ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাগুরায় দূষণের শিকার এলাকাবাসী

ফসলি জমি ও নদী দখল করে ইটভাঁটি

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ৬ নভেম্বর ২০১৯

ফসলি জমি ও নদী দখল করে ইটভাঁটি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা, ৫ নবেম্বর ॥ জেলার চার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিন ফসলি জমি ও নদী ভরাট করে গড়ে উঠেছে অন্তত ৬০টি ইটভাঁটি। এতে একদিকে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে তেমনি পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে এলাকার মানুষ। অন্যদিকে ভেঙ্গে যাচ্ছে নদী। একাধিক সূত্র মতে, মাগুরা সদর, মহম্মদপুর, শ্রীপুর ও শালিখা এ চার উপজেলায় ইটভাঁটির সংখ্যা ৯০টি। এগুলোর মধ্যে অন্তত ৬০টি ইটভাঁটি গড়ে উঠেছে তিন ফসলি জমি ও মধুমতি নদী দখল করে। সদর উপজেলার জগদল, লস্করপুর, চাঁদপুর, পারলা, আঠারোখাদা, কাশিনাথপুর, ছোটব্রিজ, ইটখোলা, আমুড়িয়া, ধলহারা, ইছাখাদা, মহম্মদপুরের তল্লাবাড়িয়া, ধোয়াইল, কানুটিয়া, শ্রীপুরের উপজেলা সদর, বাখেরা শালিখার আড়পাড়া, শতখালী, হরিশপুর, বুনাগাতিসহ বিভিন্ন মাঠে তিন ফসলি জমিতে অন্তত ৩০টি ইটভাঁটি গড়ে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে সদর উপজেলার বাগবাড়িয়া, কুছুন্দি, পাতুড়িয়া এলাকার নদী দখল করে একই জায়গায় গড়ে উঠেছে অন্তত ৩০টি ইটভাঁটি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই এসব ভাঁটিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়। কিন্তু ভাঁটিগুলোতে অবৈধভাবে ইট পোড়ানো বন্ধ হয়নি। ভাঁটি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, জেলার প্রতিটি ভাঁটিতে মৌসুমজুড়ে গড়ে ৫০ লাখ ইট পোড়ে। প্রতি ১ লাখ ইটে ৮০ টন থেকে ১০০ টন হিসাবে ৯০টি ইটভাঁটিতে প্রয়োজন প্রায় ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি কাঠের। টন প্রতি ২,৫০০ টাকা হিসাবে যার মূল্য অন্তত শত কোটি টাকার। যা সংগৃহীত হয় জেলার বিভিন্ন বন ও বাঁশ বাগান থেকে। ফসলি জমিতে নতুন নতুন ইটভাঁটি গড়ে ওঠার বিষয়ে সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম, বাচ্চু মিয়া, গোলজার শেখ, মোহাম্মদ শেখসহ ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে জানান, লস্করপুর মাঠে তাদের তিন ফসলি জমিতে ফাতেমা ব্রিকস নামে ইটভাঁটি করার জন্য ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে অনুমোদনের আবেদন করেছে সদরের ভিটাসাইর গ্রামের আওয়াল মোল্যা নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। অথচ তিন ফসলি জমির এ ফসলেই তাদের খাওয়া, লেখাপড়াসহ সাংসারিক সকল চাহিদা মেটায়। জোরপূর্বক নামমাত্র ইজারার মধ্যমে এসব জমি লিজ নিয়ে ইটভাঁটি করলে তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পাশাপাশি এলাকার পরিবেশ দূষিত হবে। নদী দখল করে অবৈধ ইটভাঁটি গড়ে ওঠার বিষয়ে বাগবাড়িয়ার আবুল বরকতসহ অনেকে জানান, তাদের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মধুমতি নদী দখল করে মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে অন্তত ৩০টি ইটভাঁটি গড়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল নদীর চর দখল করে এসব ভাঁটি গড়ে তুলেছেন। মাগুরা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জাহিদুল আমিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে তিন ফসলি জমিতে কোন ইন্ডাস্ট্রি বা ইটভাঁটি করা যাবে না। বিষয়টি জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বরদের জানানো হয়েছে। তবু কেউ যদি এসব জমিতে ইটভাঁটি করে সেটি হবে আইনের পরিপন্থী’। মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন ফসলি জমিতে যাতে কোন ইটভাঁটি গড়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া অবৈধ ইটভাঁটির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে’।
×