ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়া শিল্পে প্রণোদনা

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ৩ নভেম্বর ২০১৯

 চামড়া শিল্পে প্রণোদনা

দেশীয় চামড়া খাত, চামড়া শিল্প, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের যথার্থ বিকাশ এবং উন্নয়নে আরও অন্তত পাঁচ বছর আর্থিক প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি সব রফতানি খাতের জন্য সমান সুযোগ ও নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন। এক্ষেত্রে যেসব বৈষম্যমূলক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাও দূর করার আশ্বাস দিয়েছেন। রাজধানীতে তিন দিনব্যাপী ‘তৃতীয় বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার এ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-২০১৯’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব প্রতিশ্রুতি দেন। উল্লেখ্য, লেদার টেক বাংলাদেশ শীর্ষক এই প্রদর্শনীতে ২০টি দেশের তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। উল্লেখ করা আবশ্যক যে, গত এক দশকে চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প পাট এবং পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়কে অতিক্রম করে পোশাক শিল্পের পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি আয়ের খাতে পরিণত হয়েছে। তবে এর আরও উন্নয়ন ও বিকাশের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যেজন্য সরকার সাভারে চামড়া শিল্পনগরীর বর্ধিত প্রকল্পে আন্তর্জাতিক মান ও এলডব্লিউজি সনদ অর্জন-উপযোগী কম্পোজিট, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা কারখানা গড়ে তোলার জন্য আরও ১৫০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। দেশীয় চামড়া ও পাদুকা শিল্পের মালিকদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে অবশ্যই। দেশের চামড়া শিল্প স্বনির্ভর হয়ে অদ্যাবধি দাঁড়াতে পারল না দূরদর্শিতার অভাবে। যে কারণে এ খাতে রফতানি আয় কমছে গত কয়েক বছর ধরে। এবার কোরবানির চামড়া নিয়ে যা হয়েছে তাও মূলত সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষীদের দুরভিসন্ধি ও কারসাজি বৈ কিছু নয়। চামড়ার দাম না পেয়ে কাঁচা চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলাসহ ফেলে দেয়ার খবরও মিলেছে। চামড়া ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন যে, ট্যানারি মালিকরা তাদের আগের বছরের বকেয়া তথা পাওনা পরিশোধ না করায় এহেন শোচনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যা পরে সত্য প্রমাণিত হয়। অথচ চামড়া কেনার জন্য চলতি বছরেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো আট শতাধিক কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে স্বল্পসুদে। এহেন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিকাশমান ও সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প। সাভারে ১৯৯ একরের বেশি জমির ওপর চামড়া শিল্পনগরী গড়ে উঠলেও সেটির অবস্থা ভাল নয়। পরিবেশ দূষণ রোধে বিসিকের উদ্যোগে ৫৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের সহায়তায় কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মিত হলেও তা অসম্পূর্ণ ও অপর্যাপ্ত। একদিকে যেমন কঠিন বর্জ্য স্তূপীকৃত হচ্ছে, অন্যদিকে তরল বর্জ্য তথা দূষিত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত পানি গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরীতে। ফলে বুড়িগঙ্গার মতো পরিবেশ দূষণ চলছেই। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি। এ নিয়ে চাপানউতোর খেলা চলছে চামড়া শিল্প মালিক ও বিসিকের মধ্যে। আসলে ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা বিসিককে এরকম বড় একটি কাজের দায়িত্ব দেয়া ঠিক হয়নি। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি চরম অদক্ষতা ও অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। অন্যদিকে চৈনিক প্রতিষ্ঠনটিও যথেষ্ট দক্ষ ও অভিজ্ঞ নয়। ডিসেম্বরের মধ্যে বর্জ্য পরিশোধনাগার তথা সিইটিপির সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পরেই আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে আন্তর্জাতিক লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ অর্জনের জন্য নিরীক্ষার। অথচ ইতোমধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চামড়া রফতানির খাতে আয় কমেছে ৬ শতাংশ। ইটিপিসহ সাভারের চামড়া শিল্পনগরী পুরোপুরি চালু হলে সহজসাধ্য হয়ে উঠবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার আরও সম্প্রসারণ করা।
×