ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হৃত্বিক কুমার ঘটক ॥ বাংলা সিনেমার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৭ নভেম্বর ২০১৯

  হৃত্বিক কুমার ঘটক ॥ বাংলা সিনেমার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

ভাবা যায়। একটা সিনেমা। যার নায়ক হলো গ্রাম আর নায়িকা নদী। কি অবাক লাগছে! লাগবেই তো, সিনেমায় নিজস্ব কায়দায় গল্প বলার এটাই ওস্তাদি। বাংলা সিনেমায় এমন ওস্তাদি যারা জানতেন এবং ঠিক ঠিক দেখাতে পারতেন তাদের মধ্যে হৃত্বিক কুমার ঘটকের নাম প্রথম সারিতে। বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো চুরানব্বই। এই বয়সের বহু মানুষ আজও আমাদের সমাজে দিব্যি বেঁচে আছে। হৃত্বিক ঘটক গত হয়েছেন মাত্র একান্ন বছর বয়সে! সময়ের বিচারে খুবই সামান্য! হৃত্বিক তার ৫১ বছর জীবনে যা করে গেছেন তা কয়েক শতক এই উপমহাদেশ তথা বিশ্ব চলচ্চিত্র তাকে মনে রাখবে। কেমন ছিল তার চলচ্চিত্র এবং তিনি। সময়ে সময়ে এমন প্রশ্ন মানুষের মনে ওঠা স্বাভাবিক। আগেই বলেছি একটা সিনেমা যার নায়ক হলো গ্রাম আর নায়িকা নদী এমন চিত্রনাট্য সামনে রেখে মনুষ্য সমাজকে সাক্ষী রেখে সিনেমা বানিয়ে দেখিয়েছেন। চলচ্চিত্রের নাম তিতাস একটি নদীর নাম। কথাসাহিত্যিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ তার কালজয়ী উপন্যাস সৃষ্টি করেছিলেন নদীকুলের গ্রামীণ জনপদ আর অবিরাম বয়ে যাওয়া ক্ষয়িষ্ণু নদী তিতাসকে কেন্দ্র করে। এই উপন্যাস থেকে সিনেমা বানাতে নিজের জন্মভূমি অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশে আসেন হৃত্বিক ঘটক। আসলে এই মানুষটার ব্যক্তিগত জীবন চলচ্চিত্রের একটা বিশাল ক্যানভাসের মতো। দুঃসহ জীবনের ভয়াবহতা উতরে কখন মানুষকে ভাল বাসতে ভুলে যাননি। মানুষ সম্পর্কে এক অভিব্যক্তি প্রকাশ করে ছিলেন এভাবে ‘মানুষকে ভালবাসি আমি পাগলের মতো। মানুষের জন্যই সবকিছু। মানুষই শেষ কথা। সব শিল্পের শেষ পর্যায়ে মানুষকে পৌঁছাতে হয়।’ দুঃখপীড়িত মানুষ এবং তাদের জীবন ছিল তার চলচ্চিত্রের আসল গল্প। পাশাপাশি সমসাময়িক ক্ষয়ে যাওয়া সমাজ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি যেমন- নাগরিক, যান্ত্রিক, মেঘে ঢাকা তারা, সুবর্ণরেখা, কোমল গান্ধার, যুক্তি তক্কো আর গপ্পো- এ সকল সিনেমার পরতে পরতে জবীন ঘনিষ্ঠ দর্শন এবং চলমান সময়ের আরশি খুঁজে পাওয়া যায়। নিজের দর্শনে শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসী ছিলেন এই তপ্ত সূর্য মানুষটি ক্ষয়ে গেলেও আলো দিতে ভোলেননি। সত্যজিতৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা কিংবা বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত দীর্ঘ সময় নিয়ে বাংলা ভাষার সিনেমাকে যতটা উঁচুতে নিয়ে গেছে এদের অর্ধেক সময়ে হৃত্বিক তার সংগ্রামী জীবনের মধ্য দিয়ে নিজের মহিমা প্রতিষ্ঠিত করেছে। গত ৪ নবেম্বর ছিল এই তপ্ত সূর্যের ৯৪তম জন্মদিন ছিল। বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল থেকে গণমানুষের সামাজিক নেটওয়ার্কিংয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা বহির্প্রকাশের কমতি ছিল না। এটা যে কেবল তার জন্ম এবং প্রাপ্ত বয়স সূত্রে বাংলাদেশী হওয়ার খাতিরে তা কিন্তু নয়। বাঙালী যানে কতটা কাটা-ছেঁড়া গেছে এই রুগ্ন শীরের ওপর থেকে। ব্যথায় হাত পরলে আঘাত মনে পরে। হৃত্বিক ঘটক এমন একটি অধ্যায় যার জন্মমৃতু আমাদের বার বার ভাবায়... সব্যসাচী দাশ
×