ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ॥ তরুণ প্রজন্মের প্রেরণা

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ৫ নভেম্বর ২০১৯

অভিমত ॥ তরুণ প্রজন্মের প্রেরণা

ফরাসী ভাষা তাত্ত্বিক ফার্দিনান্দ দ্য সসুর ‘চিহ্নতত্ত্বের’ (অর্থ উৎপাদন) দুই উপাদান দ্যোতক এবং দ্যোতিত। এই দ্যোতক দ্বারা বোঝায় কোন কিছুর নাম এবং দ্যোতিত দ্বারা বোঝায় ওই ব্যক্তি-বস্তু বা উপাদানের অন্তর্নিহিত অর্থ। সসুর সূত্রমতে ‘শেখ হাসিনা’ নামটি একটি দ্যোতক। যার দ্যোতিত রূপ অর্থাৎ অন্তর্নিহিত অর্থ বিশ্বের গণমানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন। যদিও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই দ্যোতিত রূপ প্রতিষ্ঠার পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না এবং রূঢ় বাস্তবতা হলো তা এখনও নেই। কারণ বাঙালীর মনজাগতিক মানচিত্র বড়ই বিচিত্র এবং পিচ্ছিল। যার প্রাসঙ্গিক উদাহরণ সম্প্রতি চলমান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ। জনগণ শেখ হাসিনার এই অভিযানকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। যার বহির্প্রকাশ ঘটেছে বিভিন্ন রিসার্চসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। যেখানে এখনকার প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন ‘একক’ শেখ হাসিনাই পারবেন দুর্নীতিকে মোকাবেলা করতে এবং একে হটিয়ে দিতে। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনার আরেক মহাযুদ্ধ বা চ্যালেঞ্জ মাদক সমস্যা। যা নির্মূল করতেও তিনি লড়ে চলেছেন একক আত্মশক্তিতে। পত্রপত্রিকার হিসাব মতে, শুধু ধূমপানকে বাদ দিয়েই দেশে ইয়াবা, ফেনসিডিল এবং হেরোইনের মতো ভয়াবহ মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লাখ ! বিষয়টি আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার। কেননা যে তরুণ প্রজন্মের জন্য দেশকে বাসযোগ্য করার তাগিদে এত এত সংগ্রাম সেই তারাই যখন ‘জীবন-স্বপ্নে’ নিম্নমুখী আচরণ করেন তখন অভিভাবকত্বের আসনে থাকা মানুষটি চিন্তিত হয়ে উঠবেন এটাই স্বাভাবিক বাস্তবতা। তবে এটা যে সৃষ্ট সঙ্কট সেটাও বোধগম্য। কারণ প্রথমত এর সহজলভ্যতা, দ্বিতীয়ত শুধুমাত্র এই দেশের তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করেই বিশেষ বিশেষ কিছু মাদক বানানো, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণ। আর সহজ ভাষায় বললে, এই মাদক সয়লাবের নেপথ্য কারণ বাঙালীর সামাজিক সম্পর্কগুলো নষ্ট করা এবং শেখ হাসিনার শক্তি তরুণ প্রজন্মকে ট্র্যাকচ্যুত করা। আর স্পষ্ট করে বললে দাঁড়ায় এই মাদক সমস্যা ছড়ানোর উদ্দেশ্য হলো শেখ হাসিনা সরকারকে কাউন্টার দেয়ার একটা কৌশল। কারণ সকল পরাজিত শক্তি এবং অপশক্তি জানে বাংলার ‘তরুণ-যুবা’ সম্প্রদায়ের পূর্ণ ভরসা এখন ‘শেখ হাসিনায়’ এবং তিনি তাঁর প্রমাণও দিচ্ছেন যথাযথ। তাঁর নেয়া উদ্যোগেই আজ বিসিএস, ব্যাংকসহ সব মর্যাদাপূর্ণ ‘সরকারী’ কর্মক্ষেত্র যোগ্যতার ভিত্তিতে অর্জন করা সম্ভব। কাজেই এই তরুণ শক্তিকে ট্র্যাকচ্যুত করতে না পারলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এবং বাঙালী এগিয়ে যাবে এটা সুনিশ্চিত। তা ছাড়া আজ প্রমাণ হয়েছে ‘বিএনপি-জামায়াত-শিবির’ জোট শাসনের মতো এখন আর কোথাও কোন স্বেচ্ছাচার, অনিময়, দুর্নীতি কিংবা অনিশ্চয়তায় সুযোগ নেই। পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগ এবং উদ্যোগতাদেরও দেয়া হচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক নান্দনিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং সুযোগ। কাজেই তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে যাবে এটাই এখনকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তারা কোন অংশে বা সেক্টরে হতাশ হবেন এমনটা ভাববার সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান সংস্থাগুলোর মতে, শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশ যে গতিতে চলছে তাতে আগামী পাঁচ বছরের ভেতর বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হবে দ্বিগুণ। আর এসবের সবটাই অর্থাৎ ষোলোকলা পূর্ণ হবে যখন দেশের তরুণ প্রজন্ম সঠিক পথে থাকবে। আর সেই প্রত্যয়েই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আরেক প্রত্যয় মাদক নির্মূল। ‘টেকসই উন্নয়ন এবং ভিশন’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব রাষ্ট্রগুলোর মতো একে নির্মূলে অভিযান পরিচালনা করছে। যদিও সরকারের এই উদ্যোগকে টেকনিক্যালি আবার কোথাও কোথাও প্রায় খোলাখুলি বিএনপি-জামায়াত বিরোধিতা করেছে। বিএনপির রিজভি তো বলেই ফেলেছেন এই অভিযানে নাকি শুধু বিএনপি-জামায়াত-শিবির নেতাদের ধরা হচ্ছে। তার এ ধরনের চিন্তা অপ্রাসঙ্গিক হলেও কেন প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাদকের অভিযানে বিএনপি-জামায়াত-শিবির ধরা পড়ছেন এর পক্ষে প্রাসঙ্গিক এবং যুক্তিযুক্ত দলিল আছে। দুর্নীতি এবং যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। ফলাফল বাংলা এবং বাঙালী তার এই অবৈধ ছড়ি ঘোরানোকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। জিয়া বুঝতে পেরেছিলেন এই দেশের সামাজিক সম্পর্ক এবং ছাত্র সংগঠনগুলো স্বাভাবিক থাকলে ক্ষমতার মসনদ তার দখলে থাকবে না। যার ফলাফল সামাজিক সম্পর্কগুলোকে অস্থির এবং নাজুক করার তাগিদে জিয়া সূচনা করেন হাউজি খেলা, লাকি খানের মতো উদ্দাম নৃত্য শুরু করান এবং তরুণ-যুবাদের মাঝে ঘটান অবাধ নেশার বিস্তরণ। নির্মাণ করেন নৈতিকতাহীন কালো চশমা পরিহিত হোন্ডা-গুন্ডার আসক্ত শ্রেণী। যাদের দিয়ে যুদ্ধাপরাধীসহ সবক সন্ত্রাসীকে সেফ প্যাসেজ নির্মাণ করেন। অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত রচনা করেন নিত্য নতুন অবৈধ পথ। বৈধতা দেন সকল অবৈধতাকে। তা ছাড়া ইদানীং জনমনে আরেকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। দেশের মাদক সমস্যার মূল কারিগর এখনও বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের লোকজনই কিনা? কারণ এখনও মাদকসহ যাকেই ধরা হচ্ছে তিনি হয় সরাসরি বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী নয়ত তাদেরই লোক অন্য দলে অনুপ্রবেশ করেছেন বা কৌশলে আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ ইতিহাস বলে স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতার ধারাবাহিক বাহক জিয়াউর রহমান তার নড়বড়ে ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠা করতে একশ্রেণীর ছাত্র তৈরি করেছিলেন। পাশাপাশি ‘বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিমপ্রধান শান্তিপ্রিয় দেশে ‘মদের লাইসেন্স দিয়েছেন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন তরুণরা যেন স্বাভাবিক চিন্তা করতে না পারে। যা ছিল তার ক্ষমতা হরণের কৌশল। অর্থাৎ অতীতের সেই আবর্জনার স্তূপ এখনও শেখ হাসিনার চ্যালেঞ্জ। কারণ প্রবাদ আছে ‘সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে।’ আর জিয়াউর রহমান ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে সামাজিক সম্পর্কগুলোতে যে ক্ষমতার লোভ এবং অনৈতিকতার বিষ ঢুকিয়ে গেছেন তা বিশুদ্ধ সম্পর্কগুলোকেও প্রভাবিত করেছে ক্ষেত্র বিশেষে। কাজেই অতীত সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যত বিনির্মাণের বর্তমান এখন শেখ হাসিনার। যা চ্যালেঞ্জ এবং চ্যালেঞ্জের। তবে এই যুদ্ধ জয়ে শেখ হাসিনার সম্বল একক ‘শেখ হাসিনা’ই। যা অনেকটা ‘বেহুলার ভাসান যাত্রার মতোই।’ অর্থাৎ সাপে কাটা লক্ষ্মীন্দরকে নিয়ে বেহুলা যেমন একা একাই ভেলায় ভেসেছিলেন এবং সময়টাকে জয় করেছিলেন। শেখ হাসিনাকেও সেটা একক নেতৃত্বগুণেই করতে হবে। আর এই যাত্রায় তার লক্ষ্মীন্দর বা আপনজন হলো তার দেশের ‘আক্রান্ত জনপদ’। যাদের মুক্ত করতে হবে দুর্নীতি, মাদকসহ সকল উদ্ভূত সমস্যা থেকে। তবে এই সকল যুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’কে আরেকটি বিষয় জোরদার করতে হবে। আর তা হলো তাঁর এবং তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা। কারণ এই তল্লাটের ইতিহাস বিশ্বাস এবং বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। কাজেই বিশ্বাসঘাতকতার সম্ভাবনাকে বিশ্বাস করেই তিনি এগিয়ে নেবেন এই দুঃখিনী জমিনকে, এটাই প্রত্যাশা। লেখক : ছাত্রনেতা [email protected]
×