ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওরা রোহিঙ্গা সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধান চায়

অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফের ভূয়সী প্রশংসা বিশ্বব্যাংকের

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ৪ নভেম্বর ২০১৯

 অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফের ভূয়সী প্রশংসা বিশ্বব্যাংকের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আবারও ভূয়সী প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বিশ্বব্যাংক কোন হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলে মনে করে। এটা রাজনৈতিক ইস্যু। এই ইস্যু রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে বলে জানায় বিশ্বব্যাংক। রবিবার সোনারগাঁ হোটেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রশংসা করে এসব কথা জানায় বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। এর আগেও একই জায়গায় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছিল বিশ্বব্যাংক। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক প্যাট্রিজিও পাগানো, বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, গত দুই দিনে বিশ্বব্যাংক উন্নয়ন ইস্যু ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। বাংলাদেশের এখন ৮ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি রয়েছে। ’২৪ সালে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ হবে। সময় এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার। বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর মধ্যে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ। দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশ বিরাট সাফল্য দেখিয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক আমাদের বন্ধু। উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে দ্রুত অর্থনৈতিক বর্ধনশীল দেশ। দারিদ্র্য হ্রাসসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে বেসরকারী খাত কাজ করছে। বিভিন্ন খাতে উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মডেল। মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা তাদের বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতার কথা স্বীকার করি। বিশ্বাস করি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ, বৈষম্যহীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জনে তারা আমাদের সহযোগিতা দেবে। প্যাট্রিজিও প্যাগানো বলেন, আমরা প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছি। আমরা অবাক হয়েছি যে, বিশ্বে দ্রুত উন্নয়ন করা দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখ করার মতো। দারিদ্র্য দূর করা বিশ্বব্যাংকের প্রধান কাজ। তাই বাংলাদেশের এই অর্জনে আমরা খুশি। তারপরও বাংলাদেশের বড় একটা অংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। দেশের সব মানুষই উপকারভোগী হবে এমন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক বিনিয়োগ করতে চায় বলেও জানান তিনি। প্যাট্রিজিও প্যাগানো বলেন, উন্নয়নে দেশের সব মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে বেসরকারী খাতেরও এ ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হওয়া দরকার। বেসরকারী খাতও ভাল কাজ করে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনাদের উচিত নিজেদের জনগণের জন্য বিনিয়োগ করা। বিনিয়োগ বলতে শুধু ভৌত অবকাঠামোকে নির্মাণই বোঝায় না, মানবসম্পদ উন্নয়নকেও বোঝায়। মানবসম্পদ বলতে মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়কে ইঙ্গিত করে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে অনেক কাজ করছে। প্যাট্রিজিও পাগানো বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। দুই দেশ এবং জাতিসংঘকেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্বব্যাংক কেবলমাত্র আর্থিক বিষয়টি দেখে। সঙ্কট সমাধানে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এর বাইরে রাজনৈতিকভাবে আমাদের হস্তক্ষেপের এখতিয়ার নেই। পাগানো আরও বলেন, বাংলাদেশ যেমন আমাদের পার্টনার, তেমনি মিয়ানমারও। রাজনৈতিক সমাধান দু’দেশকেই বের করতে হবে। তবে রোহিঙ্গা সঙ্কটে কক্সবাজার এলাকায় নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করছে। কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, বাংলাদেশ নিজেই ব্যতিক্রমী হয়ে উঠবে আগামীতে। কারণ কাগজে বাংলাদেশের যে অর্জন, সেটার বাস্তবতাও রয়েছে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদসহ বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
×