প্রথম বৃহৎ পরিসরে সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা শুরু হলো। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে শিল্পের জন্য গ্যাস এবং বিদ্যুতের যথেষ্ট সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব। অন্যদিকে শিল্প মালিকদেরও নানামুখী সঙ্কটের অভিযোগ রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিশেষ কমিটি গঠন করে বিদ্যুত জ্বালানি খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। ওই কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। বিদ্যুত বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কমিটি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটি তাদের সুপারিশে বলছে এখন শিল্পে ১৬ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এই সময় আরও আট ঘণ্টা বাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টা করার সুপারিশ করেছে কমিটি। ইতোমধ্যে দেশে আমদানি করা গ্যাসের কারণে সরবরাহ বেড়েছে। এই সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে কোন কোন শিল্প মালিকরা ১৬ ঘণ্টার পরিবর্তে ২৪ ঘণ্টা সরবরাহ চাইছে। এই সুবিধা সকলের জন্য উন্মুক্ত করা উচিত। কমিটি বলছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে ক্যাপটিভ জেনারেশন চালু করতে হবে। এখনও শিল্প মালিকরা বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাচ্ছে না। যতদিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সুবিধা দেয়া সম্ভব নয় ততদিন ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের অনুমতি দিতে হবে। এক্ষেত্রে সম্প্রতি জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনের ক্ষমতা রহিত করার সুপারিশ করেছে কমিটি। নতুন জারি করা এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বলা হচ্ছে বিদ্যুত বিভাগের ছাড়পত্র না নিলে কেউ ক্যাপটিভে গ্যাস সংযোগ পাবে না। এর পরিবর্তে আগের মতোই ছাড়পত্র ছাড়াই ক্যাপটিভে সংযোগ দেয়ার কথা বলছে কমিটি। ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টকে জ্বালানি সাশ্রয়ী করার বিষয়ে সুপারিশ করেছে কমিটি। বলা হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্যাপটিভের জ্বালানি দক্ষতা দুই বছরের জন্য ৩০ ভাগ পরবর্তীতে ৩৫ ভাগ করার কথা বলা হচ্ছে। তবে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান ৬০ ভাগ জ্বালানি দক্ষতা অর্জন করতে পারলে তাদের প্রণোদনা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাপটিভে কো-জেনারেশন এবং ট্রাইজেনারেশন করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ একই জ্বালানি খরচে বহুমুখী ব্যবহারের চিন্তা করতে বলা হয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস বিতরণে গ্রাহক চাইলে এখন নিজেই ইলেক্ট্রনিক গ্যাস ভলিউম ক্যারেক্টর (ইভিসি) মিটার স্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিটি। শিল্প মালিকরা সঠিক চাপে গ্যাস পাচ্ছে না বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। যে চাপে গ্যাস দেয়ার কথা ওই চাপে গ্যাস না দিলেও বিল করা হচ্ছে নির্ধারিত ওই চাপেই। এতে করে বাতাস দিয়ে গ্যাসের দাম নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এই সমস্যা দূর করতেই মূলত ইভিসি মিটার স্থাপন করা হচ্ছিল। এক্ষেত্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো যখন যে চাপে গ্যাস পাবে ওই চাপেই বিল আসবে। অর্থাৎ শিল্প উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ২০১৫ সালে তিন বছরের মধ্যে সব শিল্পের আঙ্গিনায় ইভিসি মিটার স্থাপনের নির্দেশ দেয়। যদিও এখনও সব শিল্পের আঙ্গিনায় ইভিসি মিটার নেই। বিশেষ কমিটি সব শিল্পের আঙ্গিনায় ইভিসি মিটার স্থাপনের সুপারিশ করেছে। বিশেষ কমিটি বলছে শিল্পে গ্যাস এবং বিদ্যুত সাশ্রয়ী সরঞ্জামাদি ব্যবহার করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ¯্রডো এজন্য আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তা করছে। এজন্য শিল্পে জ¦ালানি এবং বিদ্যুত সাশ্রয়ী করতে এই সুপারিশ বাস্তবায়ন জরুরী বলে মনে করা হচ্ছে। কমিটি বলছে শিল্পে নেট মিটারিং সিস্টেম চালু করতে হবে। নেট মিটারিং পদ্ধতিতে শিল্পের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়। দিনের বেলা শিল্পের ব্যবহার অতিরিক্ত বিদ্যুত গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। যা শিল্প মালিকের মিটারে সংরক্ষিত থাকে। রাতে যা সমন্বয় হয়। এতে শিল্পের বিদ্যুত বিল কমে যায়। গত বছর থেকে চালু হওয়া এই প্রক্রিয়াতে শিল্প মালিকরা মুনাফা দেখছে। কমিটি তাদের সুপারিশে সব শিল্পের জন্য নেট মিটারিং ব্যবস্থাকে প্রণোদনার আওতায় আনার কথা বলছে। সারাদেশে বিক্ষিপ্তভাবে শিল্প কারখানা না স্থাপন করে বিশেষ এলাকায় শিল্প করার পক্ষে মত দিয়েছে কমিটি। ইতোমধ্যে যেসব রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে ওইসব এলাকায় বিদ্যুত এবং জ্বালানি সরবরাহ অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। সেই সব এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ সম্ভব। ফলে নির্দিষ্ট এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করার সুপারিশ করছে কমিটি। কমিটি বলছে ই-মেলের মাধ্যমে শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুত জ্বালানি বিষয়ক সমস্যার সমাধানের তথ্য সরবরাহ করতে হবে। কমিটি মনে করছে প্রতিটি বিতরণ কোম্পানির অভিযোগ কেন্দ্র রয়েছে। চাইলেই সেখান ই-মেইল সুবিধা চালু করা যায়।
×