ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পল্লী ঋণে সমস্যা

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ৫ নভেম্বর ২০১৯

পল্লী ঋণে সমস্যা

গ্রামনির্ভর সমাজ কাঠামোর কৃষি অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা গ্রামের কৃষককুল দেশের মোট জনসংখ্যার সিংহভাগ। দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলের কৃষি-শ্রমিকদের জীবনমান বাড়ানো জাতীয় সমৃদ্ধির অন্যতম সূচক। কৃষিজীবী সাধারণ মানুষ তার উৎপাদনের পুরো খরচ চালাতে সেভাবে সক্ষমও নয়। সঙ্গত কারণেই কৃষি খাতে প্রান্তিক শ্রমজীবীদের আর্থিক দুরবস্থায় ঋণদাতা সংস্থাগুলোর দায়-দায়িত্ব অপরিসীম। আর সেখানেই বঞ্চনার শিকার হয় অসহায়, দরিদ্র কৃষক। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রামের ব্যাংকগুলো হরেক রকম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে। ৯% সুদে ঋণ দানে সক্ষম ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে গ্রামীণ কৃষকরা সেভাবে অর্থ সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে তাদের দ্বারস্থ হতে হয় এনজিওসহ দাতা সংস্থাগুলোর কাছে। সেখানে চড়া সুদের পরিমাণ প্রায় ২৪%। তার পরেও তারা বাধ্য হয় এসব সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিতে। অথচ শহরে বিনিয়োগকারী বিভিন্ন উদ্যোক্তা সরকারী ব্যাংকের কাছে যে পরিমাণ ঋণ নেয়, সেটা তারা সময়মতো শোধও করে না। কিন্তু গ্রামের কৃষকরা ঋণ নিলেও তা যথাসময়ের মধ্যেই দিয়ে দিতে সচেষ্ট থাকে। যে কারণে শহরের তুলনায় গ্রামে ঋণ খেলাপীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। ব্যাংক বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা দেশের শহরগুলোর সঙ্গে গ্রামের বৈষম্যকরণের একটি চিত্র। এমন তারতম্য অতিক্রম করতে ব্যর্থ হলে গ্রামের সঙ্গে শহরের ব্যবধান বাড়তেই থাকবে। বর্তমান সরকার আমার শহর, আমার গ্রাম কর্মসূচীতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অপেক্ষাকৃত সচ্ছল শহুরে মানুষদের প্রভেদ ঘোচাতে হরেক রকম প্রকল্প হাতে নিয়ে সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর হাতের নাগালে অর্থ থেকে আরম্ভ তথ্য প্রযুক্তিকেও পৌঁছে দিতে নানা কর্ম প্রকল্প গ্রহণ করেই যাচ্ছে। এমনিতেই কৃষকরা তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে উৎপাদিত শস্যের ন্যায্য দাম থেকে প্রায়শ বঞ্চিত হয়। এমন বঞ্চনার খবর গণমাধ্যমে আসতেও দেরি হয় না। তার ওপর সামান্য কারণে হতদরিদ্র কৃষিজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা করার চিত্রও খুব কম নয়। অথচ এসব কৃষিজীবীই দেশের অর্থনীতির মূল নিয়ামক শক্তি। তাদের দুরবস্থা ঘোচাতে না পারলে কৃষি অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সে অবস্থায় তাদের স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানে কোন ধরনের গাফিলতি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য হতে পারে নেতিবাচক। সুতরাং গ্রামের ব্যাংকগুলো তাদের বিধি মোতাবেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রাপ্য ঋণ প্রদানে যাতে কোন রকম অসুবিধা তৈরি করতে না পারে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সর্বক্ষণিক নজরদারি অত্যন্ত জরুরী। তাদের কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য যেমন আবশ্যক, পাশাপাশি উৎপাদনের ন্যায্য মূল প্রাপ্তির সুরাহাও তেমনই প্রাসঙ্গিক। আর এরই সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ঋণ দেয়া। তেমন ব্যবস্থাকে জোরদার, শক্তিশালী এবং সর্বজনীন করতে যা যা করার, সবই দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর করা বাঞ্ছনীয়।
×