ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হ্রদের নিচে সমৃদ্ধ নগরী

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ৪ নভেম্বর ২০১৯

 হ্রদের নিচে সমৃদ্ধ নগরী

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর ও তেলেঙ্গানার নালগো-া এলাকায় রয়েছে নাগার্জুন বাঁধ। এটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল ১২ বছর। সেখানে রয়েছে প্রাচীন ভারতের এক সমৃদ্ধ নগরী। কৃষ্ণা নদীতে বাঁধ তৈরির জন্য সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছিল ১৯০৩ সালে। হায়দরাবাদের নিজামের নির্দেশে কাজ করেছিলেন ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়াররা। তবে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আমলে, ১৯৫৫ সালে। শেষ হয় ১৯৬৭ সালে। এক দশমিক ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধের জল ধারণক্ষমতা ১১৪৭ কোটি ২০ লাখ ঘনমিটার। সেচ ও জলবিদ্যুত প্রকল্পসহ বহুদিকে বিস্তৃত বাঁধের জন্য সবুজ বিপ্লবের প্রধান উৎস। তার বিনিময়ে গ্রাস করেছে ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। প্রায় ১৭০০ বছরের প্রাচীন নগরী। দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন বশের পতনের পরে ক্ষমতায় এসেছিল ইক্ষবাকু বংশ। যা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বশিষ্ঠপুত্র চামতামুলা। অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানার গুণ্টুর, কৃষ্ণা ও নালগোণ্ডা অঞ্চলে ২২৫ থেকে ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে বিস্তৃত হয়েছিল ইক্ষবাকু বংশের শাসন। নাগার্জুনসাগর হ্রদেই ছিল তাদের রাজধানী। কৃষ্ণা নদীর ডান তীরে তাদের রাজধানীর প্রাচীন নাম ছিল বিজয়পুরী। সুপরিকল্পিত এই শহরে ছিল বিশাল রাজপ্রাসাদ, সাধারণ মানুষের বাড়ি, মন্দির, দোকানপাট, হাটবাজার, আস্তাবল, স্নানাগারসহ নাগরিক সভ্যতার সব অংশ। রোমান সাম্র্রাজ্যের মতো এ্যাম্ফিথিয়েটারও ছিল এই নগরীতে। সভ্যতার ধ্বংসাবশেষে সোনার গয়না পাওয়া গেছে। তাতে ছিল কণ্ঠহার, যার লকেট হল রোমান সাম্র্রাজ্যের মুদ্রা। একটি স্তম্ভে খোদাই করা ছিল গ্রীক দেবনা দিয়োনিসাসের ভাস্কর্য। বিজয়পুরীতে কার্তিকেয়সহ অন্যান্য হিন্দু দেবতার মন্দির ছিল। পাশাপাশি পাওয়া গেছে বৌদ্ধ চৈত্য ও স্তুপের নিদর্শনও। সাম্র্রাজ্যের রাজধানী বিজয়পুরী অজ্ঞাত কারণে রহস্যজনকভাবে নগরী ও ইক্ষবাকু বংশের শাসন ধ্বংস হয়ে যায়। ইতিহাসের অমূল্য এই সম্পদ নিয়ে কয়েক শ’ বছর ধরে বিজয়পুরী চলে গিয়েছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। ঘন জঙ্গল আর পাহাড়ের আড়ালে থাকা সভ্যতাটি পুনরাবিষ্কার হয় ব্রিটিশ শাসনে, ১৯২৬ সালে। ১৯২৭ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত। সে সময় সামান্য খনন কাজও হয়। পঞ্চাশের দশকে পুনরায় খনন শুরু হলে জানা যায়, আদি প্রস্তর যুগ থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত সেখানে জনপদ ছিল। সে সব ইতিহাসের চিহ্ন এখন নাগার্জুনসাগরের জলের তলায়। -দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন
×