ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুশফিকের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে সহজেই হারাল টাইগাররা;###;রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন

প্রথম টি২০ জয় ॥ ভারতের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ৪ নভেম্বর ২০১৯

প্রথম টি২০ জয় ॥ ভারতের বিরুদ্ধে

মিথুন আশরাফ ॥ অবশেষে ভারতকে টি২০তে হারাল বাংলাদেশ। যখন হারাল, তখন এমন জয়ই মিলল, ভারতকে উড়িয়ে দিল। মুশফিকুর রহিমের (৬০*) অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটের বড় জয়ই পায় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেল বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। দিল্লীর অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে খুব কাজে লাগাতে পারেনি। শিখর ধাওয়ানের ৪১, ঋষভ পন্থের ২৭, শেষমুহূর্তে ক্রুনাল পান্ডিয়ার অপরাজিত ১৫ ও ওয়াশিংটন সুন্দরের অপরাজিত ১৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৪৮ রান করে ভারত। পেসার শফিউল ইসলাম ও লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব দুর্দান্ত বোলিং করেন। ২ উইকেট করে নেয়া এ দুই বোলারের সঙ্গে নৈপুণ্যেই ভারত বড় স্কোর গড়তে পারেনি। তবে আফিফ হোসেন ধ্রুবও (৩-০-১১-১) ভারতের রানের চাকা দুর্বল করে রাখেন। এই রান করতে গিয়ে মুশফিকুর রহিমের ৪৩ বলে অপরাজিত ৬০, সৌম্য সরকারের ৩৫ বলে করা ৩৯ ও নাঈম শেখের ২৬ রানের সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯.৩ ওভারে ১৫৪ রান করে জিতে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন নেই। তিন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার ছাড়াও জিতল বাংলাদেশ। ভারতের বিরুদ্ধে টানা ৮টি টি২০ ম্যাচে হারের পর নবম ম্যাচে এসে জিতল বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই লিটন কুমার দাস (৭) সহজ ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান। টার্গেট এত কম রান। কোথায় দলকে জেতানোর জন্য খেলে যাবেন, তা না করে দ্রুতই আউট হয়ে যান। তবে অভিষিক্ত নাঈম শেখ ঠিকই দ্যুতি ছড়িয়ে যান। পারিবারিক কারনে তামিম ইকবাল নেই। তার অভাব যেন পুরন করার ইঙ্গিত দেন। নাঈমের ধুমধারাক্কা ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারেই ৪৫ রান করে ফেলে বাংলাদেশ। তবে আর ৯ রান যোগ হতেই নাঈম (২৬) আউট হয়ে যান। যুজবেন্দ্র চাহাল বোলিং করতে এসেই নাঈমের উপর চাপ তৈরি করেন। একের পর এক ডট দিতে থাকেন। তাতে নাঈম শট করতে গিয়ে মিস হিটে ক্যাচ আউট হয়ে যান। বাংলাদেশও চাপে পড়ে যায়। ১০ ওভারে গিয়ে ৬২ রান করে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার আর মুশফিকুর রহিম মিলে এবার যে উইকেট আকড়ে থাকেন, দুইজন মিলেই ম্যাচ জেতানোর আশা জাগান। দুইজনই চমৎকার ব্যাটিং করতে থাকেন। তৃতীয় উইকেটে দুইজন মিলে ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। জয়ের আশা ভালভাবেই জাগে। দুইজনই সমানতালে রানও করতে থাকেন। যখন জিততে ১৯ বলে দরকার ৩৫ রান, ঠিক এমন সময়ই খলিল আহমেদের স্লোয়ার বল বুঝতে না পেরে বোল্ড করে হয়ে যান সৌম্য (৩৯)। দুইজনের ৬০ রানের জুটি ভেঙ্গে যায়। দলের ১১৪ রানে গিয়ে সৌম্যের আউটের পরই ধুকধুকানি শুরু হয়ে যায়। মুশফিকের সঙ্গে এবার যোগ হন মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদ। সবার মনে ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ব্যাঙ্গালুরুতে শেষ বলে গিয়ে ১ রানে হারা ম্যাচের স্মৃতিও জেগে ওঠে। তখনও নিশ্চিত জেতা ম্যাচের শেষদিকে ছিলেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। জয়ের কাছেও নিয়ে যান তারা। আবার ডুবিয়েও দেন। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ক্রিকেটাররা যে কোন মূল্যে জেতার জেদ নিয়ে নামেন। এমন ভাবনা আসতেই চাহালের বলে ৩৮ রানে থাকা মুশফিক ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচেন। ম্যাচের মোড় এখানেই ঘুরে যায়। বাংলাদেশের দিকে জয়ের পাল্লা ভারি হয়ে যায়। ১৮তম ওভারে গিয়ে ১৩ রান হতেই জয়ের আশা বেড়ে যায়। ১২ বলে জিততে তখন ২২ রান লাগে। খলিলের করা ১৯তম ওভারে টানা চার বলে চার বাউন্ডারি হাঁকানোর সঙ্গে হাফসেঞ্চুরিও পুরন করেন মুশফিক। ১৯তম ওভারে ১৮ রান আসে। জিততে তখন ৬ বলে ৪ রান লাগে। মাহমুদুল্লাহ ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে জেতান। ৩ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। মুশফিক ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন। মাহমুদুল্লাহ অপরাজিত ১৫ রান করেন। রাত সাড়ে সাতটায় খেলা শুরু হয়। বায়ু দূষণ এমন চরমে পৌঁছে, খেলা হওয়া নিয়েই শঙ্কা জাগে। শেষপর্যন্ত খেলা শুরু হওয়ার আগেই সব ঠিক হয়ে যায়। ফ্লাডলাইটের আলোতে খেলা ভালভাবেই হয়। শিশিরে বল কব্জায় নিতে সমস্যা। পেসাররাই বেশি সুবিধা করতে পারে। আর তাই তিন পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে শফিউল ইসলাম ও আল আমিন হোসেনকে নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। আর এ বছর প্রিমিয়ার লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করা টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান নাঈম শেখের অভিষেক করানো হয়। পেসাররা শুরুতে ঝলক দেখালেও শেষটায় গিয়ে টালমাটাল হয়ে যায়। আর নাঈম শেখ অসাধারণ ব্যাটিং করে দেখান। প্রথম ম্যাচেই পরিণত ব্যাটিং করেন। ভারতের ব্যাটিংয়ের শুরুতেই উত্তেজনা তৈরি হয়ে যায়। শফিউল ইসলাম যে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মাকে আউট করে দেন। ব্যাট হাতে নেমেই দুটি বাউন্ডারি হাঁকান রোহিত। দলের ১০ রানেই রোহিতের ৯ রান হয়ে যায়। এই ওপেনার যদি উইকেটে থাকেন, তাহলেইতো সর্বনাশ! এমন ভাবতেই ম্যাচের প্রথম ওভারের শেষ বলে রোহিতকে এলবিডাবলিউ করে দেন শফিউল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি এ ওপেনার। ভারতীয় দর্শকরা যেভাবে উন্মাদনায় মাততে থাকেন, তা রোহিত আউট হতেই তাৎক্ষণিক কমে যায়। ভারত শিবিরে চাপও তৈরি হয়। প্রথম ওভারে যেখানে ১০ রান হয়। সেখানে পরের ৫ ওভারে ২৫ রান করে ভারত। মহাচাপে যে থাকে, তা বোঝাই যায়। পাওয়ার প্লেতে ৩৫ রানের বেশি করতে পারেনি রোহিতের দল। সপ্তম ওভারে গিয়ে লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব নিজের প্রথম ওভার বোলিং করতে এসেই যখন সফল হন। লোকেশ রাহুলকে (১৫) সাজঘরে ফেরান। তখন স্নায়ুচাপে ভোগা শুরু করে দেন ভারত ব্যাটসম্যানরা। শিখর ধাওয়ান থাকায় অবশ্য বিপদ থাকে। আবার শ্রেয়াস আইয়ার এসে যেভাবে ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করতে থাকেন। ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। তাতে স্কোর ভালই বাড়তে থাকে। ভারত যেন বিপদমুক্তও হতে থাকে। যেখানে প্রথম ৬ ওভারে ৩৫ রান করে ভারত। সেখানে পরের ৪ ওভারেই ৩৪ রান করে ফেলে। ১০ ওভারে ৬৯ রান হয়ে যায়। ধাওয়ান-আইয়ার মিলে মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন। তবে এমন সময়ে এসে আবার ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হন বিপ্লব। এবার ১৩ বলেই ২২ রান করে ফেলা আইয়ারকে আউট করে দেন। এবার ধাওয়ানের সঙ্গে যুক্ত হন ঋষভ পন্থ। পন্থ উইকেট আঁকড়ে থাকেন। আর ধাওয়ান রান তুলতে থাকেন। তাতেও খুব বেশি সুবিধা করা যায়নি। চাপেতো একটা সময়ে গিয়ে দলের ৯৫ রানে ধাওয়ান (৪১) রান আউটই হয়ে গেলেন। দলের রান কোনমতে ১০০ রানের উপরে যায়। ১০২ রান হতেই জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা শিভম দুবেকে (১) সাজঘরে ফেরান আফিফ হোসেন ধ্রুব। মাথার ওপর দিয়ে দুবের শট করা বলটি চলেই যেতে থাকে। ধ্রুব এক হাতে তা লুফে নেন। ‘সুপার’ এক ক্যাচ ধরেন। কোন বোলারই টানা বোলিং করার সুযোগ পাননি। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আট বোলার কাজে লাগান। তা কাজেও দেয়। ধাওয়ান আউটের পর পন্থ যেন বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। দ্রুত রান তুলতে থাকেন। শেষমুহূূর্তে গিয়ে পন্থকে (২৭) আউট করে দেন শফিউল। ১৮তম ওভারে গিয়ে ১১৮ রান হয় ভারতের। তখন মনে করা হয় ১৪০ রানের মধ্যেই আটকে থাকবে ভারত। কিন্তু শেষ দুই ওভারেই বেশি রান হয়ে যায়। ওয়াশিংটন সুন্দর (১৪*) আর ক্রুনাল পান্ডিয়া (১৫*) মিলেই স্কোরবোর্ড মজবুত করে তুলেন। ওয়াশিংটন দুই ছক্কা, পান্ডিয়া এক ছক্কা ও এক চার হাঁকান। তাতে শেষ ১২ বলেই ৩০ রান হয়। স্কোরও ১৫০ রানের (১৪৮ রান) কাছাকাছি চলে যায়। আল আমিন হোসেন শেষ ওভার করতে এসেই ১৬ রান দেন। আর এখানেই পিছিয়ে থেকেও অনেকটাই এগিয়ে যায় ভারত। কিন্তু মুশফিক, সৌম্য, নাঈমরা এই রান সহজেই করে ফেলে ম্যাচও জেতান। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার টি২০ ম্যাচটি দিয়ে ১০০০তম আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ হয়। প্রথমবারের মতো ভারতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে গিয়ে দিল্লীতেও প্রথমবারের মতো খেলে বাংলাদেশ। এরআগে ভারতের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে ৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ (তিনটি ওয়ানডে, একটি টি২০ ও একটি টেস্ট) খেলে যেমন সবকটিতে হার হয়েছিল, এবার তা হয়নি। এবার জয় আসে। ভারতের বিরুদ্ধে এরআগে ৮টি টি২০ খেলে শতভাগ হার হয়। ভারতের বিরুদ্ধে টি২০তে জেতার আশা এবার পূরণ হয়। ভারতকে উড়িয়ে দিয়েই জয়টি এলো। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার এই জয়ের পর এক বার্তায় রাষ্ট্রপতি দলের সব খোলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এই জয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। ভবিষ্যতেও জয়ের এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। খবর বিডিনিউজের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বার্তায় কৃতিত্বপূর্ণ এই জয়ের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সব সদস্য, কোচ, ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান। সাকিব আল হাসান নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পর খর্ব শক্তি ও ভাঙ্গা মনোবল নিয়ে ভারতে গিয়ে সফরের প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলায় জয় পেল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের কাছে ভারতের পরাজয় এটাই প্রথম। স্পীকারের অভিনন্দন সফরে তিন ম্যাচ টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ভারতকে সাত উইকেটে পরাজিত করায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সকল খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর অভিনন্দন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সকল খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি এক অভিনন্দন বার্তায় বলেন, ‘সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজের ১ম ম্যাচেই দুর্দান্ত ক্রিকেট নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ভারতকে পরাজিত করায় দেশবাসীর সঙ্গে আমিও আনন্দিত এবং গর্বিত। এ সিরিজে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলেই সিরিজ জয়ের গৌরব অর্জন করবে বলেই আমি আশা করি। আমি জাতীয় ক্রিকেট দলের সার্বিক সাফল্য কামনা করি।’ প্রতিমন্ত্রী মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ৬০ রানের লড়াকু ইনিংসের প্রশংসা করেন এবং তাকে বিশেষ ধন্যবাদ ও শুভ কামনা জানিয়েছেন। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও জাতীয় ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
×