ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের সিরিয়া নীতিতে ক্ষুব্ধ কট্টরপন্থী খ্রীস্টানরা

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ৬ নভেম্বর ২০১৯

ট্রাম্পের সিরিয়া নীতিতে ক্ষুব্ধ কট্টরপন্থী খ্রীস্টানরা

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছতে সফল হয়েছেন এ কথা শুনে ইভানজেলিক্যাল খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বাসাম ইশাকের মধ্যে আশার সঞ্চার হয় যে, তার পরিবারের দেশে ফেরা নিরাপদ হবে। চুক্তিটি এমনই যে, এতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইউএসএ টুডে। কিন্তু তুরস্কে ১৭ অক্টোবর চুক্তিটির ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ অতিক্রমের পরও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ইশাকের নিজ শহর প্রায় জনশূন্য অবস্থায়ই রয়েছে। তুর্কী সমর্থিত মিলিশিয়াদের নির্যাতন-আশঙ্কার মধ্যে খ্রীস্টান ও কুর্দীরা পালিয়ে গেছে শহরটি ছেড়ে। অস্ত্রবিরতি ঘোষণাকালে পেন্স অঞ্চলে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য তুরস্কের প্রতিশ্রুতিতে জোর দেন। কিন্তু ইশাক ও অন্যরা বলেন, উগ্রপন্থী আধাসামরিক গ্রুপগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তারা লড়াই অব্যাহত রেখেছে এবং বাসিন্দাদের ওপর ভীতি প্রদর্শন করছে। ইশাক বলেন, তারা আতঙ্কগ্রস্ত। এ সম্প্রদায়ের মানুষ ১৯১৫ সালে তাদের লোকের বিরুদ্ধে তুরস্কের গণহত্যার বিষয়ে বিভিন্ন ঘটনা শোনার মধ্যদিয়ে বড় হয়েছে। এরা ২০১১ সালে সিরিয়া ত্যাগ করে বর্তমানে ওয়াশিংটনে বসবাস করছে। ইশাক সেফো গণহত্যার উল্লেখ করছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোম্যানদের হাতে প্রায় ৩ লাখ খ্রীস্টানের নিহত হওয়ার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে খুব কম। ইশাক ইউএসএ টুডেকে বলেন, তারা সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি আজও দেখছেন। যেমন পুনরাবৃত্তি হয় বারবার ইতিহাসের। ৬০ বছর বয়স্ক খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী ইশাক সর্বশেষ তার বাড়িতে এসেছিলেন ২০১৮ সালে। তিনি এখন ওয়াশিংটনে মার্কিন সহযোগী সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) রাজনৈতিক শাখা সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিলের (এসডিসি) প্রতিনিধিত্ব করছেন। সিরিয়ায় এ প্রকাশ্য সঙ্কটের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী খ্রীস্টান নেতাদের কাছ থেকে কেন এ ধরনের তীব্র প্রতিক্রিয়া আসছে এবং সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার অত্যন্ত বলিষ্ঠ সমর্থকদের কারও কারও মধ্যে কেন অপমানজনক কণ্ঠস্বর উচ্চারিত হচ্ছে তার ব্যাখ্যা বেরিয়ে এসেছে ইশাকের ভীতি থেকে। সমালোচকরা বলেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপ সিরিয়া আক্রমণে এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস) সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকার প্রধান সহযোগী এসডিএফ নামে পরিচিত কুর্দী বাহিনীকে প্রতারণায় সবুজ সঙ্কেত জুগিয়েছে তুরস্ককে। বর্তমানে কেউ কেউ ভবিষদ্বাণী করছেন, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ইয়াজীদী ও অন্য সংখ্যালঘুদের মতো মার্কিন সহযোগী কুর্দীদের বিরুদ্ধে জাতিগত বিশোধন চালানো হবে। এ অঞ্চলে বসবাসরত খ্রীস্টানদের সঠিক সংখ্যা জানা নেই। কিন্তু কোন কোন বিশেষজ্ঞের মতে, এদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। অঞ্চলটিতে আরব, কুর্দী, ইয়াজীদী ও অন্য সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রীতিকর পরিবেশে বসবাস করে। জাতিগতভাবে মিশ্রিত সংগঠন এসডিএফ সিরীয় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ লাভের জন্য তুরস্ক চেষ্টা শুরু করেছে এবং বাশার আল-আসাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সিরীয় সরকারী বাহিনীও নিয়ন্ত্রণ লাভের জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে। হোয়াইট হাউসের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা অবশ্যই ঠিক এখনই কোন জাতিগত বিশোধনের ঘোষণা দেব না। কিন্তু আমরা এ সম্ভাব্যতার বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ রয়েছি এবং বিষয়টিতে খুবই স্পষ্ট যে, সেসব কিছু সহ্য করার ইচ্ছা আমাদের নেই। সিরিয়ায় পরিস্থিতি যথার্থ কোন ঝুঁকিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সমস্যা নয়। এর একটা স্থানীয় রাজনৈতিক পরিণতি রয়েছে। ইভানজেলিক্যাল খ্রীস্টানদের সিরীয়নীতি বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে মোহমুক্তি ঘটলে ২০২০ সালের নির্বাচনে তাকে বড় ধরনের মূল্য দিতে হবে।
×