ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাসচালক, পথচারী, মালিক, পুলিশ আইন সম্পর্কে জানেন না ;###;একেকজন একেক কথা বলছেন

সড়ক আইন নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা ॥ সংশ্লিষ্ট কেউ জানেন না কবে থেকে প্রয়োগ

প্রকাশিত: ১১:০০, ৬ নভেম্বর ২০১৯

সড়ক আইন নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা ॥ সংশ্লিষ্ট কেউ জানেন না কবে থেকে প্রয়োগ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ প্রায় ৮০ বছরের অচলায়তন ভেঙ্গে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এক নবেম্বর থেকে কার্যকর শুরু হলেও এর প্রয়োগ নিয়ে শুরু হয়েছে লেজেগোবরে অবস্থা। আইন প্রয়োগের প্রধান দায়িত্ব বর্তায় রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিআরটিএ ওপর। তারপর পুলিশ ও চালক-যাত্রীসহ পথচারী। যাদের ওপর প্রয়োগ নির্ভর করছে তাদের কোন পক্ষই আইন সম্পর্কে মোটেও জানে না। তাছাড়া সরকারের কোন রকম সচেতনতামূলক প্রস্তুতি ছাড়াই আইনটি কার্যকর শুরু হয়েছে। এমনকি আইনের বিশদ ব্যাখ্যার জন্য বিধিমালা পর্যন্ত প্রণয়ন হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষই বলতে পারছে না কবে থেকে আইনের প্রয়োগ শুরু হবে। মোটর ভেহিক্যাল এ্যাক্ট নামে ১৯৩৯ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে একটি আইন প্রবর্তন করা হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে মোটর ভেহিক্যাল এ্যাক্ট নামে আইনের আংশিক সংশোধন করা হয়। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনসংখ্যা। তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ে যানবাহন। দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটি। ঢাকায় বসবাস প্রায় দুই কোটি মানুষের। আর দেশে বিআরটিএ রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যা ৪১ লাখ ১৭ হাজারের বেশি। রাজধানীতে ১৫ লাখ ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে গত বছর ও চলতি বছরের শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় একাধিক শিক্ষার্থীর। জোড় দাবি ওঠে নতুন করে সড়ক আইন করার। এতে সাড়া দেয় সরকার। গত কয়েক বছর ধরেই সব মহলের দাবির প্রেক্ষিতে নতুন আইন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। আইনটি এক বছরের বেশি সময় আগে সংসদে পাস হলেও পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের আপত্তির মুখে তা কার্যকর সম্ভব হচ্ছিল না। একপর্যায়ে আইনের কিছু ধারা সংশোধনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। এবারের জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত আইনটি কার্যকর করার তাগিদ দেন। এর পরপরই তড়িঘড়ি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। আইন প্রয়োগের আগে সচেতনতাসহ যথাযথ উদ্যোগ না নেয়ায় সরকারের সমালোচনা করেছেন পরিবহন খাত বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা শুধু শাস্তির ওপর নির্ভর করে না। আগে সিস্টেম প্ল্যানিং, ডিজাইন, ইঞ্জিনিয়ারিং, এডুকেশনÑ এরপর আইনের প্রয়োগ করতে হয়। যাতে সড়কের সবপক্ষই স্বনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। কেউই নিজে থেকে অপরাধ করতে আগ্রহী হবে না। এমন পদ্ধতি তৈরি করতে হবে। এগুলো বিবেচনায় না এনে এ আইন কতটুকু কাজে আসবে সন্দেহ আছে। আমরা চাই দ্রুত সচেতনতামূলক কর্মসূচী চালানো হোক। এদিকে ঢাকায় যত পরিবহন চলছে এর প্রায় অর্ধেক হলো মোটরসাইকেল। কিন্তু কতটা আইন মানছে বা আইন সম্পর্কে সচেতন বাইক চালকরা। মাঠের চিত্র বলছে সবকিছু আগেই মতোই। আইন ভঙ্গের তালিকায় এখনও মোটরসাইকেল চালকরাই প্রথম। চালকের হেলমেট থাকলেও অধিকাংশ যাত্রী হেলমেট ব্যবহার করছেন না। মানছেন না পুলিশের সিগন্যাল। ফুটপাথ দিয়ে চলতে দেখা গেছে লাটভাই খ্যাত মোটরসাইকেল চালকদের। কোন কোন বাইকে তিনজন চড়তেও দেখা গেছে। তেমনি যাত্রীরাও ইচ্ছেমতো চলছেন। সিগন্যাল চলা অবস্থায় হাত উচিয়ে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হতে দেখা গেছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সিগন্যালগুলোতেও একই চিত্র। মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে এখন রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, ফার্মগেট, মগবাজার, মৌচাকসহ বিভিন্ন এলাকায় ফুট ওভারব্রিজ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ফলে পথচারীরা এখন আগের চেয়ে বেপরোয়া। যদিও নতুন সড়ক আইনে বেপরোয়া রাস্তা পারাপারে ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। কি বলছেন চালকরা। লাভলী পরিবহনের চালক আশরাফ জানালেন, কঠোর আইন হয়েছে শুনেছি। কিন্তু জানি না আমাদের জন্য কি ধরনের বার্তা আছে। মালিকরা তো কিছু বলছেন না। লাব্বাইক পরিবহনের চালক মিজান বলছেন, আইনে নাকি মালিকদের বেশি সুবিধা দেয়া হয়েছে। আমাদের জন্য খালি দ- আর দ-। কিন্তু আইন সম্পর্কে কোন কিছুই জানি না। নিউ ভিশন পরিবহনের চালক আলাল বললেন, আমাদের নাকি আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এখন দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। তখন জানা যাবে নতুন আইনে আমাদের করণীয় কি আছে। জাবালে নূর পরিবহনের কন্ডাক্টর রিয়াজ বলেন, আইনে নাকি সব দোষ আমাদের। মালিকরাও সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে কোন দায় নেবে না। তাহলে আমরা কোথায় যাব। তিনি বলেন, আমাদের আইন সম্পর্কে কোন পক্ষ থেকে ধারণা দেয়া হয়নি। তবে চালকদের মধ্যে আইনে মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে তা সবারই কম বেশি জানা। যদিও কোন অপরাধে এই দ- তা জানেন না কেউই। রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ সিগন্যালের মধ্যে মগবাজার একটি। যেখানে মিনিটে সিগন্যাল অতিক্রম করে অন্তত দেড় শতাধিক যানবাহন। অথচ পথচারীদের এ নিয়ে কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই। যখন সিগন্যাল চলছে তখন হাত উঁচিয়ে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন দিব্যি। ইস্পাহানী, বিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদেরও বেপরোয়া রাস্তা পারাপার হতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে ইস্পাহানী স্কুলের শিক্ষার্থী অবনিতার মা দীপিকা বলেন, সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই সবার সঙ্গে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করি। স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর বলেন, নতুন আইন সম্পর্কে জানি না। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছি তা বুঝি। ভবিষ্যতে সচেতন হওয়ার চেষ্টা থাকবে। উড়াল সড়কের পরও মৌচাক থেকে বাংলামোটর-শান্তিনগর-কাকরাইল-মগবাজার রেল গেট পর্যন্ত যানজট এখন নিয়মিত বিষয়। এসব এলাকায় ফুটপাথে মোটরসাইকেল চালাতে দেখা যায় নিয়মিতই। ওয়্যারলেস এলাকায় এক চালক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, দ্রুত গন্তব্যে যেতে হবে তাই ফুটপাথ ব্যবহার করছি। নিরুত্তর হয়ে রইলেন বাইক রাইডার আমিন মিয়া। তিনি বলেন, মালিবাগ মোড় থেকে শাজাহানপুর পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। তেমনি শাজাহানপুর থেকে খিলগাঁও রেলগেটের দু’পাশের চিত্র একই রকমের। অনেক সময় নিরুপায় হয়ে ফুটপাথ ব্যবহার করতে নয়। নতুন আইন সম্পর্কে তেমন একটা জানা নেই বলেও জানান তিনি। ঢাকার অন্তত ২০টি ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও নতুন আইনে জরিমানা করছে না পুলিশ। পুরনো আইন অনুযায়ী নানা অপরাধে মামলা ও জরিমানা হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইন সম্পর্কে তাদের যেমন অজ্ঞতা রয়েছে তেমনি যাত্রী ও চালকরাও কিছুই জানেন না। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে আইনের প্রয়োগ কষ্টসাধ্য। এজন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচী জরুরী বলেও মনে করেন তারা। সেইসঙ্গে বিভিন্ন অপরাধে মামলা ও জরিমানা করার যন্ত্র ‘পজ মেশিন’ এখনও আপডেট করা হয়নি। যুক্ত করা হয়নি নতুন আইনের সব ধারা সম্বলিত সফটওয়্যার। তাই পুরনো আইনের ধারায় অপরারেধর শাস্তি হচ্ছে। নতুন আইন কার্যকর করতে পজ মেশিন কেনা হচ্ছে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম দ্রুতই শুরু হবে বলে জানান কর্তব্যরত সার্জেন্ট ও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। মাঠের চিত্র বলছে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতার শেষ নেই। আইনের বিধিবিধান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই বেশিরভাগ চালক-পথচারীরও। আইনের বিধিমালা না থাকায় আইন প্রয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারাও। কার্যকরের আগে আইনটি নিয়ে কোন ধরনের প্রচার চালায়নি সরকারের সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষই। নামমাত্র একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দায় সেরেছে বিআরটিএ। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আরও এক মাস সময় লাগবে ওয়েবসাইট ডেভেলপ করতে। সাময়িকভাবে কাগজের সিøপে মামলা দেয়ার প্রস্তুতি নিলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত সিøপও পৌঁছেনি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে। ফলে গত ১ নবেম্বর থেকে সরকার আইনটি কার্যকরের তারিখ নির্ধারণ করলেও সড়কে প্রয়োগ হচ্ছে না। কবে নাগাদ আইনটির পূর্ণ বাস্তবায়ন শুরু হবে, তাও স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না আইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষই। অথচ ১ নবেম্বর থেকেই এ আইনকে ঘিরে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে রাজধানীতে ভীষণ বিপাকে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা। নতুন আইন কার্যকরের ঘোষণা আসায় রাজধানীতে ত্রুটিপূর্ণ কাগজ নিয়ে কোন গাড়ি নামছে না। বিশেষ করে এ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে গণপরিবহনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আইন প্রয়োগ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ একেক ধরনের কথা বলেছে। এর আগে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত শনিবার আইন প্রয়োগের দ্বিতীয় দিন সাংবাদিকদের জানান, আগামী সাত দিন প্রচার চালানো হবে। এ সময় কোন মামলা না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। আবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান ড. কামরুল আহসান বলেন, এ সপ্তাহ পর আইনটির আইনগত দিকগুলো বাস্তবায়ন করতে পারব। আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইনের প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম। সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এ আইনটি প্রয়োগের আগে আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আগামী সপ্তাহ থেকে সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ করা হবে।’ এর আগে গত রবিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘নতুন আইনের প্রয়োগ সোমবার থেকে শুরু হবে। মামলার জন্য সিøপ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেটাও হয়নি।’ এদিকে আইনকে সাধুবাদ জানালেও বিধিমালা তৈরির আগে আইন প্রয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। সরকারের সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান বলেছেন, নতুন আইনে মালিকদের বেশি ছাড় দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রণয়ন করে আইন কার্যকরের প্রস্তাব দিয়েছেন। সেইসঙ্গে আইনের বিভিন্ন ধারা সংস্কার চান পরিবহন মালিকরা। গত বছর সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়। ১ নবেম্বর থেকে আইনটি কার্যকরের জন্য গত ২২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ১ এর উপ-ধারা (২) এ দেয়া ক্ষমতাবলে সরকার ১ নবেম্বর তারিখকে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করল। নতুন আইনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা নতুন এ আইনকে স্বাগত জানাই। যেগুলো এখন বাস্তবায়ন করা সম্ভব সেগুলো বাস্তবায়ন করুক। আমাদের সহযোগিতা থাকবে। আমরা প্রতিদিনই প্রচার চালাচ্ছি। যাদের কাগজপত্র ঠিক নয়, এর দায়দায়িত্ব তাদের। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তাদের সহযোগিতা করারও কোন সুযোগ নেই। তারা যদি মামলা খাওয়ার ভয়ে না চালায় তবে কী করার আছে। বিআরটিএ চেয়ারম্যান ড. কামরুল আহসান বলেন, আমরা তো ১ নবেম্বর থেকে কার্যকরের জন্য প্রজ্ঞাপন দিয়েছি। কিন্তু অসচেতনতা থাকলে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই সচেতনতা বাড়াতে কাজ শুরু হয়েছে। যেসব জটিলতা দেখা দিয়েছে, সেগুলো সমাধানে কাজ করছি। বিআরটিএ বিধিমালা তৈরি করেনি। সেটি প্রক্রিয়াধীন। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখেছি আইন প্রয়োগে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব প্রক্রিয়া দ্রুতই শেষ হবে। আশা করছি এক সপ্তাহ পর থেকে আইনটি কার্যকর করতে পারব। আইন মাঠে না নামলে বাস্তবতা বোঝা যায় না। ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, আইন প্রয়োগের আগে জনসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে। বাস টার্মিনাল ও গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। পরিবহন মালিক শ্রমিকদের একত্রে করে তাদের এ আইন সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা প্রায় ৮০০ জন সার্জেন্ট ও টিআইকে নতুন আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কমিশনার আরও বলেন, নতুন আইনের জন্য পজ মেশিন সফটওয়্যার আপডেটের কাজ চলছে। সেটা না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেস সিøপের মাধ্যমে মামলা দেব। সড়ক পরিবহন আইনে সংযুক্ত বিভিন্ন নতুন বিধান তুলে ধরে কমিশনার বলেন, এ আইনে সাজার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষ সাজার ভয়ে হলেও আইন মানবে। উন্নত বিশ্বের মতো এ আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিপরীতে পয়েন্ট পদ্ধতি রয়েছে। আইন অমান্য করলে পয়েন্ট কমতে থাকবে। একপর্যায়ে বরাদ্দকৃত পয়েন্ট শেষ হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। কমিশনার আরও বলেন, সড়ক পরিবহন আইনে অপরাধের দায়ে কাউকে জরিমানা করা হলে, সে ক্ষেত্রে আপীলের সুযোগ আছে। পথচারী ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার না হয়ে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হলে জরিমানা করা হবে। মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, আইনে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের পয়েন্টে কাটার বিষয়টি যুক্ত থাকলেও বিআরটিএ থেকে ইস্যুকৃত লাইসেন্সগুলোতে কোন পয়েন্ট যুক্ত নেই। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
×