ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকারের একার পক্ষে এসডিজি অর্জন করা সম্ভব নয়

প্রকাশিত: ১০:৪১, ৩ নভেম্বর ২০১৯

 সরকারের একার পক্ষে এসডিজি অর্জন করা সম্ভব নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে মানুষের কল্যাণের জন্য। কিন্তু সব প্রযুক্তি মানুষের জন্য কল্যাণকর নয় বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এই মুহূর্তে দারিদ্র্য বিমোচন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা জরুরী। তবে সেটা প্রযুক্তির মাধ্যমেই হতে হবে এমন নয় বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। শনিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বেসরকারী খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. সামছুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, ইউএনডিপির বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বেনজির আহমেদ প্রমুখ। এছড়াও অনুষ্ঠানে বেসরকারী খাতের বিভিন্ন প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এসডিজি অর্জনে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে বক্তাদের প্রস্তাবের বিপরীতে এম এ মান্নান বলেন, প্রযুক্তি নতুন কিছু নয়। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের আগে প্রয়োজন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক ক্ষতিকর কাজ করা যায়। যা অতীতেও হয়েছে, বর্তমানেও হচ্ছে। প্রযুক্তির যখন সূচনা হয়েছিল, তখন থেকেই এর কল্যাণকর দিক বিবেচনা করে সবকিছু শুরু হলেও অপব্যবহার তখন থেকেই শুরু হয়েছে। ইতিহাসে এর অনেক প্রমাণ রয়েছে। ভাষা প্রযুক্তি যখন প্রথম নিয়ে আসলো তখন হাজার বছর মানুষকে দাস করে রেখেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই সকল প্রযুক্তিবোধ হয় কল্যাণের জন্য বলা ঠিক হবে না। এই মুহূর্তে আমাদের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। সেটা প্রযুক্তির মাধ্যমেই হতে হবে তা নয় বলেও জানান মন্ত্রী। এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের কর্মকা- সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মতামত গ্রহণ ও উদাহরণ পর্যবেক্ষণ করে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শুধু সরকার একা কাজ করে এসডিজি অর্জন করতে পারবে না। বেসরকারী খাতকে এগিয়ে আসতে হবে এবং ভূমিকা রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সরকারের আরও অনেক কিছু করণীয় আছে। যা সরকার পর্যবেক্ষণ করে প্রতিনিয়ত সম্পাদন করছে। মন্ত্রী বলেন, কাউকে পেছনে ফেলে নয়। সরকার, বেসরকারী, ব্যক্তি, জাতি সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে চাই। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এন্ড এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) পরিচালক আসিফ ইব্রাহিম বলেন, দূষণ নিয়ে প্রাইভেট সেক্টরে কাজ হচ্ছে। অনেক গার্মেন্টস এলাকায় গ্রীন এলাকা গড়ে তোলা হচ্ছে। বেসরকারী খাত নানাভাবে এসডিজি অর্জনে সহায়তা করছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ছে আরও বাড়বে। স্বাস্থ্য সেক্টরও ভূমিকা রাখছে বলেন তিনি। প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলো ভূমিকা রাখছে। এসডিজি অর্জনে সহায়ক হিসেবে সরকারকে প্রাইভেট সেক্টর নিয়ে আরও সম্পৃক্তভাবে কাজ করার কথাও বলেন। সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশ (এনআরবিএস) চেয়ারম্যান শাকিল চৌধুরী রেমিটেন্সের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, দেশের ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বিদেশে অবস্থান করছে। বর্তমানে তারা বছরে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০৫ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ এই খাত থেকে আয় করেছে। এটা দেশের জন্য অনেক বড় একটি আয়ের উৎস। এজন্য এই খাতকে নজরদারির আওতায় এনে বিষয়টিকে সহজ করার মাধ্যমে আরও বেশি আয় করা সম্ভব বলে জানান। প্রবাসীদের নিয়ে আরও নতুনভাবে কিছু করা যায় কিনা সেটিও ভেবে দেখতে বলেন। এর আগে এসডিজি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন কার্যাবলী ও করণীয় নিয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. সামছুল ইসলাম। এছাড়াও বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর পর্বও অনুষ্ঠিত হয়। অন্য বক্তারা বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারী খাতের ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু এসডিজির নথিপত্রে বেসরকারী খাতের ভূমিকা কী হবে তা পরিষ্কারভাবে বলা হয়নি। অথচ বাংলাদেশে বেসরকারী খাত খুবই শক্তিশালী। পরিবেশগত দিক দিয়ে টেকসই ও নৈতিক উৎপাদনব্যবস্থা, কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতায় এসডিজির এসব বিষয়ের সঙ্গে বেসরকারী খাত সম্পর্কযুক্ত। এসডিজির ১২ নম্বর লক্ষ্য টেকসই উৎপাদন ও ভোগ বেসরকারী খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত। এসডিজির ৮ ও ৯ নম্বর লক্ষ্যের কিছু অংশেও বেসরকারী খাতের ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অন্যান্য বক্তা বলেন, এসডিজিতে বেসরকারী খাতকে সংযুক্ত করা সহজ কাজ নয়। এক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালায় সবচেয়ে বড় বাধা রয়েছে। কিন্তু সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিষয়টিকে সহজ করার জন্য। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আরও উন্নয়ন দরকার। সরকারের সঙ্গে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক আরও ভাল প্রয়োজন। ফান্ড আরও বেশি বাড়ানো প্রয়োজন। বেসরকারী খাতকে নিয়ম মতো টাকা পরিশোধ করায় সরকারের নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। বক্তারা আরও বলেন, সাধারণ মানুষ এখন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে জানে না এসডিজি ও পিপিপি কী। তাদের এগুলো জানাতে হবে। কেননা আমাদের বেশিরভাগ উন্নয়ন আসে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ থেকে। তাই তাদের বাদ দিলে এসডিজি অর্জন করা একেবারেই অসম্ভব। এসডিজি হলো জাতিসংঘের গ্রহণ করা একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে এটি গৃহীত হয়। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে মোটা দাগে ১৭টি লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশগুলো অঙ্গীকার করেছে। সমাপনী বক্তব্যে সিনিয়র সচিব সামছুল ইসলাম বলেন, বেসরকারী খাত উন্নয়নের জন্য দরকার। তারাও বড় ভূমিকা রাখছে। তাদের বাদ দিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আলোচনার জন্য এই আয়োজনে সবাইকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়। আলোচনায় অনেক বিষয় উঠে এসেছে। প্রবাসীদের বিষয়, শিক্ষার কারিগরি খাতে নজর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে, পানিব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। আমাদের একটি লক্ষ্য আছে। ২০৩০ সালে সকল দারিদ্র্যই দূর হবে। আমরা ধনী দেশে উন্নীত হবো। এটি আমাদের তৃতীয় সম্মেলন। আমরা এই আলোচনাটা অব্যাহত রাখব। যাতে সবার সুবিধা অসুবিধাগুলো জানা যায়। এ সময় বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
×