ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে বসেই নির্বাচিত কৃষকরা মোবাইল ফোনে ধান বিক্রির নিশ্চয়তা ও বিক্রীত ধানের টাকা পাবেন

আমন মৌসুমেই কৃষকএ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ৭ নভেম্বর ২০১৯

  আমন মৌসুমেই কৃষকএ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ

মাহমুদুল আলম নয়ন, স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ সরকারী খ্যাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনায় এবার ধান ক্রয়ে অনিয়ম, দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তি-হয়রানি রোধসহ মধ্যসত্বভোগীদের নিকট থেকে থেকে কৃষকদের রক্ষায় এবার কৃষক এ্যাপস চালু হচ্ছে। ধানের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ও কৃষক এ্যাপস ধান সংগ্রহের স্বচ্ছতাসহ প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে। এতে সরকারী ক্রয় অভিযানে ধান দিতে ইচ্ছুক কৃষকরা ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে রেজিস্ট্রেশন করে জানতে পারবেন, তিনি সরকারী গুদামে ধান দেয়ার (বিক্রি) জন্য উপযুক্ত ও নির্বাচিত হয়েছেন কিনা। কোন গুদামে কি পরিমাণ ধান কৃষকরা দিতে পারবেন, সেটাও এই এ্যাপসের মাধ্যমে কৃষকরা জানতে পারবেন। এসব কিছুই করা হবে অনলাইনে। এছাড়া এর মাধ্যমে ঘরে বসেই কৃষকরা তাদের বিক্রীত ধানের ন্যায্যমূল্য পেয়ে যাবেন। রেজিস্ট্রেশনের পর শুধু একবার ধান দিতে নির্ধারিত খাদ্য গুদামে যেতে হবে। খাদ্য ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা একে ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সরকারের যুগান্তকরী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করছেন। চলতি আমন মৌসুম থেকেই খাদ্য অধিদফতর এই ‘ডিজিটাল খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা ও কৃষক এ্যাপ’ চালু করতে যাচ্ছে। এর সকল প্রযুক্তগত কার্যক্রম শেষ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বিত প্রশিক্ষণ। এতে উজেলা প্রশাসন, কুষি বিভাগ, খাদ্য বিভাগ ও ব্যাংক কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এই কৃষক এ্যাপটি পরীক্ষামূলকভাবে এবার দেশের ৮ বিভাগের ১৬ জেলার উপজেলা সদরে চলতি আমন মৌসুমে চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে আগামী বোরো মৌসুমে ব্যাপক ভিত্তিতে এর কার্যক্রম বাড়ানো হবে বলে খ্যাদ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। শুধু ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা নয়, কৃষকদের ধানের মূল্য নায্যমূল্য নিশ্চিত করেত এবার আমন মৌসুমে সবচেয়ে রেকর্ড পরিমাণ ধানও সারাদেশ থেকে সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকদের সুবিধাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য বলে খাদ্য বিভাগ জানিয়েছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিপিসি) কর্তৃক ডিজিটাল খাদ্য শস্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনায় কৃষক এ্যাপটি প্রস্তুত করেছে। সূত্র জানায়, সরকারী খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে অনিয়ম ও প্রকৃত কৃষকদের নিকট থেকে ধান নেয়ার ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীরা মূল বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এতে কৃষকদের হয়রানি ছাড়াও গুদামে সরসরি কৃষকের নিকট থেকে ধানক্রয় করার কথা থাকলেও নানা কারণে তা সঠিকভাবে কার্যকর করা হয় না। এর ফলে এক দিকে যেমন কৃষকরা সরাসরি সরকারী সংগ্রহ অভিযানে অংশ নিতে পারে না, তেমনি ধানের ন্যায্যমূল পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন কৃষকরা। এসব বিবেচনা সামনে রেখে এবকার ডিজিটাল ব্যবস্থায় কৃষক এ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি কৃষক নির্ধারণ ও ধান ক্রয়ের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা বড়িতে বসে মোবাইল ফোনে এ্যাপসের মাধ্যমে নিজেদেও নাম রেজিস্ট্রেশন করবেন। এক্ষত্রে কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তরা (ব্লক সুপার ভাইজার) তাদের সহায়তা দেবেন। প্রকৃত কৃষক যাচাইয়ে বিষয়টি কৃষি বিভাগ নিশ্চিত করবে। রেজিস্ট্রেশন করা কৃষকদের তালিকা পৌঁছে যাবে উপজেলা ধানচাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট। তিনি সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে এ্যাপের মাধ্যমে প্রকাশ্যে লটারি কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। নির্বাচিতদের তালিকা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নিকট পৌঁঁছবে এবং কৃষকদের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে নির্বাচিত এবং কবে কোথায় কি পরিমাণ ধান দিতে হবে তা কৃষকদের জানিয়ে দেয়া হবে। ধান ক্রয়ের টাকা কৃষকদের এ্যাকাউন্টে সরাসরি ব্যাংক থেকে টাকা পৌঁছে যাবে। এসবই করা হবে অনলাইনে। রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে কৃষকরা স্বয়ংক্রিয় মেসেজ পাবেন। এক জন কৃষক ১ বস্তা থেকে ১ মেট্রিক টন পর্যন্ত ধান সরকারী সংগ্রহ অভিযানে মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যম রেজিস্ট্রেশনের পর নির্বাচিত হলে দিতে পারবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি হবে দ্রুত ও স্বচ্ছ। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারীদের মাধ্যমে ময়েশ্চার মিটার নিয়ে কৃষকদের বাড়ি গিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে। ফলে গুদামে চাল দিতে এসে ময়েশ্চার (আদ্রর্তা) বেশি বলে ধান দিতে আসা কৃষকদের এই ব্যবস্থাপনায় আর গুদাম থেকে ধান ফিরিয়ে নেয়ার বিপাকে পড়তে হবে না। খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, এবারই দেশে সবচেয়ে বেশি আমন সংগ্রহ করা হবে। সাধারণত বোরো মৌসুমে ধানের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা বেশি থাকত। এবার আমন মৌসুমেও সরাকারী ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। সারাদেশ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমন মৌসুমে, শুধু চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার রেকর্ড পরিমাণ ধান সংগ্রহের সঙ্গে পূর্বের মতোই চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। ধানের সঙ্গে চলতি মৌসুমে চাল সংগ্রহ করা হবে প্রায় ৪ লাখ টন। ‘ডিজিটাল খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনায় কৃষক এ্যাপে’র পাইলট (পরীক্ষামূূলক) প্রকল্পের আকার অন্তর্ভুক্ত জেলাগুলোর উপজেলা সদর নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক বিভাগ থেকে ২টি জেলা থেকে ২টি উপজেলা এর আওতায় থাকছে। এগুলো হচ্ছে-বগুড়া সদর ও নওগাঁ, সাভার ও গাজীপুর সদর, ময়মনসিংহ ও জামালপুর সদর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, বরিশাল ও ভোলা সদর, রংপুর ও দিনাজপুর সদর, যশোর ও ঝিনাইদহ সদর এবং মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ সদর। এসব উপজেলা থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোনালী বা অগ্রণী ব্যাংকের নির্ধারিত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ঢাকায় খাদ্য ভবনে সোমবার থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এতে আমন সংগ্রহ অভিযানে ডিজাটাল খাদ্য শস্য ব্যবস্থাপনাসহ কৃষক এ্যাপের বিষয়ে নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। মোট ৬টি ব্যাচে এসব কর্মকর্তাদের আগামী ১৪ নবেম্বর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ চলবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের পৃথকভাবে একই সময়ে মধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আর আমন মৌসুমের ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে ২০ নবেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি আর চাল সংগ্রহ শুরু হয়ে চলবে হবে ১ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ ব্যপারে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. নাজমানারা খানম সোমবার জানান, প্রকৃত ও বিশেষ করে প্রন্তিক কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও তাদের উৎপাদিত ধানের মূল্য নিশ্চিতসহ ক্রয় অভিযান স্বচ্ছ, হয়রানিমুক্ত এবং মধ্যস্বত্বভোগী দূর করতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কৃষকরা যাতে ধানের আদ্রর্তা নিয়ে যেন কৃষকরা সমস্যায় না পড়েন, সেজন্য খাদ্য বিভাগ ও কৃষি বিভাগের কাছে থাকা মিটারের সঙ্গে আরো ৩ হাজার মিটার কেনা হচ্ছে। কৃষকদের নিকট এ্যান্ড্রুয়েড ফোন যদি না থাকে তাহলে স্বজন বা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বা কৃষিভিাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা কৃষকদের সহায়তা করবে। ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা এ্যাপস মিলারদের নিকট চাল গম সংগ্রহের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ছোট আকাওে প্রধমে এবার পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে এই কৃষক এ্যাপস ব্যবহার করা হচ্ছে। এর প্রচারে লিফলেট মাইকিং ও হাটবাজারে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় গম্ভীরা দল পাঠান হবে। যাতে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়। এছাড়া স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গেও বৈঠক করা হবে বলে তিনি জানান। মহাপচিালক আরও জানান, রেজিস্ট্রেশন থেকে নির্বাচিত ও ধান দেয়ার অনুমোদন সংক্রান্ত প্রতিটি ধাপে কৃষকরা স্বয়ংক্রিয় বার্তা পাবেন।
×