ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার সহিংসতা ॥ বেরিয়ে আসছে নতুন তথ্য

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ৪ নভেম্বর ২০১৯

 ভোলার সহিংসতা ॥ বেরিয়ে আসছে  নতুন তথ্য

হাসিব রহমান, ভোলা থেকে ॥ বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ঈদগা মাঠে সহিংস ঘটনায় পুলিশের গঠন করা ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি রিপোর্ট রবিবার জমা দিয়েছে। তবে ওই রিপোর্টের বিষয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। ইতোপূর্বে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্টও দাখিল করা হয়। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আসামিদের কাছ থেকে নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। ওই ঘটনার দিনগুলোতে আহত এক কনস্টেবলকে মাঠ থেকে যে কোন একটি পক্ষ গুলি করেছে। তবে এটা কিসের গুলি সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এখন পর্যন্ত ভিডিও ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয়ে পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের মধ্যে ৩ জনই বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের সদস্য। আর বাকি ১ জন কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নেই। অন্যদিকে বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত চতুর্থ আসামি বোরহানউদ্দিন ছাত্রদলের সভাপতি আশরাফুল আলম সবুজের বড় ভাই স্বপনকে (৩০) রবিবার দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভোলার বোরহানউদ্দিনের সংখ্যালঘু যুবক বিপ্লবের ফেসবুক মেসেঞ্জার থেকে আপত্তিকর মেসেজকে কেন্দ্র করে গত ২০ অক্টোবর বোরহানউদ্দিনের সহিংস ঘটনায় পুলিশ বিভাগ থেকে গত ২৩ অক্টোবর ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত টিমে প্রধান করা হয় বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। এছাড়াও ওই টিমের সদস্য করা হয়, ঢাকার এসবি’র এসপি হাসিবুল আলম, বরিশাল রেঞ্জ অফিসের এসপি হাবিবুর রহমান, বরিশাল পিবি আই এসপি মিজানুর রহমান, ভোলা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাফিন মাহামুদ। ৫ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে গত ২৭ অক্টোবর বোরহানউদ্দিন উপজেলায় গিয়ে সরেজমিনে সাক্ষ্যগ্রহণসহ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। তারা ঘটনাস্থল ঈদগাহ মাঠের পাশেই বোরহানউদ্দিন পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে সেই হামলা সংর্ঘষ, ভাংচুরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। শনিবার পর্যন্ত তাদের তদন্ত কার্যক্রম শেষে রবিবার পুলিশের ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয় বলে নিশ্চিত করেন ওই তদন্ত টিমের সদস্য ভোলা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাফিন মাহামুদ। তিনি বলেন, তারা বোরহানউদ্দিনের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের হেড কোয়ার্টারে পাঠিয়েছেন। তবে বিস্তারিত কোন তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে ভোলা পুলিশের নির্ভরযোগ্য এক সূত্র জানান, বোরহানউদ্দিনের ঘটনায় এ পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের রিমান্ডে নেয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের সঙ্গে পুলিশ এসব বিষয়ে বলতে চাচ্ছে না। তবে সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার দিন ঈদগা মাঠ থেকে সহিংস ঘটনার উস্কানি গ্রুপ থেকে পুলিশের ওপর গুলি চালানো হয় বলে পুলিশ নিশ্চিত। কারণ ওইদিন পুলিশের কনস্টেবল আরিফের বুকে একটি গুলি বিদ্ধ হয়ে পিছন দিক দিয়ে তার বের হয়ে যায়। তিনি এখনও সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার হাত প্যারালাইস অবস্থায় রয়েছে। সূত্র বলছে, ওইদিন শুধু পুলিশই গুলি চালায়নি। পুলিশের ওপরও গুলি চালানো হয়েছে। কিন্তু কে গুলি চালিয়েছে তাকে এখনও আটক করা সম্ভব হয়নি। যে কনস্টেবল আহত হয়েছে, তার শরীরে কি ধরনের গুলি লেগেছে তাও এখনও পুলিশ নিশ্চিত করতে পারেনি। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের সূত্র আরও জানান, ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হয়ে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এদের মধ্যে ১ জন পৌর সেচ্ছাসেবক দলের, ১ জন তরুণ দলের পদে রয়েছে এবং ১ জন বিএনপির কর্মী। এছাড়া অন্য ১ ব্যক্তি রাজনৈতিক কোন দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু নতুন তথ্য পুলিশ পেয়েছে। ভোলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, মামলার হওয়ার পর থেকে তারা আসামি গ্রেফতারে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার বিষয়ে তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি। তারা ভিডিও ফুটেজ দেখে যারা মারমুখি ছিল সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। যারা মারমুখি ভূমিকায় ছিল, নিজেদের দোষী মনে করেছে তারা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এ পর্যন্ত ঈদগা মাঠের ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাদেরকে নিশ্চিত হয়ে আটক করা হচ্ছে। বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনামুল হক জানান, বোরহানউদ্দিনে ঈদগা মাঠে সহিংস ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মৃত জুবায়ের মাস্টারের পুত্র স্বপনকে (৩০) শনিবার বিকেলে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার ছোট ভাই বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আশরাফুল আলম সবুজ। গ্রেফতারকৃত স্বপন পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তাকে রবিবার ভোলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়। কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, গ্রেফতারকৃত আসামি স্বপনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালতের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরিফ মোঃ সানাউল হক আসামি স্বপনের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
×