ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেঁধে দেয়া মূল্যে আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না

প্রকাশিত: ১১:০১, ৬ নভেম্বর ২০১৯

বেঁধে দেয়া মূল্যে আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের মূল্য ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি করার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মানেনি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকাররা। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সুস্পষ্ট বক্তব্য বর্তমানে মিয়ানমার থেকে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ যেখানে ৯২ টাকায় চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাচ্ছে সেখানে ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রির কোন অবকাশ নেই। তবে ব্যবসায়ীদের পক্ষে জানানো হয়েছে, আরও কয়েকদিন পরে পেঁয়াজের মূল্য হ্রাস পাবে। এদিকে অনুসন্ধানে যে তথ্য মিলেছে তাতে দেখা যায়, মিয়ানমারের পেঁয়াজ এসে থাকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে। এ স্থলবন্দরে কাস্টমস বছরজুড়ে মিয়ানমারের পেঁয়াজের মূল্য ৪২ টাকায় আমদানি দেখিয়ে শুল্কায়ন করে আসছে। এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইদ্রিস অভিযোগ করেছেন, বর্তমানে মিয়ানমার থেকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছতে ব্যবসায়ীদের খরচ হচ্ছে ৯০ থেকে ৯২ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সেলিম হোসেন গত সোমবার চট্টগ্রাম এসে পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা আর খুচরা বাজারে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রির নির্দেশনা দেন, যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর করার কথাও বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে সোমবার রাতেই চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে উপসচিবের সঙ্গে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে উপসচিবকে জানানো হয়, মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পেঁয়াজ এসে পৌঁছুতে যেখানে কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ৯২ টাকা খরচ হয় সে পেঁয়াজ কিভাবে পাইকাররা ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করবেন। উপসচিব ব্যবসায়ীদের পাল্টা প্রশ্ন করেন, টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমার পেঁয়াজের আমদানি মূল্য কেজিপ্রতি ৪২ টাকা দেখানো হচ্ছে। সেখানে এ পেঁয়াজ ৯০ টাকার ওপরে বিক্রি করার সুযোগ থাকে না। ব্যবসায়ীদের পক্ষে বিষয়টি খোলাসা করে জানানো হয়েছে, এটা কাস্টমসের বিষয়। কয়েক আমদানিকারকের সঙ্গে যোগসাজশ রেখে সারা বছরই পেঁয়াজের আমদানি মূল্য কেজিপ্রতি ৪২ টাকা দেখানো হয়ে থাকে। এ ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোন বিষয় রয়েছে কি না তা তদন্ত করে দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে চট্টগ্রামের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সুনির্দিষ্ট একটি সিন্ডিকেট। টেকনাফের সাবেক এক এমপির ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে এ সিন্ডিকেট। এরা পেঁয়াজের নামে অন্য কোন পণ্য নিয়ে আসে কি না তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনাও রয়েছে। এছাড়া গড়পড়তা কেজিপ্রতি ৪২ টাকায় কেন পেঁয়াজের শুল্কায়ন হয় তাও প্রশ্নসাপেক্ষ। এখানে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয় তার যথাযথ শুল্কায়ন হয়, নাকি পরিমাণ কম দেখিয়ে শুল্ক আদায় করা হয় তা নিয়েও তদন্তের দাবি উঠেছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষে বলা হয়েছে, বাজার চলবে বাজারের গতিতে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষে সুনির্দিষ্ট দর বেঁধে দিয়ে বাজারকে সচল রাখা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়। কেননা, যে কোন ধরনের পণ্য আমদানিতে রফতানিমূল্য ঘোষণা হয়ে থাকে। সে মূল্যের ওপর শুল্কায়ন এবং পরিবহন ও গুদাম ভাড়া যোগ করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। যেখানে বিক্রেতার সুনির্দিষ্ট পরিমাণ লাভের বিষয়টি জড়িত। ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করে বা পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে বাজারজাত করার প্রক্রিয়ায় আর্থিক ক্ষতি গুনবে এমন কথা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে দর বেঁধে দেয়া যায় একমাত্র সরকারী প্রক্রিয়ায় আমদানি প্রক্রিয়ায়। অর্থাৎ টিসিবির ক্ষেত্রে এ ধরনের মূল্য বেঁধে দেয়া হলে কারও কিছু বলার থাকে না। কিন্তু বাজার গতিশীল থাকে বেসরকারী পর্যায়ের আমদানির ওপর। ব্যবসায়ীরা আরও বলেছেন, ‘সাপ্লাই এ্যান্ড ডিমান্ড’ নামের একটি কথা রয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে রফতানি অর্থাৎ সাপ্লাই সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে আছে। ভারত সরকার ইতোমধ্যে কর্নাটক থেকে যে পেঁয়াজ রফতানির নির্দেশনা প্রদান করেছে তা এখনও কার্যকর হয়নি। অপরদিকে, মিসর এবং চীন থেকে ছোট আকারেও পেঁয়াজের চালান আসছে। কিন্তু সে পেঁয়াজের চাহিদা দেশীয় এবং মিয়ানমার এবং ভারতীয় পেঁয়াজের তুলনায় একেবারেই কম। বর্তমানে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে মঙ্গলবার যেখানে মিসরের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ৯২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে মিসরের পেঁয়াজও বিক্রি হয়েছে একই দরে। আর চীনের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এক্ষেত্রে দেখা যায় বাজারমূল্যে মিয়ানমারের পেঁয়াজের দর এখন শীর্ষে রয়েছে। এর মূল কারণ দেশীয় এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজের ঝাজ অন্য পেঁয়াজের তুলনায় বেশি। এরপর রয়েছে ভারতীয় পেঁয়াজের গুণগত মান। বর্তমানে যেহেতু ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি নেই, সেক্ষেত্রে দেশজুড়ে মিয়ানমারের পেঁয়াজের আধিপত্য সৃষ্টি হয়েছে। আর দেশীয় পেঁয়াজের উৎপাদন হলেও তা এখনও বাজারে আসেনি। দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের বাজারের মূল্য ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে বাধ্য।
×