ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফসলি জমি থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন

কসবায় আতঙ্কের নাম অবৈধ হ্যান্ড ড্রেজার

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ৫ নভেম্বর ২০১৯

কসবায় আতঙ্কের নাম অবৈধ হ্যান্ড ড্রেজার

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ দেখলে মনে হবে জলাশয় বা নদী। গভীরতারও মাপকাঠি নেই। শুধু পানি আর পানি। প্রকৃত অর্থে জলাশয় বা নদী নয়। কৃষকের ফসলি জমি কেটে এমন জলাশয় বানানো হয়েছে। তাও আবার জোরজবরদস্তি করে। জমির কাছে ঘেঁষতেই পারছে না কৃষক। রয়েছে প্রভাবশালীদের অত্যাচার। জোর করেই তাদের জমি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমি ও নদীতে নিষিদ্ধ হ্যান্ড ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন চলছে। উপজেলায় অন্তত ১শ’ ৪৩টি হ্যান্ড ড্রেজার রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সমানে তোলা হচ্ছে বালি। অবৈধভাবে ফসলি জমিতে ড্রেজার বসিয়ে নির্বিচারে জমির তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করায় ক্ষতির সম্মুখীন কৃষক। নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করায় আশপাশের জমি, বাড়িঘর দেবে যাচ্ছে। হুমকির মুখে সড়ক, মহাসড়ক ও বিদ্যুত ব্যবস্থা। এতে প্রাকৃতিক ও জলজ পরিবেশের ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় এ কাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চলছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, কসবার বিভিন্ন স্থানে গত ৫ বছর ধরে অবিরাম চলছে ড্রেজার দিয়ে জমির নিচ থেকে বালু উত্তোলন। কৃষি জমি-নদী ও জলাশয়ে হ্যান্ড ড্রেজার বসিয়ে প্রতিদিন কয়েক ঘনফুট বালু উত্তোলন চলছে। বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব বালি বিক্রি করা হচ্ছে। অবাধে বালি তোলায় হুমকির মুখে বসতবাড়ি ও সড়ক-মহাসড়ক এবং ৩৩ কেভি বৈদ্যুতিক খুঁটি। ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে। বাড়িঘর ধসে যাওয়ার পাশাপাশি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্তের কথা জানান স্থানীয়রা। প্রতিদিন দেড় শ’ ড্রেজার থেকে কয়েক লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে মহলটি। বিশেষ করে কসবার তিনলাখ পীর এলাকায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে চলছে বিপজ্জনকভাবে ফসলি জমি থেকে বালি উত্তোলন। স্থানীয়দের আশঙ্কা ভূ-কম্পন হলে এলাকা ধসে পড়বে। কসবা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সোলাইমান হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বার বার এ বিষয়টি তোলা হলেও কেউ কর্ণপাত করছে না। মাটির তলদেশ থেকে নির্বিচারে বালি উত্তোলন করায় প্রকৃতি ও জলজ পরিবেশ হুমকির কথা জানান তিনি। তিনলাখ পীর এলাকার কৃষকদের দাবি শতাধিক কৃষক ভূমিহীন হওয়া ও বসতভিটা, বিল্ডিং ফাটল দেখা দিয়ে বসবাসের মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এমনই অভিযোগ করেছেন কসবার সৈয়দাবাদ গ্রামের বাছির মিয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কাছে এক আবেদনে তিনি জানান, খাস জমি এবং মালিকানাধীন আবাদি জমি থেকে জোর করে মাটি ও বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অভিযোগ থেকে জানা যায়, কসবা পৌর মেয়র মোঃ এমরান উদ্দিন জুয়েল, কসবা উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব শরিফুল হক স্বপন, তালতলা ৩নং ওয়ার্ড কমিশনার মোঃ সজীব, ছাত্রদল বিনাউটি শাখার সভাপতি মোঃ সুমন চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে একাজ করছে। আওয়ামী রাজনীতির ছত্রছায়ায় ভূমিদস্যুরা তিনলাখ পীর এলাকায় রাস্তার পূর্বপাশে খাস ভূমি ২৫ বিঘা এবং মালিকানাধীন ৪০ কানি ফসলি জমির নিচে গভীর ডেজিং করে বালি উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অন্তত ৩শ’ ফুট গভীর করা হয়েছে ফসিল জমি। প্রশাসনের নাকের ডগায় বালি ও মাটি উত্তোলন করে তমা কোম্পানির নিকট (রেলওয়ের কাজে ব্যবহৃত) বালি বিক্রি করে শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করছে। খাস জমি থেকে গভীর করে বালি উত্তোলন করায় ৩০ বিঘা জমির সম্পূর্ণ অংশ ভেঙ্গে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় নিরূপায় ভূমিহীন কৃষকরা ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের আবেদন করেছে। অভিযুক্তদের সঙ্গে দেখা করে এসব বিষয় অবহিত করলে ও হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে বাড়িঘর ছাড়ার হুমকি দেয়। রাজশাহী স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, চারঘাটে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। রবিবার ৫ শতাধিক এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম। এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পুতুল এন্টারপ্রাইজকে রাজশাহী জেলা প্রশাসন চারঘাট মৌজায় বালু উত্তোলনের জন্য এক বছরের ইজারা প্রদান করেন। কিন্তু পুতুল এন্টারপ্রাইজের লোকজন নিয়মনীতি উপেক্ষা করে উপজেলার পিরোজপুর, গোপালপুর ও চন্দনশহর মৌজায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। গত কয়েকদিন ধরে পিরোজপুর, গোপালপুর ও চন্দনশহর গ্রামবাসী অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করেন। এতে গ্রামবাসীর সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এছাড়া অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে গ্রামবাসী বাধা দেয়ায় উল্টো বালু উত্তোলনকারীরা গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। এসব ঘটনায় রবিবার দুপুরে দিকে শত শত গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও চারঘাট থানাসহ বিভিন্ন দফতরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেন।
×