ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারিস চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরল যুক্তরাষ্ট্র

জলবায়ু চুক্তিকে বিদায়

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ৬ নভেম্বর ২০১৯

জলবায়ু চুক্তিকে বিদায়

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার কথা জাতিসংঘকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চুক্তি প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে এক বছর সময় লাগবে। ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরের দিন এই মেয়াদ শেষ হবে। এপি, বিবিসি ও সিএনএন। জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় প্যারিস চুক্তিভুক্ত রয়েছে বিশ্বের ১৮৮টি দেশ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত মাসে প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। সে সময় পম্পেও জানান, এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ‘অন্যায্যভাবে অর্থনৈতিক বোঝা’ চাপিয়ে দিয়েছে। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কম রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও ১৮৭টি দেশ। পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা দেড় ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে চেষ্টা করবে বলেও সম্মত হয় দেশগুলো। ২০১৭ সালের ১ জুন প্যারিস চুক্তি ছাড়ার কথা বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড ইউরোপিয়ান এ্যাফেয়ার্স ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জানিয়েছিল, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের ফলে প্যারিস চুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া অন্য ক্ষমতাধর দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করার সুযোগ পেয়ে যাবে বলেও প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়। এতে রাশিয়া ও তুরস্কের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, দেশ দুটি চুক্তি মেনে চলছে না। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ১৫ শতাংশই হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তবে একই সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবেলা করতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেয়া দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। শিল্পকারখানা ও কৃষি খাত থেকে বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ কিংবা গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাবকে জলবায়ু পরিবর্তন বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলা হয়। এই গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে উষ্ণায়ন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ট্রাম্প মার্কিন শিল্পের ওপর লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানোর লক্ষে একটি কৌশল প্রণয়ন করেছেন। ওই কৌশলের অংশ হিসেবেই প্যারিস চুক্তি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এমন এক সময় যুক্তরাষ্ট্র এ পদক্ষেপ নিল যখন বৈশ্বিক উষ্ণতার সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব এড়ানোর জন্য বিজ্ঞানীরা ও বিশ্বের বহু সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ তেল ও গ্যাস উৎপাদক যুক্তরাষ্ট্রই ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের জন্য দায়ী। পাকাপাকিভাবে বের হয়ে যাওয়ার পর প্যারিস চুক্তির বাইরে থাকা একমাত্র দেশ হবে তারা। সোমবার এক টুইটার পোস্টে চুক্তি ছাড়ার বিষয়ে নেয়া পদক্ষেপের কথা নিশ্চিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। সঙ্গে এমন দাবিও করেছেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধি করলেও যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণের মাত্রা কমিয়ে এনেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে পাঠানো মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিটির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্যারিস চুক্তি থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন ২০১৫ সালের এই চুক্তিটিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। ওই সময় তারা ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমণ ২০০৫ সালের মাত্রা থেকে ২৬-২৮ শতাংশ হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণাকালে ট্রাম্প ওই প্রতিশ্রুতি বাতিল করার অঙ্গীকার করেন। চীনের মতো অন্যান্য বড় দূষণকারীদের নির্গমণ বাড়ানোর সুযোগ রেখে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দাবি করেন তিনি। চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার নোটিস দেয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের আইনানুযায়ী ২০১৯ সালের ৪ নবেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তিনি বাধ্য ছিলেন।
×