ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা যুবকদের অবৈধ প্রশিক্ষণ

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ৬ নভেম্বর ২০১৯

রোহিঙ্গা যুবকদের অবৈধ প্রশিক্ষণ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ প্রায় চার বছর ধরে জঙ্গী সংগঠন হুজির রিজিওনের দায়িত্ব পালনে ছিলেন যে ব্যক্তি তিনি এখন ছদ্মবেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঠিকাদার। যিনি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আল ইয়াকিনের বাংলাদেশের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনিই বর্তমানে বাংলাদেশী পরিচয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশ-বিদেশে। মাঝে মাঝে রোহিঙ্গা হিসেবে রাত যাপনও করছেন আশ্রয় শিবিরে। ভোটার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন চট্টগ্রাম থেকে। কুখ্যাত এ রোহিঙ্গার নাম ঈসা সাইদী। জানা গেছে, একটি বিদেশী ফান্ডের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় গোপনে বিদেশে চলে যায় ঈসা সাইদী। ওই সময় মিয়ানমার সীমান্তে আরএসও’র ঘাঁটিতে থাকা প্রথম সারির এক রোহিঙ্গা জঙ্গী নেতার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহে সুবিধার জন্য বিদেশে ফোন করানো হয়। আরএসও এবং অসহায়ত্বের দোহাই তুলে রোহিঙ্গাদের নামে বিদেশ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেন তিনি। আরব আমিরাত, ওমান সৌদিআরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশক’টি দেশে তিনি বছরে কয়েকবার সফর করেন। আরএসওর অর্থায়নে তার পরিচালনাধীন কুতুপালং পুরাতন ক্যাম্পে কয়েকটি মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে। তন্মধ্যে কুতুপালং পুরাতন রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের ফুটবল খেলার মাঠের ইমাম বোখারী মাদ্রাসার বছরের অর্ধেক বাজেট যোগান দেন তিনি। বালুখালী তাজনিরমার খোলা ক্যাম্পের আরএসএরও পরিচালিত ৮টি মাদ্রাসা মসজিদের ইমাম খতীবদের প্রতি মাসের বেতন দেন এই ঈসা সাইদী। এ ছাড়া তিনি রোহিঙ্গা যুবকদের আইটি বিশেষজ্ঞ করে তুলতে গত রমজান মাসে মাদ্রাসা পড়ুয়া ২০০ রোহিঙ্গা ছাত্রদের ২৬ দিনব্যাপী এক কর্মশালার আয়োজন করেছিলেন। তুরস্কের দারুদ আসলাম নামে এক ব্যক্তির অর্থায়নে প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মাঝে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে (রোহিঙ্গা) উন্নত মডেলের একটি করে মোবাইল সেট বিতরণ করা হয়। তার পরিচালনাধীন একটি অনলাইন টিভিও রয়েছে। যেটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আরসার বিরোধিতা করার জন্য। বর্তমানেও অবৈধভাবে প্রশিক্ষণ দিতে কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবকদের বাছাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতাকামী আরাকানীদের সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদ ইসলামী বুরমা’ ’৯৫ সালে হুজির সঙ্গে মিলিয়ে কাজ করলেও বর্তমানে আরাকানী হুজিরা আল-মাহাদ আল ইসলামী নামে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। আল-মাহাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বে আছেন এই ঈসা সাইদী। কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পে ঈসা সাইদীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকা-ে বেশ তৎপর। সূত্র জানায়, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হারাকাহ আল-ইয়াকিন (আরসার) লক্ষ্য উদ্দেশের সঙ্গে আরএসওর মিল থাকলেও আদর্শিক চেতনায় তাদের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। বিদেশী ফান্ড সংগ্রহ ও রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে গরমিল রয়েছে। এমন কোন দিন-রাত নেই আশ্রয় ক্যাম্পে আরসা-মাহাদের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ নেই। সেই ঈসা সাইদী সুকৌশলে চট্টগ্রাম থেকে ভোটার হয়ে পাসপোর্ট তৈরি করেছেন। তবে তার পিতা-মাতাকে উখিয়ার হলদিয়া পালং ৪নং ওয়ার্ড থেকে ভোটার করিয়েছেন। তাদের রহস্যজনক আচরণ গতিবিধি দেখে উখিয়ার ৩নং হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের এক ইউপি সদস্য বলেন, ঈসা সাঈদীর পরিবারের ৮ সদস্য পরিচয় গোপন করে ভোটার হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরসহ ওই অভিযোগ বিভিন্ন দফতরে প্রেরণ করেছি। এদিকে ঈসা সাইদী জামায়াত নেতাদের পরিচালিত এনজিও রিসডার সঙ্গে চুক্তি করে তুরস্কের রুহামা নামের এনজিওর কাজ ভাগাভাগি করে কুতুপালং লম্বাশিয়াতে (তুর্কী পাহাড়ে) ৫শ’টি শেড নির্মাণ করেছে। লম্বাশিয়া ও তুর্কী পাহাড়ে সন্দেহজনক ব্যক্তি ইসা সাইদী ও উখিয়ার কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্প বি-ব্লকের নুর হুসাইন উভয়ে মিলে ঘর নির্মাণ, কলস্থাপন করেছে। উখিয়ায় তথ্য গোপন করে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ৮সদস্যদের বিরুদ্ধে আবুল আলম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাদী হয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছে।
×