ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি মাসের মাঝামাঝি নাগালের মধ্যে আসবে দাম

চার মাসে ৩ হাজার ১৭৯ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট ॥ পেঁয়াজের মূল্যে নৈরাজ্য

প্রকাশিত: ১০:০৬, ৪ নভেম্বর ২০১৯

 চার মাসে ৩ হাজার ১৭৯ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট ॥ পেঁয়াজের মূল্যে নৈরাজ্য

ওয়াজেদ হীরা ॥ পেঁয়াজ এখন ভোক্তাদের গলার কাঁটা। কোন কিছুতেই যেন ক্রেতাদের হাতের নাগালে আসছে না। ১২০ টাকা কেজি থেকে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও হালি (৪টি) হিসেবেও বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এই দাম বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে শুরু থেকেই। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে চার মাসে ৩ হাজার ১৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে একটি সংগঠন। মূল্য নাগালে আসতে ভারতের বিকল্প দেশ হিসেবে মিসর, চীন, মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে আসা চালান আর বাজারে নতুন পেঁয়াজ ওঠার অপেক্ষায় ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে পেঁয়াজের দাম কমার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিকেজি পেঁয়াজের মূল্য কমপক্ষে ১২০ টাকা মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সবার কাছেই ‘পেঁয়াজ’ এক উচ্চমূল্যে মসলা হিসেবে পরিচিত। যা খাওয়া ছাড়তেও পারছে না আবার খেতে গেলে প্রতিনিয়তই পকেট কাটা যাচ্ছে। রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে পাইকারি বাজারে কিছুটা দাম কমেছে বলা হলেও খুচরা বাজারে প্রভাব নেই। প্রতিদিনই বাড়তি দামে ভোক্তাদের পকেট কাটা যাচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের বিভিন্ন দাম দেখা গেছে। খুচরা কোন বাজারেই ১২০ টাকার নিচে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়নি। বরং আরও ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি খুচরা বাজারগুলোতে। রাজধানীর শ্যামবাজার ও খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আমদানিকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বাজারে মিসরের পেঁয়াজের আমদানিমূল্য কেজিপ্রতি ৪০-৪৫ টাকা। কিন্তু সঙ্কটের কথা বলে আমদানিকারকরা কমিশনভোগী বিক্রেতাদের মাধ্যমে পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে কেজিতে ৫৫ টাকা লাভ করছেন। তারা দাম নিচ্ছেন ৯৫ টাকা। পাইকারি বিক্রেতারা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ১০০-১০৫ টাকা কেজি। খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ভোক্তারা কিনছেন ১৩০ টাকায়। প্রতি কেজি মিয়ানমানের পেঁয়াজের এলসি মূল্য ৬৮ টাকা। পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ১০০ টাকা। পাইকারি বিক্রেতারা এই পেঁয়াজ খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে ১২০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করছে ১৩০ টাকা কেজি দরে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোঃ আমানত আলী বলেন, আমরা কমিশনে বিক্রি করি। বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আমদানিকারকরা। তারা যে রেট (দর) দেয় সেই দামে আমাদের বিক্রি করতে হয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে আমদানিকারকদের প্রতি নজর দিতে হবে। রাজধানীর কাওরান বাজারের আড়ত ব্যবসায়ী হোসেন বলেন, আমরা বাড়তি দরে কিনে অল্প লাভে বিক্রি করে দেই। আমাদের ৪/৫ টাকা লাভেই খুশি। কারা দাম বাড়াচ্ছে দেখুন। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে স্বল্প মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করলেও তার কোন প্রভাব নেই বাজারে। কারণ তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, সারাদেশে প্রতিদিন পেঁয়াজের চাহিদা ৬ হাজার টন। এই হিসেবে রাজধানীতেই চাহিদা প্রায় দেড় হাজার টন। কিন্তু টিসিবি রাজধানীতে বিক্রি করছে মাত্র ৩৫ টন পেঁয়াজ। প্রতিদিনই টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির ট্রাক ঘিরে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন। প্রতি ট্রাকে মাত্র এক টন পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। ৪৫ টাকা কেজি দরে একজন ক্রেতাকে দেয়া হচ্ছে দুই কেজি করে পেঁয়াজ। এই সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ দিয়ে কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব সেটি সবার কাছে এক বড় প্রশ্ন। প্রেসক্লাব সংলগ্ন টিসিবির ট্রাক ঘিরে প্রায় অর্ধশত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। অধিকাংশ মানুষই কিনছেন পেঁয়াজ। এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজের দরের উর্ধ গতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখন পর্যন্ত তার কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি বাজারে। তবে দ্রুতই দাম আরও কমে আসবে এমন আশা কর্মকর্তাদের। আশার কথা শুনিয়েছে মন্ত্রণালয় ॥ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ শফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বড় বড় আমদানিকারকরা সবসময়ই আমদানি করেন। আমাদের অনুরোধে বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পেঁয়াজ আনছে মিসর, তুরস্ক থেকে। যা আগামী সপ্তাহেই আসবে। আর নতুন পেঁয়াজ উঠবে। নবেম্বরে শেষের দিকেতো নতুন পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ থাকে। সবমিলিয়ে চলতি মাসেই মূল্যেও লাগাম টানা সম্ভব হবে বলেই মনে করেন এই কর্মকর্তা। সম্প্রতি এমন আশার কথা শুনিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদিকদের বলেন, দেশে যাতে পেঁয়াজ নিয়ে আর সঙ্কট না হয়, এ জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কয়েকদিনের মধ্যে ভারত যদি পেঁয়াজ রফতানি নাও করে, তারপরও এ মাসের শেষের দিকে দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে।
×