ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আঁধার ঘরের মানিক অদম্য সাফিউল

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ৫ নভেম্বর ২০১৯

আঁধার ঘরের মানিক অদম্য সাফিউল

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ শতকষ্ট আর দারিদ্র্যকে পেছনে ফেলে অদম্য মেধাবী সাফিউল এবার মেধা তালিকায় সুযোগ পেয়েছে মেডিক্যাল কলেজে। এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সে মেধা তালিকায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পেয়েছে । স্কুল-কলেজে পড়া অবস্থায় ছুটির ফাঁকে হোটেলের কাজ করেও পড়ালেখা চালিয়ে সব দারিদ্র্য জয় করা এ ছাত্রের পুরো নাম সাফিউল ইসলাম। তার ইচ্ছে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। তবে আর্থিক দৈন্যে তার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে সাফিউল। সাফিউলের বাবা থেকেও নেই। বাবা রহিদুল ইসলাম স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে অন্যের সঙ্গে সংসার পেতেছেন। খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেন না। মায়ের কাছেই রাজশাহী শহরের আমবাগান এলাকায় একটি টিনের ঘরে বসবাস করে সাফিউল। মা বিভিন্ন ছাত্রমেসে ও অন্যের বাসা-বাড়িতে কাজ করে খেয়ে না খেয়ে ছেলে সাফিউল আর মেয়ে তাসলিমাকে পড়ালিখা শেখাচ্ছেন। তাসলিমাও মেধাবী। সে এখন নগরীর উপশহর হাউজিং এস্টেট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। সাফিউলদের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার নিভৃত গ্রাম মশিদপুরে। ছোট থেকেই মেধাবী সাফিউল প্রাথমিকে বৃত্তি পাওয়ার পর রাজশাহী নগরীতে মায়ের সঙ্গে এসে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় মসজিদ মিশন একাডেমিতে। সেখান থেকে অস্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পায় সে। এরপর এসএসসিতে একই স্কুল থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং নগরীর নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। সাফিউল এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তবে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পাওয়ায় সে এখন মেডিক্যাল কলেজে পড়ে ভাল চিকিৎসক হতে আগ্রহী। তবে আর্থিক দৈন্যতায় তার ভর্তি হওয়া হবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে সাফিউল ও তার মা ফাতেমা বিবি। সোমবার কথা হয় অদম্য সাফিউল ও তার মায়ের সঙ্গে। সে জানায়, মায়ের আগ্রহ ও গ্রামে প্রতিষ্ঠিত মশিদপুর শিক্ষা উন্নয়ন সমিতির আর্থিক সহায়তা ছাড়াও নিজে হোটেল বয়ের কাজ করে পড়ালেখা চালিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে সে। ঢাকায় ভর্তি হয়ে কোথায় থাকবে, কোথায় খাবে এ নিয়ে এখন সে চিন্তিত। সে বলে, মশিদপুর শিক্ষা উন্নয়ন সমিতির সহযোগিতা ছাড়া কোনভাবেই এ পর্যন্ত আসা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এ জন্য সে ওই সমিতির কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে। সাফিউল বলেন, আগামী ১৬ থেকে ২৮ নবেম্বরের মধ্যে ভর্তির তারিখ রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ভর্তি হতে হবে। তার মা ছেলের আগামী ভবিষ্যত গড়তে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
×