ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বহুবিধ সমস্যা সৃষ্টির পাঁয়তারা

রোহিঙ্গাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল তামাশা করে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৫ নভেম্বর ২০১৯

রোহিঙ্গাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল তামাশা করে যাচ্ছে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমারমার থেকে পালিয়ে এসে উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বহুবিধ সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে আন্তর্জাতিক মহল। প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে তামাশা করে যাচ্ছে। সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি এবং বৈঠক শেষে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে দিন তারিখ পাকাপোক্ত করেছিল। সেই মতে দুই সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে গত বছরের ১৫ নবেম্বর গাড়িও পাঠিয়েছিল আশ্রয় ক্যাম্পে। ট্রানজিট ক্যাম্পসহ সরকারের পক্ষে সবকিছু ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও কয়েকটি এনজিও এবং আন্তর্জাতিক মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রথমবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি। এদিকে প্রথম দফায় প্রত্যাবাসন ভেস্তে যাওয়ার পর সরকার কূটনৈতিক আলোচনাসহ ব্যাপক তৎপরতায় রাজি করিয়ে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানায়। সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে এসে আশ্রয় ক্যাম্পে যান। তারা রাখাইন রাজ্যে ফেরত যেতে রোহিঙ্গাদের অনুরোধ করেন। বাংলাদেশ-মিয়ানমার দু’দেশের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আবারও দিন-তারিখ ধার্য করা হয়। চলতি সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রত্যাবাসনের জন্য দ্বিতীয় দফায় উদ্যোগ নেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, সচেতন মহল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকরা ও উৎসুক জনগণ সবাই ওইদিন অপেক্ষায় ছিলেন ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি ফিরে যাচ্ছে মিয়ানমারে। কিন্তু এবারেও গুড়েবালি। আন্তর্জাতিক মহলের মর্জি না থাকায় রোহিঙ্গারা দ্বিতীয় দফায়ও ফিরে যায়নি রাখাইন রাজ্যে। এতদিন কিছু কিছু রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে রাজি বলে প্রচার করা হলেও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী মহলের ইশারা না পাওয়ায় আবারও আটকে গেছে ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ। সূত্র জানায়, সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা নিজেরা ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছিল। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ভাসানচরে নির্মিত স্থাপনা দেখে ও সেখানে রোহিঙ্গাদের চলাচল, শিশুদের পড়ালেখার সুয়োগ-সুবিধা এবং নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠার বিষয়াদি বুঝতে পেরে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছিল রোহিঙ্গারা। কোন ধরনের চাপ প্রয়োগ ছাড়া স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহীদের তালিকা করে সরকার। চলতি মাসে পর্যায়ক্রমে ওইসব রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার কথা। ভাসানচরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্টদের নিরলস প্রচেষ্টায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের জন্য ভাসানচরকে পুরোপুরি প্রস্তুত করেছিল। সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, তালিকাভুক্ত হওয়ার পর তাদের শীতের আগেই ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সম্মতি না দেয়ায় সেই উদ্যোগ থমকে গেছে। সচেতন মহল বলেন, দেশী-বিদেশী এনজিও’র কর্মকর্তাদের আরাম-আয়েশে ব্যাঘাত ঘটছে দেখে তারা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের যেতে ষড়যন্ত্র করছে। যেহেতু কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। পর্যটন নগরী হিসেবে এখানে আরাম-আয়েশে দিনযাপন করা যায়। তারকামানের হোটেল থেকে সকালে বের হলে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে আশ্রয় শিবিরে পৌঁছানো সম্ভব। ইচ্ছে করলে যখন তখন গন্তব্যস্থলে ফিরেও আসা যায়। রোহিঙ্গাদের সেবার নামে বিদেশী ফান্ড এনে তারকামানের ওইসব হোটেলে খরচ ও ভুয়া বিলভাউচার তৈরি করে বিদেশে পাঠাচ্ছে কর্মকর্তারা। ওইসব কর্র্মকর্তা বহু অনৈতিক কাজেও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ভাসানচরে ওইসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে না বলেই বিদেশী এনজিও কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরে রাজি হচ্ছে না। এছাড়াও বিদেশী এনজিও কর্মকর্তারা ভাসানচরে স্থানান্তর হওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে তামাশা বা বহুবিধ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না। উখিয়া টেকনাফে অবস্থিত আশ্রয় ক্যাম্পগুলো অরক্ষিত। উখিয়া টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে যেনতেন কর্মকা- করতে পারে এনজিও কর্মীরা। যেখানে সেখানে নিয়ে যেতে পারে রোহিঙ্গাদের। ভাসানচরে স্থানান্তর হওয়া রোহিঙ্গারা পুরোপুরি ক্যাম্প কেন্দ্রিক হয়ে থাকলে বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী চক্র অনৈতিক সুবিধা বঞ্চিত হয়ে পড়ছে। কোথাও নিয়ে যেতে পারবে না চিহ্নিত রোহিঙ্গাদের। রোহিঙ্গাদের নিয়ে গোপনে বৈঠক থেকেও বঞ্চিত হয়ে পড়বে তারা। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র মতে, রোহিঙ্গাদের ৬৪০ পরিবারের সাড়ে তিন হাজার জন ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য স্বেচ্ছায় নাম লিপিবদ্ধ করেছিল। প্রত্যহ রোহিঙ্গারা টেকনাফের নয়াপাড়া শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জের কাছে এসে ভাসানচরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরপর তাদের ভাসানচরে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে সপ্তাহখানেক আগে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে সম্মতি দেয়নি।
×