ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতি প্রমাণ হলে জাবি ভিসি অপসারিত হবেন

প্রকাশিত: ১১:০৭, ৫ নভেম্বর ২০১৯

দুর্নীতি প্রমাণ হলে জাবি ভিসি অপসারিত হবেন

জাবি সংবাদদাতা ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে গত আড়াই মাস ধরে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে এটি প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা ও মাস্টারপ্ল্যান সংশোধনের জন্যে হলেও একপর্যায়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা। তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি উপাচার্য কর্তৃক অগ্রাহ্য হলে গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। উপাচার্য পদত্যাগ না করায় ২ অক্টোবর তারা তার অপসারণের দাবি জানান। চলমান আন্দোলনরে কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ২৪ অক্টোবর থেকে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হয় এবং ২৮ অক্টোবর থেকে পালিত হয় সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট। প্রশাসনিক অবরোধের কারণে কার্র্যত বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম। এর ফলে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারসহ কেউই অফিস করতে পারেননি। অন্যদিকে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের ফলে সকল প্রকার ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানান আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা সকাল থেকে বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং কিছু কিছু ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। ফলে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। জাবির এই অচলাবস্থা এখনও বিদ্যমান। প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে এবং ঢিমেতালে চলছে ক্লাস-পরীক্ষা। জাবিতে চলমান সঙ্কট নিরসনে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। রবিবার মন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক শুরু হয় রাত সাড়ে আটটায় এবং শেষ হয় ১০টা ১৫ মিনিটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন শিক্ষামন্ত্রী। আলোচনায় আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন অভিযোগ জানালে শিক্ষামন্ত্রী তাদের সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন এবং তাদের আশ্বস্ত করেছেন অভিযোগ প্রমাণিত হলে জাবি উপাচার্যকে অপসারণ করা হবে। একইসঙ্গে আন্দোলন স্থগিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি না দেখা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘গতকাল শিক্ষামন্ত্রী তার নিজ বাসভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’- এর ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানান। এ সময় তিনি আমাদের কাছ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক বিষয়গুলো জানতে চান। আমরা বর্তমান উপাচার্যের দুর্নীতি, অনিয়ম, অযোগ্যতা, একগুঁয়েমি ও অগণতান্ত্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর সকল বিষয় তুলে ধরি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়গুলো উত্থাপন করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী আমাদের বলেছেন তিনি নিজের জায়গা থেকে কাজ করবেন পাশাপাশি আমাদেরও ইতিবাচক জায়গা থেকে আন্দোলন প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। কিন্তু দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি ছাড়া শুধু অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করতে পারিনা।’ এদিকে টানা একাদশ দিনের মতো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ ও নবম দিনের মতো সর্বাত্মক ধর্মঘট কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। তবে এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন অবরোধের আওতায় থাকলেও গত রবিবার থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়কেও এই অবরোধের আওতায় আনা হয়। ভিসির বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের অবস্থান এদিকে, উপাচার্য অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে তাদের অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্থাপিত উপাচার্য অপসারণ মঞ্চ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে পৌঁছালে তারা সেখানে অবস্থান নেন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালনকালে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি বলেন, ‘আমাদের সামনে আর কোন পথ খোলা ছিল না। তিনি আন্দোলনকারীদের ওপর একের পর এক আক্রমণ শুরু করেছেন। তিনি কোন রকম প্রমাণ ছাড়াই ৪০-৫০ আন্দোলনকারীর নামে অজ্ঞাতনামা মামলা ঠুকে দিয়েছেন। এর আগেও তিনি প্রায় ৫০ ছাত্রকে বিনা অপরাধে জেলে পাঠিয়েছেন। আমরা এই মামালাবাজ এবং দুর্নীতিবাজ উপাচার্যকে আর চাই না।’ অন্যদিকে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের ফলে সকল প্রকার ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানান আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা সকাল থেকে বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং কিছু কিছু ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। ফলে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের। জাবির এই অচলাবস্থা এখনও বিদ্যমান। প্রশাসনিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে এবং ঢিমেতালে চলছে ক্লাস-পরীক্ষা।
×