ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বার্টির রং ছড়ানোর বছর

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ৫ নভেম্বর ২০১৯

বার্টির রং ছড়ানোর বছর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আরও একটি মৌসুমের সমাপ্তি। ডব্লিউটিএ ফাইনালসের মাধ্যমেই ইতি ঘটল মেয়েদের টেনিসের। এখন সময় পরিসংখ্যান ঘেটে দেখার। কার কতটা ভাল কেটেছে এবারের মৌসুমে? টেনিস বিশ্লেষকরা খুঁজে বের করবেন ২০১৯ সালটা কার জন্য ছিল হতাশার? সাফল্যের বিচারে সন্দেহাতীতভাবে এ মৌসুমে শীর্ষে উঠে আসবেন এ্যাশলে বার্টি। কেননা, গ্র্যান্ডস্লামসহ তার নামের পাশে এবার যোগ হয়েছে চার শিরোপা। তার মধ্যে রয়েছে ডব্লিউটিএ ফাইনালসও। বহুল প্রচলিত প্রবাদ, শেষ ভাল যার সব ভাল তার। এ্যাশলে বার্টির ক্ষেত্রেও এই প্রবাদটা দারুণ কার্যকরী। দারুণভাবে রাঙ্গিয়ে নিলেন মৌসুমের শেষটা। ডব্লিউটিএ ফাইনালসের অভিষেকেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন তিনি। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে রবিবার রীতিমতো উড়িয়েই দেন ইউক্রেনের এলিনা সিতলিনাকে। অস্ট্রেলিয়ান টেনিসের এই প্রতিভাবান খেলোয়াড় ফাইনালে সরাসরি সেটে (৬-৪ এবং ৬-৩) পরাজিত করেন টুর্নামেন্টের অষ্টম বাছাই সিতলিনাকে। পুরস্কার হিসেবে জিতেন ৪.৪ মিলিয়ন ইউএস ডলারের চেক। ১৯৭৬ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ডব্লিউটিএ ফাইনালস জয়ের রেকর্ডটাও এখন নিজের করে নিলেন এ্যাশলে বার্টি। তার আগে এই কীর্তিটা গড়েছিলেন ইভোনে গোলাগং। অনুভূতি কেমন? সিতলিনাকে হারানোর পর এ্যাশলে বার্টি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি অনন্য এক পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এই মুহূর্তটা আমার কাছে অনন্য। এই গ্রহে আমার অবস্থানে নেই আর কেউ! আমার কাছে মনে হয় এটা ভয়ঙ্কর। কিন্তু রোমাঞ্চকর। এই মুহূর্তে যে অনুভূতিটা হচ্ছে তা অর্জনের জন্যই আমি সারাজীবন পরিশ্রম করেছি।’ অথচ ২০১৪ সালে হঠাৎ করেই টেনিস থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন এ্যাশলি বার্টি। ছোটবেলাই যে টেনিসে হয়েছিল তার হাতেখড়ি সেই টেনিস ছেড়েই নতুন করে ক্যারিয়ার গড়েন ক্রিকেটে। কিন্তু দুই বছর ক্রিকেট খেলে আবারও ফিরলেন টেনিসে। পরের সিদ্ধান্তটা যে মোটেও ভুল হয়নি তা আরও আগেই প্রমাণ করেছেন ২৩ বছরের এই অস্ট্রেলিয়ান। বিশেষ করে ফরাসী ওপেনে। সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে চেক প্রজাতন্ত্রের মারকেতা ভন্দ্রওশোভাকে উড়িয়ে দিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম কোন গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জিতেন এ্যাশলে বার্টি। সেই সময়েই তিনি জানিয়েছিলেন টেনিসে এমন সাফল্য আশা করেননি। তবে বলেছিলেন ক্রিকেট ছেড়ে টেনিসে আসাটা জীবনের সবচেয়ে সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। বার্টি বলেছিলেন, ‘ওই সময় আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার মনে হয় এটা সেরা সিদ্ধান্ত। এমনকি সামনে যেসব সিদ্ধান্ত নেব ওইগুলো থেকেও এটা সেরা সিদ্ধান্ত।’ ধীরে ধীরে যেন সেটাই প্রমাণ করে চলেছেন এ্যাশলে বার্টি। চীনের শেনঝেনে ডব্লিউটিএ ফাইনালসের শিরোপা উঁচিয়ে ধরে যে নতুন ইতিহাস গড়েছেন তিনি। গত জুনে প্রথমবারের মতো বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছিলেন এ্যাশলে বার্টি। ৪৩ বছরের ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। সোমবার সর্বশেষ প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়েও শীর্ষে তার নাম। অর্থাৎ সবার উপরে থেকেই ২০১৯ সাল শেষ করছেন এ্যাশলে বার্টি। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এই রেকর্ড এখন শুধুই বার্টির! সামনের সময়টা যে ঘোরের মধ্যে থাকবেন সেটা নিজেই স্বীকার করেছেন ফ্রেঞ্চ ওপেনের চ্যাম্পিয়ন। বার্টির উত্থানটা সত্যিই চমকপ্রদ। পাঁচ বছর বয়সে টেনিসে হাতেখড়ি। জুনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে ২০১১ সালে উইম্বলডনে গার্লস সিঙ্গলস জেতেন তিনি। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরেও উঠে এসেছিলেন সেই সময়। সিনিয়র হিসেবে যদিও তার প্রথম সাফল্য আসে ডাবলসে। কেসি ডেলাকুয়ার সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনটি গ্র্যান্ডস্লামের ডাবলসের রানারআপ হন তিনি। যার মধ্যে অস্ট্রেলীয় ওপেনও ছিল। তখন তার বয়স মাত্র ১৬। এরপর ২০১৪ সালের শেষ দিকে বার্টি ঠিক করেন টেনিস থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি নিয়ে ক্রিকেট খেলবেন। কারণ হিসেবে বার্টি বলেছিলেন, টেনিস খুব ‘এক কেন্দ্রিক’ খেলা। অথচ এখন টেনিসটাই যেন তার ধ্যান-জ্ঞ্যান!
×