ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাদ্দাম উত্তর বৃহত্তম বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ৩ নভেম্বর ২০১৯

 সাদ্দাম উত্তর বৃহত্তম বিক্ষোভ

ইরাকে শিয়া ধর্মীয় নেতা এবং দেশটির প্রেসিডেন্টের সমর্থক অন্তত দশ হাজার ইরাকী শুক্রবার চলতি মাসের সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। এদিকে বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকালে নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে দেড় শ’ ইরাকী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। নিউইয়র্ক টাইমস। দেশটির ধর্মীয় নেতারা শুক্রবার জানান, দুর্নীতি ও নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য বিক্ষোভে অংশ নেয়া শান্তিপ্রিয় বিক্ষোভকারীদের সুরক্ষার দায়িত্ব সরকারের। এদিকেও প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহও বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে একই কথা বলেছেন, তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিক্ষোভকে সীমিত রাখে। অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক কর্মকর্তারা প্রায় প্রতিদিনই আলোচনা-সমালোচনা করছেন, জুমহুরিয়া সেতু থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়া হতে পারে কিনা। কারণ তাইগ্রিস নদী পেরিয়ে সরকার ও কূটনীতিকদের গ্রিন জোনে যাবার ওটাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ পথ। অক্টোবরের শুরুতে ছোট পরিসরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দেশব্যাপী বিক্ষোভে রূপ নেয়। ওই সময় বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়। তবে সংসদ ও সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার বৈঠকে বসতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বারহাম সালিহ বলেন, ‘বর্তমান অবস্থা অস্থিতিশীল। আমাদের বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা সমাধান নয়, আমরা শক্তি ব্যবহার ও সহিংসতার বিরোধী। সংস্কারই এখন একমাত্র সমাধান।’ প্রেসিডেন্ট সালিহ তার বক্তব্যে বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিরও সংস্কার দাবি করেন। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদির শীঘ্রই পদত্যাগ করা উচিত, তবে ক্ষমতার শূন্যতা যেন তৈরি না হয় সেজন্য পদত্যাগের আগেই তাকে একজন উত্তরসূরি দেয়া উচিত। এদিকে বিরোধীদলীয় নেতা ও বহু বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন। পাশাপাশি বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান সমর্থন শিয়া ধর্মীয় নেতা মুক্তাদা আল-সদর চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানান। অন্যদিকে চলতি সপ্তাহে আল-সদর দাবি করেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের ফলে ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ইরাকের সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ বন্ধ করতে মাহাদি তাড়াহুড়া করে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। ইরাকে কয়েক বছর ধরে বড় দুর্নীতি, বেকারত্ব ও জনসেবা খাতের ব্যর্থতার প্রতিবাদে কিছুদিন পরপরই বিক্ষোভ হয়ে আসছে। বিশেষ করে গরমকালে বিদ্যুত ও পানি সরবরাহের ঘাটতি নাগরিকদের তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এ সময়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন বাগদাদ ও অন্যান্য শহরে নেমে পড়েন। তখন বিদ্যুত বা পানির সমস্যার সঙ্গে আরও নানা সমস্যা যুক্ত হয়। এসব আন্দোলন একদিকে ক্ষমতাসীনেরা দমন করতে চান, অন্যদিকে বিরোধী রাজনীতিকেরা এটিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বরাবরই সরকার বিক্ষোভকারীদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেয়। শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয় না। কয়েক বছর ধরে যে ধরনের বিক্ষোভ হচ্ছে, এবারের আন্দোলন সেগুলো থেকে অনেকটাই আলাদা। তা এ কারণেই যে এবারের বিক্ষোভ হয়েছে সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এই বিক্ষোভ কারও ডাকে হয়নি। কোন সংগঠন, কোন দল বা গ্রুপের আয়োজন করেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরাকের নিরাপত্তা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আমরা অতীতেও তাদের সহায়তা করেছি। আমাদের কুর্দী বাহিনীর প্রধান নিয়মিত ইরাক এবং আশপাশের অন্যান্য অঞ্চলে সফর করেন। বিশেষত মিত্ররা আমাদের সাহায্য চাইলে আমরা সব সময় এগিয়ে আসি।’
×