ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

’৭২ সালের সংবিধান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধান ॥ স্পীকার

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৫ নভেম্বর ২০১৯

’৭২ সালের সংবিধান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধান ॥ স্পীকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ’৭২-এর সংবিধান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধান উল্লেখ করে স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, একটি শাসনতন্ত্রের জন্য বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম করে গেছেন। এই সময়ে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, বঞ্চনা এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধা-দারিদ্র্র্যমুক্ত দেশ গড়তে জাতিকে এই শ্রেষ্ঠ সংবিধান উপহার দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। যার চার মূলনীতির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়-বিচার ও সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সোমবার সুপ্রীমকোর্ট বার মিলনায়তনে ৪৮তম সংবিধান দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটি ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও ১৯৭২-এর সংবিধান’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে স্পীকার আরও বলেন, ’৭২ সালের ৪ নবেম্বর শাসনতন্ত্রে অনুমোদন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাও আলোচনা গবেষণার বিষয়। যে দর্শনের ভিত্তিতে তিনি এই ভাষণ প্রদান করেছিলেন জাতির ইতিহাসে তা গৌরবোজ্জ্বল। তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশে সংবিধান রয়েছে, যা অনুসরণ করে তারা দেশ পরিচালনা করে থাকে। দেশ পরিচালনার জন্য এই সংবিধানই প্রধান শাসনতন্ত্র। রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতি এর উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়ে থাকে। অন্য দেশে সংবিধানের চেয়ে পৃথক এ কারণে আমাদের সংবিধান স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের নীতি আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতিফলন রয়েছে। বাইরে থেকে এসে কেউ এটা আমাদের দেয়নি। সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রণীত এই সংবিধানে কোন রাজতন্ত্রের সংবিধান নয়। এক ব্যক্তির শাসন নয়। এটা সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান। সেখানে রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ইচ্ছার প্রতিপালনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। জনগণের ভোটের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থা নির্ধারিত হবে। দেশ স্বাধীনের পর অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে জাতি এই সংবিধান উপহার পেয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধানে চার মূলনীতির মাধ্যমে নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনার বিষয়টির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। চার মূলনীতিতে যে চেতনার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিক ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে, সেই চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে সংবিধানে সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়-বিচার পাওয়ার অধিকার এই নীতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে গণতন্ত্র একটা অপরিহার্য বিষয়। স্পীকার চার মূলনীতির বিষয়ে আরও উল্লেখ করেন, অসাম্প্রদায়িক দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সংবিধান অনুমোদন উপলক্ষে দেয়া তাঁর ভাষণে এই বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। এই দেশে সবাই স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করতে পারবে। এতে কেউ বাধা দিতে পারবে না। শুধু সংবিধান প্রণয়ন করেই তিনি বসে থাকেননি। সংবিধানকে অর্থবহ করতে এই মূলনীতির ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করতে তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মকেই নানা নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কিন্তু এই সংবিধানের সুফল কতটা মানুষের কাছে পৌঁছেছে তা আজ বিচার্য বিষয়। স্বাধীনতার সুফল তিনি দেখে যেতে না পারলেও তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এই সংবিধানের আলোকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত দেশ গড়তে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে এখন দেশ এগিয়ে চলেছে। তাঁর নেতৃত্বে দেশে দারিদ্র্য ৪০ ভাগ থেকে নেমে ২১ ভাগে এসেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর মাধ্যমে, শেখ হাসিনা দেশের সাধারণ মানুষের জীবন মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে দেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। ’৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। আর এর ফলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত অসাম্প্রদায়িক দেশ। এই চেতনা নস্যাত করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। এটা ভেদ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বাঙালীর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রের দেশ স্বাধীনের আগ থেকেই শুরু হয়েছে। ’৭২ সালের সংবিধান শেষ করে মৌলবাদী চেতনায় দেশ গড়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু বাঙালী এর বিরুদ্ধে বারবারই রুখে দাঁড়িয়েছেন। লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিছক একটি ভূখ- লাভ বা পতাকা বদলের জন্য হয়নি। নয় মাসব্যাপী এই যুদ্ধ ছিল প্রকৃত অর্থেই মুক্তিযুদ্ধ। দেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তাদের সার্বিক মুক্তির আশায়। জনগণের এই আকাক্সক্ষা মূর্ত হয়েছিল ’৭২-এর সংবিধানে। তিনি বলেন, ’৭২-এর সংবিধান কার্যকর থাকলে দেশে আজ ধর্মের নামে এত নির্যাতন, হানাহানি, সন্ত্রাস, বোমাবাজি ও রক্তপাত হতো না। অনুষ্ঠানে বিচারপতি শামসুল হুদার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তৃতা করেন সুপ্রীমকোর্ট বারের সভাপতি এ এম আািমন উদ্দিন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটির সভাপতি খোন্দকার আব্দুল মান্নান, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট গাজী শাহ আলম প্রমুখ।
×