ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাশ্মীরে স্কুলবঞ্চিত ১৫ লাখ শিশু

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ৩ নভেম্বর ২০১৯

 কাশ্মীরে স্কুলবঞ্চিত  ১৫ লাখ শিশু

কাশ্মীরের ছোট্ট শিশু আলিয়া খান। মেয়েটি এ বছর পঞ্চম শ্রেণীতে উঠেছিল। প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাবার জন্য তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হতো আলিয়া। প্রায় জনশূন্য সরু রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুলের দেয়াল পর্যন্ত পৌঁছায় মেয়েটি। স্কুল ফটকে একটি বড় তালা ঝোলানো দেখে বাসায় ফিরে মনমরা হয়ে মাথা নিচু করে মায়ের সামনে দাঁড়ায়। মা রুবিনা খান ধমকের সুরে বলেন, আমি বলেছিলাম, আজও স্কুল খুলবে না। কেন বাইরে গেল, কাল আর যাবে না। শুধু আলিয়া নয় তার মতো কাশ্মীর উপত্যকার প্রায় ১৫ লাখ শিশু এখন স্কুল বঞ্চিত। ভারত সরকার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়ার পর ১৩ সপ্তাহ পার হয়েছে। তারপরও সেখানকার স্কুলগুলো খোলেনি। স্কুলগুলো ঠিক কবে নাগাদ খুলবে-এই উত্তর কারো জানা নেই। এ থেকেই বোঝা যায় ভারত সরকারের বিরুদ্ধে কাশ্মীরীদের ভয় এখনও কাটেনি। কাশ্মীরের কোন কোন এলাকায় দুই/একটি সরকারী স্কুল খোলা হলেও সেখানে শিক্ষার্থী নেই। তবে ভারত সরকার চাইছে, স্কুলগুলোতে ফের শিক্ষার্থী ফিরে আসুক। সরকারী সূত্রগুলো বলছে, দুই/একটি স্কুল খোলা হয়েছিল। সেখানে শিক্ষার্থী উপস্থিতি তিন শতাংশের নিচে। ৫ আগস্ট স্বায়ত্তশাসন বিলোপের পর উপত্যকাজুড়ে কঠোর অবরোধ আরোপ করে ভারত সরকার। এরপর থেকে কাশ্মীরের রাজপথে হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্য অবস্থান করছে। এই অবস্থায় কাশ্মীরের অভিভাবকরাও সন্তানদের বাড়ির বাইরে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। কাশ্মীরের যত্রতত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ভারতীয় সৈন্যের লড়াই চলছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও চায় না লোকজন বাইরে এসে ভারতীয় সৈন্যদের কোন প্রকার সাহায্য করুক। চলতি সপ্তাহে কাশ্মীরী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কয়েক নির্মাণ শ্রমিককে টেনে বাইরে এনে গুলি করে। এক প্রত্যক্ষ্যদর্শী বলেন, এ ঘটনায় পাঁচজন নিহত ও একজন আহত হয়। স্বায়ত্তশাসন বিলোপের পর বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এটাই সবচেয়ে বড় ধরনের হামলা। এই হামলার পর অনেক অভিভাবক আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। আশফাক বাট নামে একজন বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থী বহনকারী বাস অথবা গাড়িতে যদি এই ধরনের হামলা হয় তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। অথবা বিক্ষোভের সময় যদি শিশুদের মাথায় শক্ত কিছুর আঘাত লাগে। এই ভয়ে আমি আমার তিন সন্তানকে ঘর থেকে বের হতে দেই না। ঘরের মধ্যে আমার শিশুরা আতঙ্ক, হতবিহ্বল ও গোমরামুখে বসে থাকে। শুধু আমার ছেলেমেয়ে নয়; কাশ্মীরের হাজার হাজার শিশুর ভবিষ্যত স্বপ্ন এভাবে নষ্ট হতে চলেছে। আবার অনেক শিশু বিষন্নতা ও নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকের মনে ক্রোধ জন্ম নিচ্ছে। কাশ্মীরে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা ইউনুস মালিক এ ঘটনাকে জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কাশ্মীরের চলমান পরিস্থিতির জন্য অনেকে ভারত সরকারকে দোষারোপ করেছে। কারণ সরকার শিশুদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। শিশুরা এভাবে দীর্ঘদিন ঘরে বন্দী থেকে নতুন জিনিস শেখা থেকে বঞ্চিত থাকছে। অনেক শিশু স্কুলে যেতে না পেরে তাদের বাবা-মাকে বলছে, আমার স্কুল ড্রেস ও বই পুড়িয়ে ফেল অথবা আমাকে স্কুলে যেতে দাও। অনেক শিশু আক্ষেপের সুরে বলছে, আমার জন্ম কেন কাশ্মীরের মাটিতে হলো।- আল জাজিরা অবলম্বনে
×