ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম যেভাবে আকাশে তুলে দেয়-

প্রকাশিত: ১১:০৬, ৫ নভেম্বর ২০১৯

সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম যেভাবে আকাশে তুলে দেয়-

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আমদানি প্রক্রিয়ায় কয়েক হাত ঘুরে আড়তে পৌঁছার পর তা বিক্রি হয় পাইকারি পর্যায়ে। এরপর পাইকার থেকে চলে যায় খুচরা পর্যায়ে। দেশে ভোগ্যপণ্যসহ আমদানির অধিকাংশ পণ্য এইভাবে বাজারজাত হয়ে থাকে। আর এ কারণে আমদানি পর্যায়ের মূল্যের সঙ্গে শুল্ক এবং পরিবহন খরচ যোগ হওয়ার পর তা এক দফা বৃদ্ধি পায়। এরপর পাইকারদের হাতে গিয়ে তা আরেক দফা বৃদ্ধি পায়। এরপর খুচরা পর্যায়ে বিক্রিকালে আবারও এক দফা মূল্য বৃদ্ধি ঘটে। বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের মধ্যে পেঁয়াজ ব্যাপকভাবে আলোচিত। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশের বাজার একেবারে অস্থিতিশীল হয়ে যায়। স্বাভাবিক পর্যায় থেকে কয়েক গুণ বেড়ে পেঁয়াজের বাজার মূল্য আকাশচুিম্ব হয়ে যায়। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের যোগানের কমতি নেই। আগে ভারত থেকে নিয়মিত আসত। এখন আসছে মিয়ানমার থেকে। এছাড়া মিসর, তুরস্ক এবং চীন থেকে আমদানির পেঁয়াজ রয়েছে পাইপলাইনে। এই পেঁয়াজ নিয়ে নানা ঘটনা, নানা আলোচনা, নানা ফাঁক ফোকর এবং সিন্ডিকেট সদস্যদের কারসাজির বিষয়টি অন্তর্নিহিত রয়েছে। সেই যাই হোক শেষ পর্যায়ে এসে তা ভোক্তাদের কাঁধে বর্তায়। অর্থাৎ ভোক্তাদেরই অগ্নিমাসুল দিতে হতে হয়। স্বাভাবিক সময়ের ২০ থেকে ২৫ টাকার কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বর্তমান সময়ে ১০০ টাকা পেরিয়ে কোথাও কোথাও ১৩০ থেকে ১৫০ টাকাও বিক্রি হয়েছে। বিষয়টি বিস্ময়কর হলেও সত্য। দেশে ভোগ্যপণ্যের একক বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও এই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের আধিপত্য রয়েছে। তবে বড় আধিপত্য বিরাজ করছে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির সঙ্গে জড়িত ১১ জনের একটি সিন্ডিকেট। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের পেঁয়াজ বাংলাদেশী টাকায় কেজিপ্রতি ১৬ টাকায় আমদানিকারকরা ক্রয় করত। ভারতীয় পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ হওয়ার পর মিয়ানমারের পেঁয়াজের আমদানি বেড়ে যায়। ফলে সে দেশে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের মূল্য ১৮ টাকা হয়ে যায়। এই ১৮ টাকার পেঁয়াজ টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে খাতুনগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছাতে ব্যয় হয় সর্বোচ্চ ৪২ টাকা। এই ৪২ টাকার মিয়ানমারের পেঁয়াজ ক্ষেত্রবিশেষে এই চট্টগ্রামেই ১০০ টাকা পর্যন্ত উন্নীত হওয়ার ঘটনা রয়েছে। যদিও বর্তমানে মূল্য হ্রাস পাচ্ছে গত দু’দিন ধরে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। যতই তথ্য মিলছে যে, দেশে বেশ কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপ বিশেষ করে চারটি গ্রুপ ৫০ হাজার টন করে ৪ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করছে তখনই বাজারে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অর্থাৎ বাজার মূল্য আর না বেড়ে রবিবার থেকে কমতে শুরু করেছে। এর মধ্যে বাজারে জেলা প্রশাসনের পক্ষে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পেঁয়াজের আড়তে আড়তে অভিযানও চলছে। রবিবার এবং সোমবার দু’দিনে পেঁয়াজের কয়েক আড়তদারকে টাঙ্গানো মূল্যের সঙ্গে বিক্রয় মূল্য তারতম্য পাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট দোষীদের জরিমানা করেছেন। এদিকে, একথা নিশ্চিত করে বলা যায়, সরকারী পর্যায়ে টিসিবি পেঁয়াজের অস্থিতিশীল বাজার মূল্যে সামান্যতম প্রভাব ফেলতে পারেনি। এদিকে উৎপাদন মৌসুম বাংলাদেশ এবং ভারতে ঘনিয়ে এসেছে। এর পাশাপাশি শর্ত সাপেক্ষে ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে দ্রুততম সময়ে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসার আশু সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতে সঙ্কট ও মূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে সে দেশের সরকার। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, এবার ভারত এবং বাংলাদেশে পেঁয়াজের ফলনও ভাল হওয়ার পথে। আহরণ শুরু হলে তা চলে যাবে রফতানি পর্যায়ে। তবে ভারত সরকার ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ রফতানিতে কতিপয় শর্ত দিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাঙ্গালুরুর গোলাপি পেঁয়াজ রফতানি অনুমতি প্রদান করা হয়েছে এবং প্রতি চালানে সর্বোচ্চ ৯ হাজার টন পর্যন্ত বেঁধে দেয়া হয়েছে। এই পেঁয়াজ আসা শুরু করলে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিতিশীল থাকার অবকাশ থাকবে না। এর উপরে রয়েছে তুরস্ক, মিসর এবং চীনের পেঁয়াজের চালান পৌঁছানোর বিষয়টি। সোমবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের কেজিপ্রতি ৬০ টাকার ওপর বিক্রি না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যেহেতু প্রশাসন তদন্ত করে উদ্ঘাটন করেছে যে, মিয়ানমারের পেঁয়াজ চট্টগ্রামে এসে পৌঁছানো পর্যন্ত খরচ হয় সর্বোচ্চ ৪২ টাকা। সুতরাং এই পেঁয়াজ কোনভাবে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করার অবকাশ থাকতে পারে না। সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পেঁয়াজের বড় চালান দেশে এসে পৌঁছাতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। তবে ইতোমধ্যে পেঁয়াজের মূল্য কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে বলে তিনি জানান। বাজার তথ্যেও জানা গেছে, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গত দু’দিন ধরে পেঁয়াজের মূল্য নিম্নমুখী।
×