ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পায়নে এক লাখ একর জমির ব্যাংক করতে চায় বেজা

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ৫ নভেম্বর ২০১৯

শিল্পায়নে এক লাখ একর জমির ব্যাংক করতে চায় বেজা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারী ৫৯টি এবং ২৯টি প্রাইভেট ইকোনমিক জোনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকারী খাতে বর্তমানে ৬০ হাজার একর জমি প্রস্তুত রয়েছে। এ খাতে মোট ১ লাখ একর জমির ব্যাংক তৈরি করতে চায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। শিল্পায়নের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে এসব জমি। ভবিষ্যতে পরিকল্পিত শিল্পায়ন করা হবে। বিচ্ছিন্নভাবে যেখানে সেখানে শিল্পায়ন থেকে বেরিয়ে আসতে চায় সরকার। এ জন্য ১০০ ইকোনমিক জোন স্থাপনের কাজ বেশ জোরেশোরেই এগিয়ে চলছে। মিরসরাই ও মহেশখালীতে বাস্তবায়নাধীন দুটি ইকোনমিক জোনেই ৫৫ হাজার একর জমি প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বেজা চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোন হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী। চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকু- ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় অবস্থিত এ জোনে জমি রয়েছে ৩০ হাজার একর। সড়ক ও নদীপথে সহজ ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে এ জোনের সঙ্গে। এ জোনের থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেলের দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। সবচেয়ে বড় এ জোনটি অগ্রগতিতেও সবচেয়ে এগিয়ে। এখানে দেশী-বিদেশী অনেক প্রতিষ্ঠান শিল্প স্থাপনে এগিয়ে এসেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। ১৫ বছরের মধ্যে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ও বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চীনা প্রতিষ্ঠান কুনমিং আয়রন এ্যান্ড স্টিল হোল্ডিং কোম্পানি ২.১৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচার এ্যান্ড এক্সপোর্টার এ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। সংগঠনটিকে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে গার্মেন্টস কারখানা স্থাপনের জন্য। অনন্ত গ্রুপ ২৫০ একর জমি বরাদ্দ নিয়েছে ফেবিক্স এ্যান্ড ইয়ার্ন ফ্যাক্টরি স্থাপনের জন্য। মোট ৫৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৬ হাজার ৭৭ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বেজা। আয়তনের দিক থেকে মিরসরাইয়ের পরেই মহেশখালীর অবস্থান। এখানে মোট জমির পরিমাণ রয়েছে ২৫ হাজার একর। এসকে গ্যাসকে (দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান) ৪১০ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। এসকে গ্যাস ২.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে এলপিজি টার্মিনাল ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প স্থাপনের প্রস্তাবনা দিয়েছে। সামুদা পেট্রোকেমিক্যালকে ১ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কোম্পানিটির প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। থাই কোম্পানি প্যাসিফিক গ্যাস বিডি লিমিটেডকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬০ একর জমি। মৌলভীবাজারে এগিয়ে চলছে শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোনের কাজও। ৩৫২ একর জমি নিয়ে গঠিত এ জোনে ৬টি কোম্পানির নামে ২৩১ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যারা এরই মধ্যে শিল্পায়নের কাজ শুরু করেছে। এ ৬টি কোম্পানির প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ১.৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বেজার সঙ্গে পিপিপির আওতায় সিকদার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোন প্রাইভেট লিমিটেড অঞ্চলটির উন্নয়ন করছে। মংলা বন্দরের অদূরে ২০৫ একর জমি নিয়ে গঠিত এ জোনে সড়ক যোগাযোগ, পানি সরবরাহ, বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র ও প্রশাসনিক ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। ৪৪ শতাংশ প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট প্লট পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। এখানে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন ওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদার। দেশের ট্যুরিজমকে প্রমোট করার জন্য কক্সবাজার জেলায় তিনটি ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের কাজ হাতে নিয়েছে। ১ হাজার ৪১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলার সাগর তীরে স্থাপিত হবে পার্কটি। টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদীর মনোরম জালিয়ার দ্বীপে স্থাপন করা হবে নাফ ট্যুরিজম পার্ক। এটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম দ্বীপ নিয়ে পরিকল্পিত ট্যুরিজম পার্ক। মোট জমির পরিমাণ ২৯১ একর। কয়েকটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ দ্বীপে ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সোনাদিয়ায় ইকো-ট্যুরিজম পার্কের মাস্টার প্ল্যান দিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাহিন্দ্রা কনসালটেন্টকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বেজা জানিয়েছে, ২০১০ সালের নবেম্বরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৫ বছরে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং বার্ষিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য ও সেবা উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ চলছে। ২১টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাক সমীক্ষা শেষ, ১২টি অঞ্চলের প্রাক সমীক্ষা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ১৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাথমিক সাইট অ্যাসেসমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। ২৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে পরিবেশ ও সামাজিকগত সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। অন্যদিকে ২০টি বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রি-কোয়ালিফিকেশন লাইসেন্স দিয়েছে, যার মধ্যে ৮টি বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে এরই মধ্যে ১৯টি শিল্প কারখানা স্থাপিত হয়েছে। আর ২০টির কাজ চলছে। এসব অঞ্চলে মোট ২ হাজার ৩২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে এবং ২২ হাজার ২৮০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, অন্যান্য দেশ অনেক আগে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়তে শুরু করেছে। আমরা মূলত ২০১৫ সালে কাজ শুরু করেছি। আমাদের লক্ষ্য ১০০ ইকোনমিক জোন স্থাপন করা। প্রথমে মিরসরাইতে ৫৫০ একর জমি দিয়ে যাত্রা শুরু করি। এখন সেখানে ৩০ হাজার একর জমি কনফার্ম হয়েছে। অনেক শিল্প কারখানা স্থাপনের কাজও চলছে। মহেষখালীতে ২৫ হাজার একর জমি নিশ্চিত করা হয়েছে। বেজা এরই মধ্যে ৬০ হাজার একর জমির ব্যাংক করেছে। আমরা এক লাখ একর জমি কনফার্ম করতে চাই। আমরা এতদিন ইকোনমিক জোন বলতে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার মধ্যে আটকে ছিলাম। ৩৯ বছরে মাত্র ৮টি ছোট ছোট ইপিজেড স্থাপন করেছি। যাতে মোট জমি রয়েছে মাত্র ২ হাজার ২৯৮ একর। এখন জোনগুলোতে অভ্যন্তরীণ ও রফতানিমুখী শিল্প থাকবে। আমরা মিনিটের কম সময়ের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স করে দিচ্ছি। অনেক কাজ এখন সহজ হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন বেজা চেয়ারম্যান। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ১০০ ইকোনমিক জোন স্থাপনের ঘোষণা অনেকে অতিরঞ্জিত মনে করেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে, এ সংখ্যা যথেষ্ট নয়, আরও বাড়ানো উচিত।
×