ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

না’গঞ্জে চারতলা ভবন হেলে খালে পড়ে গেছে

প্রকাশিত: ১০:০৫, ৪ নভেম্বর ২০১৯

না’গঞ্জে চারতলা ভবন  হেলে খালে পড়ে গেছে

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ নগরীর ১ নম্বর বাবুরাইল তাঁতিপাড়া এলাকায় একটি চার তলা ভবন ভেঙ্গে খালে পড়ে গেছে। এতে শোয়েব আহমেদ (১২) নামে স্কুলছাত্র নিহত ও অপর চারজন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও ইফতেখার আহমেদ ওয়াজেদ (১২) নামে আরও এক স্কুলছাত্র নিখোঁজ রয়েছে। রবিবার বিকেল সোয়া চারটায় বাবুরাইলের তাঁতিপাড়া এলাকার এইচএম ম্যানশন নামে ভবনটির খুঁটি উপড়ে খালের ওপর ভেঙ্গে পড়ে যায়। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফিন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল-আরেফিন জানান, ভেঙ্গে যাওয়া ভবনটিতে ছয়জন অবস্থান করছিলেন। এদের মধ্যে একজন নিহত ও চারজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিসের মোট আটটি ইউনিটের কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছেন। রাত সাড়ে ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ইফতেখার আহমেদ ওয়াজেদকে ভবন থেকে বের করে আনার জন্য উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ সময় ঘটনাস্থলে শত শত লোকজন ভিড় জমায়। প্রতক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানায়, বিকেল সোয়া ৪টার দিকে এইচএম ম্যানশন নামে ভবনটি প্রথমে হেলে পড়ে। পরে ভবনটির খুঁটি উপড়ে খালের ওপর ভেঙ্গে পড়ে যায়। খবর পেয়ে মন্ডলপাড়া ও হাজীগঞ্জ থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এ সময় র‌্যাব ও পুলিশ সসদ্যরা ভেঙ্গে পড়া ভবনটি ঘিরে রাখে। পরে ভবনের ভেতর থেকে পাঁচজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে শোয়েব আহমেদকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ইফতেখার আহমেদ ওয়াজেদ নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ ইফতেখার আহমেদ ওয়াজেদ বেপারিপাড়া সানরাইজ কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। ইফতেখার আহমেদ ওয়াজেদের বাবা জহিরুল ইসলাম রুবেল জানান, প্রতিদিনের মতো তার সন্তান আরবী পড়ার জন্য ওই ভবনের নিচ তলায় সোনিয়া ম্যাডামের কাছে আরবী পড়তে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই বিকট শব্দে ভবনটি হেলে পাশের একটি খালে ধসে পড়ে। এতে ওই বাসায় পড়তে আসা বাসার গৃহকর্ত্রীসহ ছয়জন আটকেপড়ে। ভবনটি ভেঙ্গে পড়ার পর পরই স্থানীয় লোকজন দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করে। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া পাশের বাসার ভাড়াটিয়া রাজীব আহমেদ জানান, বিকেল সোয়া চারটার দিকে তিনি তার বাসার সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় বিকট শব্দে একটি ভবন ভেঙ্গে পড়তে দেখে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে দৌড়ে আসেন। এ সময় ভবন থেকে কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পান। পরে তিনি আরও কয়েকজন মিলে ভবনটির বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আরবী শিক্ষক সোনিয়া, ওই বাসার গৃহকর্ত্রী রুনা বেগম ও শিক্ষার্থী শোয়েব আহমেদসহ মোট পাঁচজনকে উদ্ধার করেন। তিনি জানান, উদ্ধারকৃতদের দ্রুত নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের নেয়া হলে শোয়েব আহমেদকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী তাসলিমা বেগম জানান, তিনি আছরের নামাজ শেষ করে মোনাজাত করছিলেন এ সময় বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ভবনটি থেকে অনেক কান্নার শব্দ বেরিয়ে আসছিল। এ সময় রাজীবসহ কয়েকজন ওই ভবন থেকে একে একে মোট পাঁচজনকে উদ্ধার করে। ভবনের ভেতর চাপা পড়া রুনা বেগম জানান, সোনিয়া ম্যাডামের কাছে চার শিক্ষার্থী আরবী পড়ছিল। এ সময় ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়। ঘর থেকে শিক্ষার্থী ও সোনিয়াকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলতে বলতেই ভবনটি হঠাৎ ভেঙ্গে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভবনের মেঝেতে পড়ে যান। তারপর কি হয়েছে তাতে কিছুই বুঝতে পারেননি। জ্ঞান ফিরে তিনি দেখেন হাসপাতালে অবস্থান করছেন। রাত পৌনে আটটার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে তিনি আবার ঘটনাস্থলে ফিরে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, আমার বোনের ছেলে শোয়েবসহ মোট চারজন সোনিয়া ম্যাডামের কাছে আরবী পড়ছিল। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে ভবনটি ভেঙ্গে পড়ে। ভবনে আটকেপড়া ভায়াটিয়া রুনা বেগম জানান, এই ভবনটির মালিক একই পরিবারের চারজন। তাদের একজন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। চারজনের পরিবারে এই ভবনটিতে থাকতেন। কিন্তু রবিবার তাদের একটি দাওয়াত থাকায় তাদের পরিবারের সদস্যরা বাসায় ছিলেন না। এতে তারা রক্ষা পান। ভবনের ভেতর আটকেপড়া ইফতেখার আহমেদ ওয়াজেদের বাবা জহিরুল ইসলাম রুবেল ঘটনার পর থেকে বাকরুদ্ধ অবস্থায় ভবনটির সামনে বসে আছেন। আর বলছেন কখন ফিরে আসবে তার সন্তান। সে অপেক্ষায় বসে আছেন। তিনি বলেন, কোন দুঃসংবাদ নয় আল্লাহর কাছে একটাই ফরিয়াদ করি আল্লাহ তুমি আমার সন্তানকে জীবিত ফিরিয়ে দাও। স্থানীয় বাসিন্দা জানান, হেলে ভেঙ্গে পড়া ভবনটি প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর আগে প্রথম তলার কাজ শুরু হয়। পরে তিন তলা পর্যন্ত কাজ করে চলতি বছর। সর্বশেষ ভবনটি চার তলার ছাদ সম্প্রতি দেয়া হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভেঙ্গে পড়া ভবনটি চার সুতা রট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পিলারের নিচে তেমন কোন বেজমেন্ট দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক দেবাশীষ সাহা জানান, ৪টা ১৭ মিনিটের সময় খবর পাই ১ নং বাবুরাইল তাঁতিপাড়া এলাকায় একটি চারতলা ভবন ভেঙ্গে পড়েছে। ঘটনার পরপরই মন্ডলপাড়া ফায়ার সার্ভিস, হাজিগঞ্জ ফাযার সার্ভিস, ও ফতুল্লা সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। ভবনটিতে আটকেপড়া মোট ছয়জনকে উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে শোয়েব আহমেদ নামে একজন নিহত হয়। বাকি পাঁচজনকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ঢাকা ফায়ার সার্ভিস থেকে একটি ডুবুরি দলসহ আরও দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। তিনি বলেন, ভবনে আটকেপড়া ইফতেখার আহমেদ ওয়াজেদকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখবেন। তিনি বলেন, ভবনটির বিভিন্ন পয়েন্টের ছিদ্র করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভেতরে তল্লাশি চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতা শুরু করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা মনিটরিং করছি। এই ভবনটি নির্মাণের সময় কোন ত্রুটি ছিল কিনা বা ভবনটি নির্মাণের জন্য রাজউকসহ কারও অনুমতি আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হবে।
×