ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ জয়ের আশা

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ৫ নভেম্বর ২০১৯

সিরিজ জয়ের আশা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দিল্লীতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের পাশাপাশি বাংলাদেশ দলের বড় প্রতিপক্ষ ছিল আশঙ্কাজনক পর্যায়ের বায়ু দূষণ। এমন পরিবেশেও প্রথমবারের মতো ভারতকে সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে ৭ উইকেটে বিধ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ। কিছুদিন আগে খেলোয়াড়দের ধর্মঘটে বাংলাদেশের ক্রিকেট বড় ঝাঁকি খেয়েছে। আরও বড় ধাক্কা ছিল বিশ্বের অন্যতম অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আইসিসির কাছ থেকে ২ বছরের নিষেধাজ্ঞা পাওয়ায় ভারত সফরে আসতে না পারা। নির্ভরযোগ্য ওপেনার তামিম ইকবাল ও কার্যকরী পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও অনুপস্থিত। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে প্রথমবার টি২০ ক্রিকেটে ভারতকে তাদেরই মাটিতে বড় ব্যবধানে হারানোর পর এখন আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ সিরিজ জেতার প্রত্যাশা করছে। তবে রাজকোটে সেই লড়াইটাকে ভ-ুল করে দিতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মহা’। আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আগামী বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোরের মধ্যে ১২০ কিলোমিটার বেগে রাজকোটে আছড়ে পড়তে পারে এ ঘূর্ণিঝড়। তাতে ম্যাচ হওয়া নিয়েই আছে শঙ্কা। কারণ বৃহস্পতিবার রাতে রাজকোটের সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে ৩ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচ। তবে ম্যাচের ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকে দূষণের মাত্রাটা কমতে শুরু করেছিল। ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে টি২০ সিরিজকে নিয়ে বড় কোন প্রত্যাশা ছিল না বাংলাদেশের কারও। কারণ, আগে ৮ ম্যাচ খেলে এই প্রতিপক্ষের সঙ্গে জিততে পারেনি বাংলাদেশ দল। আর এবার তো সাকিব, তামিম ও সাইফউদ্দিনকে ছাড়া একেবারে ছত্রভঙ্গ একটি দল ভারত সফরে গেছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে দিল্লীর আশঙ্কাজনক বায়ু দূষণে ক্রিকেটারদের অনুশীলনটাও মন মতো হয়নি। দেশ থেকেও ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যেতে পারেননি রিয়াদ-মুশফিকরা। কারণ খেলোয়াড় ধর্মঘটের পর সাকিব ইস্যুতে কেউ মনোযোগী হতে পারেননি অনুশীলনে। তার প্রমাণ পাওয়া গেছে জাতীয় দলের নিয়মিতদের নিয়ে গড়া ‘লাল দল’ খুব বাজেভাবে সবুজ দলের কাছে প্রস্তুতি ম্যাচে হেরে গিয়েছিল। রিয়াদ ব্যতীত বলার মতো পারফর্মেন্স করতে পারেননি কেউ। কিন্তু বৈরী পরিবেশে, হাজারো স্বাগতিক দর্শকদের সামনে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। ৮ বারের প্রচেষ্টায় যা হয়নি সেটাই হয়েছে অনিয়মিত অধিনায়ক রিয়াদের নেতৃত্বে ভাঙ্গাচোরা দল নিয়ে মুশফিকের দুর্ধর্ষ ব্যাটিংয়ে। আর এতে করেই বাংলাদেশ দল আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। রবিবার রাতে ম্যাচ খেলার পর সোমবার দুপুরেই রাজকোটে এসে পৌঁছেছেন বিজয়ী রিয়াদ-মুশফিকরা। এখানেই এবার সিরিজের দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচ। দিল্লীর মতো এ ভেন্যুতেও প্রথমবার খেলতে নামবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। হাতছানি দিচ্ছে দারুণ এক ইতিহাস গড়ার সুযোগ। এর আগে ভারতের সঙ্গে ৮ টি২০ খেললেও কখনও দু’দলের মধ্যে হয়নি কোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ ও ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ-ভারত টি২০ ম্যাচ হয়েছে। এই প্রথম দু’দলের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ টি২০ সিরিজ হচ্ছে, আর সেখানেই প্রথম ম্যাচ জিতে বাজিমাত করেছে বাংলাদেশ দল। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এর আগে ৫ বার টি২০ ট্রফি জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এর মধ্যে ৩ বারই ১ ম্যাচের সিরিজ ছিল যার প্রতিপক্ষরা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও জিম্বাবুইয়ে। পূর্ণাঙ্গ সিরিজ বলতে জয় আছে শুধু ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ড সফরে ৩-০ ব্যবধানে জয় এবং গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয়া। এবার বিশ্বের অন্যতম সেরা টি২০ দল ভারতের বিপক্ষে একই সুযোগ। প্রথম ম্যাচ জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় দুই ম্যাচেই সুযোগটা নিজেদের দখলে নিতে পারে বাংলাদেশ। একটি মাত্র ম্যাচ জিতলেই কাক্সিক্ষত সেই সাফল্য আসবে। সেটি হতে পারে রাজকোটেই। প্রথম ম্যাচে একতরফাভাবে যে অনায়াস জয় এসেছে এতে করে সেই আত্মবিশ্বাস এখন পেয়েই গেছেন রিয়াদ-মুশফিকরা। ভারতের বিপক্ষে যে মনস্তাত্ত্বিক বাধায় ওয়ানডে ও টি২০ ফরমেটে বারবার জয় বঞ্চিত হচ্ছিল বাংলাদেশ দল, সেটিও এ জয়ে দূরীভূত হয়েছে। মানসিক বাধা ভেঙ্গে ফেলার পর এখন স্বাভাবিক ছন্দ নিয়েই খেলতে পারবেন মুশফিকরা। কিন্তু রাজকোটে দ্বিতীয় ম্যাচটি হবে তো? দিল্লীর বায়ু দূষণ ভয়ানক হয়ে ওঠার পর মনে হয়েছিল সেখানে ম্যাচ খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়বেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। মুখোশ পরে অনুশীলন করতে হয়েছিল ক্রিকেটারদের, মুখ জ্বালাপোড়াসহ কাশিও হয়েছে। কিন্তু ম্যাচ শুরুর ২/৩ ঘণ্টা আগে সেই দূষণের মাত্রা কমতে শুরু করে এবং ক্রিকেটাররা দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে নির্বিঘœ জয় তুলে নিয়েছেন। এবার রাজকোটে খেলার মঞ্চ ভ-ুল করতে ধেয়ে আসছে ‘মহা’ নামের ঘূর্ণিঝড় যা ম্যাচের দিন বৃহস্পতিবারই আঘাত হানার প্রবল সম্ভাবনা। ইতোমধ্যেই রাজকোটের আশপাশে ঘূর্ণিঝর ‘মহা’ তার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। গত ৩১ অক্টোবর সাগরে সৃষ্ট এ ঘূর্ণিঝড় উপকূলবর্তী এলাকাগুলোয় থাবা বসিয়েছে। তাই পুনেসহ কয়েকটি এলাকায় গত কয়েকদিন বৃষ্টিপাতও হয়েছে। দিল্লীর প্রতিকূলতা জয় করে ফিরলেও এখন রাজকোটের এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত পাশ কাটিয়ে যাওয়া কঠিন। ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে তা আবহাওয়া পূর্বাভাস দেখেই বলা যায়। সেখানকার আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতরের প্রধান জয়ন্ত সরকার সোমবার সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘আগামী বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোরের মধ্যে ১২০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে সাইক্লোন ‘মহা’। এই মুহূর্তে দিউ থেকে ৫৮০ কিলোমিটার ও ভারাভালের উত্তর-পশ্চিম থেকে ৫৫০ কিলোমিটার কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এই সাইক্লোন ভয়ানক আকার ধারণ করবে।’ শেষ পর্যন্ত তা দিক বদলে ফেললে হয়তো সরাসরি আঘাত নাও হানতে পারে, কিন্তু আগামী কয়েকদিন সৌরাষ্ট্র ও দক্ষিণ গুজরাটে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর সেই বৃষ্টিপাত থাকলে ম্যাচ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। বৃহস্পতিবারের ম্যাচটি না হলে, সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে নাগপুরে সিরিজ নির্ধারণ হবে। সিরিজ জিততে হলে বাংলাদেশকে জিততেই হবে আর ভারত জিতে গেলে সমতায় শেষ হবে।
×