ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনুসন্ধানী রিপোর্টারের এক অনন্য প্রতিকৃতি

প্রকাশিত: ০৯:০২, ৬ নভেম্বর ২০১৯

অনুসন্ধানী রিপোর্টারের এক অনন্য প্রতিকৃতি

মার্কিন সেনাবাহিনী ১৯৬৮ সালের ১৬ মার্চ ভিয়েতনামের মাই লাই গ্রামে এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। তারা গুলি ও বেয়োনেট চার্জ করে ৫০৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে; তার মধ্যে ১৮২ জন মহিলা যাদের ১৭ জনই ছিল গর্ভবতী এবং ১৭৩ জন শিশু-কিশোর যার মধ্যে ৫৪ জন ছিল কোলের শিশু। মার্কিন কর্তৃপক্ষ এই লোমহর্ষক ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল। সেইমুর হার্শ নামে এক অনুসন্ধানী সাংবাদিকই প্রথম তার রিপোর্টে এই ভয়ঙ্কর বিভীষিকাময় ঘটনা উন্মোচন করে বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত ও শিহরিত করেছিলেন। শুধু এই একটি রিপোর্টই তাঁর সাংবাদিকতার ক্যাবিয়ারকে বর্ণাঢ্য করে তোলার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু না। এই দুর্ধর্ষ, দুঃসাহসিক ও স্বাধীন সাংবাদিকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কলম থেকে আরও বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ও সাড়া জাগানো কাহিনী বেরিয়েছিল যার মধ্যে ছিল আমেরিকার রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র, ইসরাইলের পারমাণবিক বোমা ইত্যাদি। পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী এই সাংবাদিক সেইমুর হার্শ সম্প্রতি ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু এবং সিরিয়া যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংবলিত কাহিনী রচনা করেছেন। প্রতিটি কাহিনীই হয়েছে বিস্ফোরক। অর্থাৎ দারুণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ ক্যারিয়ার জীবনে হার্শ যুক্তরাষ্ট্রের ‘দি নিউইয়র্ক টাইমস’এর মতো নামী-দামী পত্রিকায় যেমন কাজ করেছেন তেমনি ‘ডিসপ্যাচ নিউইয়র্ক সার্ভিস’-এর মতো ছোট প্রতিষ্ঠানেও করেছেন। স্বাধীনভাবে নিজের স্বভাবসুলভ স্পষ্ট ও সোজা সাপটা কথা লেখার সুযোগ পেলে তিনি কোথায় লিখছেন তা নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। সম্মান বা মর্যাদার পিছনে নয়, হার্শ ছুটেছেন কাহিনীর পিছনে। আত্মজৈবনিক কাহিনী ‘রিপোর্টার : এ মেমোয়ের’ গ্রন্থে তা সুস্পষ্ট। মাই লাই গ্রামে মার্কিন সৈন্যদের নারকীয়তার ওপর তার রিপোর্টিং তাকে পুলিৎজার পুরস্কার এনে দিলেও তাতে তিনি আলোড়িত হননি। এই পুরস্কারের অর্থ তার কাছে শুধু এটুকুই ছিল যে তিনি সঠিক কাজটাই করেছেন। তিনি এস্টাবলিশমেন্টের প্রশংসাধন্য হতে চাননি। পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য লেখার কোন প্রয়োজন তার ছিল না। পুরস্কার পাওয়ার জন্য লিখতে শেখা একজন রিপোর্টারকে এস্টাবলিশমেন্টের শিবিরে ঠেলে দেয় বলে তার অভিমত। হার্শের এটা ছিল না। শিকাগোর কষ্টে সৃষ্টে চলা এক পরিবারে হার্শের জন্ম। তার সমবয়সী বন্ধুদের অনেকেরই যেসব সুযোগ-সুবিধা ছিল তার কোনটাই হার্শের ছিল না। কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন স্রেফ কপালের ও নিজের সঙ্কল্পের জোরে। কর্মক্ষেত্রেও এই সঙ্কল্প নিয়েই অগ্রসর হয়েছিলেন। শিকাগোয় রাতের শিফটে কাজ শুরু করেন। কাহিনী বা ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি রিপোর্টারের কাজের মর্মবস্তু আয়ত্ত করেছিলেন। তার কথা হলো সবার কথা নিশ্চয়ই শুনতে হবে। তাই বলে কারও বক্তব্য বিনা প্রশ্নে গ্রহণ করা চলবে না। ১৯৬৪ সালের এক রাতে পুলিশের সঙ্গে একদল আফ্রিকান-আমেরিকানের সংঘর্ষ হয়। সে ঘটনা কভার করতে গিয়ে পুলিশের কাছে শোনেন যে আফ্রিকান-আমেরিকানরা পুলিশের দিকে গুলি ছুড়েছিল। তাই পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। হার্শ তাঁর কর্মস্থল এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অফিসে নিয়ে গিয়ে ঘটনার ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে লেখেন কিভাবে আফ্রিকান-আমেরিকানরা পুলিশের দিকে গুলি ছুড়েছিল। সেদিনের নৈশকালীন সম্পাদক তার লিড রিপোর্টটি ঢেলে সাজিয়ে শিরোনাম দিলেন ‘গানফায়ার ব্রোক আউট টুনাইট।’ সেই সম্পাদকের নাম বব ওল্মস্টেড। হার্শ গোটা ব্যাপারটার প্রতিবাদ করলে ওল্মস্টেড তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ‘তুমি কি কোন আফ্রিকান-আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলেছিলে?’ আসলেও হার্শ করেননি। স্মৃতিকথায় সেটা স্মরণ করে হার্শ লিখেছেন : ‘সেদিন পুলিশের প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে দাঙ্গাকারীদের কাছে পৌঁছার কোন চেষ্টাই আমি করিনি। কি নিয়ে দাঙ্গা বেঁধেছিল তা জানবার চেষ্টাও আমি করিনি।‘ হার্শ লিখেছেন ‘ঐ রাতেই ওল্মস্টেডের কাছে আমি মাস্টার্স ডিগ্রীর সমান সাংবাদিকতা লিখেছিলাম। সাংবাদিকতার অনেক মাস্টার্স ডিগ্রী কোর্সে এই পাঠ দেয়া হয় না যে একজন সাংবাদিককে রাষ্ট্রের স্টেনোগ্রাফার কিছুতেই হওয়া চলবে না। হার্শ তার স্মৃতিকথার শুরুতেই বলেছেন আজ একজন ‘রিপোর্টার তোতাপাখির সামান্য একটু উপরে। এ এক রূঢ় মূল্যায়ন তথাপি কথাটার গুরুত্ব আছে। সাংবাদিকতা জগতের অনেকেই আজ কোনরকম প্রশ্ন উত্থাপন ব্যতিরেকে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি বা বক্তব্য গ্রহণ করে থাকে। প্রেস রিলিজগুলো সরাসরি পুনর্মুদ্রিত করা হয় যেন ওগুলো সংবাদ প্রতিবেদন। রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে অসাধারণ গুরুত্ববহ সব ঘটনা বা কাহিনীকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। রাষ্ট্রের ওপর আস্থা নিউজ রুমের এবং অভিমত লেখকদের একটা মৌলিক মনোভাবে পরিণত হয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, কর্পোরেশনগুলোর ওপর আস্থাও একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তেল চুইয়ে বেরিয়ে এসে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ ঘটালে ঐ বিপর্যয়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের বক্তব্যের তুলনায় তেল কোম্পানির বক্তব্যকে অধিক গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। এ হলো এমন এক পাঠ যা হার্শ তার ক্যারিয়ারের গোড়ার দিকে শিখেছিলেন। শিকাগোর অধ্যায় পার করার পর হার্শ ওয়াশিংটনে চলে গেলে ১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সরাসরি সম্মুখীন হন। সেটা হন ভিয়েতনাম যুদ্ধে। ওয়াশিংটন পোস্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লিওনার্ড ডাউনি ‘দি নিউ মাকক্র্যাকার্স’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘জাতীয় ইস্যুগুলোর ওপর পেন্টাগণ সংবাদদাতাদের লেখা বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনগুলোতে সরকারী বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটত। উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রমও অবশ্য ছিল। তবে এসব রিপোর্টারকে তাদের নিষ্ঠুর সততার জন্য ধিকৃত হতে হতো। হার্শ লিখেছেন : ‘ভিয়েতনাম যুদ্ধকে সমর্থন করলে আপনি হতেন বস্তুনিষ্ঠ; বিরোধিতা করলে আপনি হতেন বামপন্থী ও অবিশ্বাসযোগ্য’ হার্শ যথাথই হ্যারিসন স্যালিসবেরীর কাজের প্রশংসা করেছেন। স্যালিসবেরী ‘দি নিউইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিনিধি হিসেবে হ্যানয়ে গিয়ে শহরে নগরে মার্কিন বিমান হামলার মুখে উত্তর ভিয়েতনামীদের মনোবল এবং অসামরিক ব্যক্তিদের হতাহতদের বিষয়ে লিখেছিলেন। স্যালিসবেরী ভিয়েতনামে যা দেখেছিলেন হার্শ পেন্টাগণে গিয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ভিতর থেকে তথ্য নিয়ে তা মিলিয়ে দেখেছিলেন। তার ভিত্তিতে তিনি মার্কিন বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া, বোমা হামলার নিষ্ফলতা ও অসামরিক লোকদের হতাহতের ওপর অসাধারণ সব প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। মার্কিন সামরিক নেতৃবৃন্দ হার্শের পরিবেশিত সব তথ্য অস্বীকার করেছিল। এ প্রসঙ্গে হার্শ তার গ্রন্থে যে উপসংহার টেনেছেন তা গুরুত্বপূর্ণ : ‘যুদ্ধ পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিরা তাদের হারানো অবস্থান রক্ষার জন্য যে পরিমাণ মিথ্যাচারের আশ্রয় নেবে সে সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিল না।’ হার্শ কিভাবে তার কাহিনীগুলো সংগ্রহ করতেন যা অন্য রিপোর্টাররা বাহ্যত মিস করত? প্রথম বিষয়টা হচ্ছে তার মনোভাব। সরকার ও কর্পোরেটগুলোর ক্ষমতা সম্পর্কে তিনি সংশয় পোষণ করতেন। তিনি নেতৃবৃন্দের ভয়ে ভীত থাকতেন না। তাদের অনুমোদন লাভের জন্য ব্যগ্র থাকতেন না। এর ফলে তিনি তাদের এমন সব প্রশ্ন করতে পারতেন যা তারা চাইত না তাদের জিজ্ঞেস করা হোক কিংবা যে কোন উপায়ে তারা সেই প্রশ্ন উত্থাপনে বাধা দেয়ার চেষ্টা করত। যুক্তরাষ্ট্র সর্বদাই ভাল বা সর্বদাই সঠিক এমনটি তিনি বিশ্বাস করতেন না বলেই তার পক্ষে অসাধারণ সব রিপোর্ট করা সম্ভব হয়েছিল। হার্শের ‘রিপোর্টার’ গ্রন্থটি তরুণ সাংবাদিকদের পাঠ করা উচিত। বইটি সাংবাদিকতার ওপর একটা পাঠ বিশেষ। ভাল সাংবাদিকতা কিভাবে করতে হয় এটা তার এক ম্যানুয়েল। তার সাংবাদিকতা পদ্ধতির ব্যাখ্যা মিলতে পারে এমন কিছু মৌলিক বিষয় হলো: হার্শ লিখেছেন ‘লেখার আগে পড়ুন।’ অর্থাৎ রিপোর্টারদের বিভিন্ন লেখালেখি প্রচুর পড়তে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ বা চেপে যাওয়া নিবন্ধের উল্লেখ করেছেন। মার্কিন বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত এলিনর ল্যাঙ্গারের ঐ নিবন্ধ পাঠ করেই হার্শ জানতে পেরেছিলেন যে মার্কিন সরকার রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচী চালাচ্ছে। ঐ নিবন্ধ না পড়লে তিনি তা জানতে পারতেন না এবং এর পিছনে ছুটতেন না। দ্বিতীয়ত : গবেষণাও করতে হবে। ল্যাঙ্গারের নিবন্ধ পাঠ করার পর হার্শ পেন্টাগণ লাইব্রেরিতে গিয়ে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচী বিষয়ক যা কিছু পেয়েছিলেন পড়েছিলেন। প্রকাশ্যে পাওয়া যা কিছু লেখালিখি সবই তিনি পড়ে হজম করে নিয়েছিলেন। তিনি জানতে পারেন কোন কোন মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র মজুদ আছে। তিনি এসব ঘাঁটির সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলো পাঠ করে কর্নেল ও জেনারেলদের জন্য আয়োজিত রিটায়ারমেন্ট পার্টি সম্পর্কিত রিপোর্টগুলো দেখতে পান এবং তা থেকে এই অফিসাররা কে কোথায় অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জানতে পারেন। এই তথ্যাবলী গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তৃতীয়ত: সোর্স খুঁজে বের করা এবং তাদের সঙ্গে খায়খাতির রাখা। হার্শ এরপর ঐ ঘাঁটিগুলো যেসব শহরে ছিল এবং ঐ অফিসাররা যেসব শহরে চলে গিয়েছিলেন সেখানে গিয়ে হাজির হন। তিনি ঐসব অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার ও অন্যদের সঙ্গে দেখা করে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চান। অসাধারণ ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে তিনি এই কাজগুলো করেছিলেন যার ফলে হার্শ দু’একজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। এরা আবার তার কাছে অন্য মানুষদের কথাও উল্লেখ করেন। এভাবেই হার্শ উইলিয়াম কেলীকে পেয়েছিলেন যার কাছ থেকে তিনি মাই লাই হত্যাযজ্ঞের বিবরণ জানতে পেরেছিলেন। এসব অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারদের কেউ কেউ রাসায়নিক ও জীবাণুু অস্ত্র কর্মসূচী নিয়ে বেশ বিচলিত ছিলেন কিংবা তাদেরকে বাদ দিয়ে অন্যদের পদোন্নতি দেয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ ছিলেন। হার্শ তার বইয়ে বলেছেন, ‘ভাল সামরিক রিপোর্টার হতে চান? তাহলে এ ধরনের অফিসারদের খুঁজে বের করুন।‘ হার্শ এই শ্রেণীর ও অন্য অনেক সামরিক অফিসারের সঙ্গে খায়খাতির ছিল। তারা তাকে গোপনে বিভিন্ন রিপোর্ট চালান করে দিত। হার্শের সাংবাদিকতা পদ্ধতির জন্য এ জাতীয় সোর্স গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিআইএর এক প্রাক্তন ডিরেক্টর উইলিয়াম কোলবি মন্তব্য করেছিলেন : ‘সিআইএ সম্পর্কে আমি যতটুকু যা জানি হার্শ তার চেয়ে বেশি জানেন।’ হার্শ বইয়ে উল্লেখ করেছেন, কর্মকর্তাদের সাক্ষাতকার নিলে প্রায়শ তিনি প্রাসঙ্গিক বিষয়টির বাইরে তাদের কাজকর্ম নিয়ে জিজ্ঞেস করতেন। যেমন একজন বিচারকের সাক্ষাতকার নেয়ার সময় হার্শ তার আপীল বিষয়ক রায়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন যা তিনি ইতোমধ্যে পড়ে নিয়েছেন। হার্শের বক্তব্য : ‘মূল বিষয়ে প্রশ্ন করা দিয়ে সাক্ষাতকার শুরু করতে নেই। কখনই না। আমি সেই বিচারককে জানতে দিতে চেয়েছিলাম যে আমি স্মার্ট এবং কিছু বিমূর্ত চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা রাখি। আমি চেয়েছিলাম তিনি আমাকে পছন্দ করুক ও আমার ওপর আস্থা রাখুক।’ সেই বিচারক শেষ পর্যন্ত হার্শকে মাই লাই কাহিনীর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলেছিলেন। হার্শ লিখেছেন, আরও জানার জন্য লিখতে হবে এবং কাহিনীতে লেগে থাকতে হবে। হার্শ যতক্ষণ প্রয়োজন কাহিনীতে লেগে থাকতেন। তিনি ছোট ছোট রিপোর্ট লিখতেন। এতে সবাইকে নাড়া দেয়া হতো এবং আরও সোর্স বেরিয়ে আসত। সেটা হতে পারে পরিবারের কোন সদস্য বা সরকারের কোন কর্মকর্তা যারা হার্শকে কিছু জানতে দিতে চাইত। চূড়ান্ত কাহিনীটি বের করার জন্য তিনি কখনই তাড়াহুড়ো করতেন না। সেটা করার জন্য সময় পাওয়া যাবে। হার্শের মতে সাংবাদিকতা একটা প্রক্রিয়া, কোন পণ্য তৈরির ব্যাপার নয়। হুমকি প্রতিরোধ করতে হবেÑ এই হলো হার্শের পরামর্শ। সাংবাদিক হওয়ার একটা বাস্তব সমস্যা হলো সর্বদা কোন না কোন ধরনের হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। হত্যা ও মামলা মোকদ্দমার হুমকি তো আছেই। কিন্তু কথা হচ্ছে রাষ্ট্র ও কর্পোরেশনগুলো নিত্যদিনই রিপোর্টারদের পিছনে লাগে। হার্শ তার বইয়ে এ ধরনের অনেক কাহিনীই বলেছেন। যেমন হেনরী কিসিঞ্জারের ওপর একটি রিপোর্ট লেখার পর তার অনুগত সহকারী আলেকজা-ার হেগ হার্শকে ডেকে বলেছিলেন: ‘তুমি তো ইহুদী, তাই না হার্শ?’ অনেক পদস্থ কর্মকর্তা হার্শকে ডেকে এনে তাঁর অস্বস্তি ও ভীতির কারণ ঘটাত। হার্শের সাংবাদিকতার ধারা অনুসরণ করে কোন রিপোর্টারের পক্ষে জীবিকা অর্জন সম্ভব কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। কারণ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাহিনীর পিছনে এ জাতীয় রিপোর্টার দীর্ঘ সময় ধরে ছুটে চলেন। একটা কাহিনীর জন্য এত দীর্ঘ সময় এমন রিপোর্টারের পিছনে পয়সা ব্যয় করতে আমেরিকার পত্রিকাগুলো উৎসাহিত বোধ করে না। দ্বিতীয়ত সরকার ও কর্পোরেশনগুলোকে প্রশ্ন করার অনুমতিও তাদের দিতে হয়। সেটাও এই পত্রিকাগুলোর কাছে বাঞ্ছনীয় নয়। তাই হার্শকে তার গোটা ক্যারিয়ারের জন্য কেউ নিয়োগ দেয়নি। দি নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে তিনি একটা দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারেননি। হার্শ লিখেছেন তিনি সাংবাদিকতার সুবর্র্ণ যুগে কাজ করেছেন। তবে তার নিজের ক্যারিয়ারে ছিল খেয়ালিপনার ছাপ। এই পত্রিকায় ঐ পত্রিকায় আর্টিকেল লিখে কামাই করেছেন। এই প্রকাশনা বা ঐ প্রকাশনায় বই লিখার চুক্তি করেছেন। ফ্রি ল্যান্স সাংবাদিকতা পছন্দ করতেন না হার্শ। কিন্তু তার গোটা ক্যারিয়ারই ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতায় ভরপুর। সূত্র : ফ্রন্টলাইন
×