ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারা সংশোধন চান পরিবহন মালিকরা

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২ নভেম্বর ২০১৯

সড়ক পরিবহন আইনের  কিছু ধারা সংশোধন চান পরিবহন মালিকরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন সড়ক পরিবহন আইনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, ভবিষ্যত সড়ক দুর্ঘটনায় বিদ্যামান আইনে বিচার হলেই কেবলমাত্র আইনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসবে। পাশাপাশি দ্রুত বিধিমালা প্রনয়ণ করে আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে সমিতির পক্ষ থেকে। শনিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরেন সংগঠনের নেতারা। এক নবেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। নতুন এই আইনটি কার্যকর করার পর প্রয়োগ নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। পুলিশ বলছে, আইন সম্পর্কে তারা ততোটা ওয়াকিবহাল নন। সচেতন নন সাধারণ মানুষ। তাছাড়া আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন আপডেট করা হয়নি। এজন্য অন্তত একমাস সময় প্রয়োজন। পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিআরটিএ পক্ষ থেকেও পর্যায়ক্রমে আইন প্রয়োগের কথা বলা হচ্ছে। শনিবার এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আগামী এক সপ্তাহ আইনের প্রচার চলবে। তারপর নতুন আইনে মামলা দায়ের করা হবে। এই প্রেক্ষাপটে আইন সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতেই সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেন পরিবহন মালিকরা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার আইনের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, নতুন আইনে শ্রমিকদের চেয়ে মালিকদের বেশি সুবিধা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বলেছে, এই আইনে বেশকিছু ধারার সংস্কার প্রয়োজন। প্রতিটি শাস্তিযোগ্য ধারায় মালিক-শ্রমিক-পথচারী-গাড়ি পার্কিং সহ সংশ্লিষ্ট সকল সেক্টরের স্বার্থ জড়িত। এরমধ্যে চালকের জামিন অযোগ্য ধারা পরিবহন চালক সঙ্কট বাড়িয়ে তুলবে। যদিও সড়ক দুর্ঘটনা বা কোন অপরাধে চালক দন্ডিত হলে মালিকরা দায়ভার নেবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়। গত বছর ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় শহীদ রমিজউদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসের চাপায় প্রাণ হারানোর পর নজিরবিহীন আন্দোলন হয় দেশজুড়ে। এর পরই শাস্তির বিধান কঠোর করে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন হয়, যা কার্যকর শুরু হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, সড়ক পরিবহন সেক্টরের জন্য পৃথিবীর সব দেশেই আইন বিদ্যমান আছে। আমাদের দেশেও বৃটিশ শাসনামলে ‘মটর ভেহিক্যাল এ্যাক্ট-১৯৩৯ আইন করা হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে আইনের আংশিক সংশোধন করে ‘মোটর ভেহিক্যাল এ্যাক্ট-১৯৮৩’করা হয়। এবার নতুন আইনটি সংসদে পাশ হওয়ার পরেই বিভিন্ন ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে। নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা এখন পর্যন্ত প্রণয়ন হয়নি একথা উল্লেখ করে সাবেক মন্ত্রী রাঙ্গা বলেন, বিধিমালা ছাড়া আইন স্বয়ং সম্পূর্ণতা পাবে না। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এককভাবে কাউকে দায়ি না করে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীকে চিহ্নিত করার দাবি জানিয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, আমরাও মনে করি আইনটি বাস্তবায়নে সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। আইনটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শ্রমিকরা যেন হয়রাণির শিকার না হয় এবং আইনের অপপ্রয়োগ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে রাঙ্গা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মামলা যাতে ৩০৪(খ) ধারার পরিবর্তে ৩০২ ধারায় দায়ের না করা হয়। তদন্তে যদি প্রমানিত হয় চালক কাউকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হত্যা করেছে সেক্ষেত্রে ৩০৪(খ) ধারা ৩০২ ধারায় স্থানান্তর হলে আপত্তি নেই। তিনি বলেন, গাড়ির মালিকের সকল প্রকার কাগজপত্র এবং চালকের লাইসেন্স সঠিক থাকার পরও দেখা যায় কোন কোন ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার জন্য মালিককে বড় অংকের জরিমানা করা হয়। এ ধরণের সিদ্ধান্তের ফলে পরিবহন সেক্টর ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, নতুন আইনের প্রতি সমর্থন থাকলেও কিছু বিষয় পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এই আইনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। আইন মেনে চলতে আমরা পরিবহন মালিকদের আহ্বান জানাব। পাশাপাশি এ আইনের অনেকগুলো ধারা আছে, আমি মনে করি যেগুলো এই মুহুর্তে বাস্তবায়ন সম্ভব না। আইনের কিছু ধারা যেন সংশোধন করা হয়। আইনের কয়টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছেন- সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, আইনের জামিন অযোগ্য ধারাটিসহ তিন-চারটি ধারা সংশোধন করা প্রয়োজন বলে পরিবহন মালিকরা মনে করেন। নতুন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনার মামলায় শাস্তি বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা অর্থদ- করা হয়েছে, এসব মামলা হবে জামিন অযোগ্য। এনিয়ে আপত্তি রয়েছে পরিবহন শ্রমিকদের। শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব আছে, নন বেইলেবল ধারাকে বেইলেবল করার জন্য একথা জানিয়ে এনায়েত বলেন, বর্তমানে আটলাখ চালকের সঙ্কট রয়েছে। জামিন অযোগ্য যদি হয়, দুর্ঘটনা ঘটলেই চালক যদি জেলখানায় চলে যায়। যদি জামিন না হয়, তাহলে চালকের সঙ্কট আরও বাড়তে থাকবে। তখন কী পরিস্থিতি হবে?” সড়ক পথে দুর্ঘটনা কমাতে নৌ ও রেলপথের ব্যবহার বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এনায়েত বলেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষ সড়কপথ ব্যবহার করে। তাই দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নৌ ও রেলপথে এত বেশি দুর্ঘটনা নেই। তিনি বলেন, আইনে মালিক-শ্রমিক, পথচারী সবারই জরিমানা বেড়েছে। তবে এটা জানানোর জন্য আরও বেশি প্রচারণা দরকার। মানুষ এ আইনের কথা জানে না। তা ছাড়া আইনের কিছু অংশের পরিবর্তন প্রয়োজন। সম্প্রতি দুর্ঘটনার পরপরই হাইকোর্ট মালিকদের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণের রায় দিয়েছেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এত বিপুল যে তা দেয়া সম্ভব না। যদি মালিকের কাগজপত্র ঠিক থাকে, চালকেরও লাইসেন্স সঠিক হয়, সে ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা ঠিক না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। কারণ এতে মালিকের কোনো দায় থাকে না। এনায়েত বলেন, গুরুতর অপরাধে শাস্তি হোক। আপত্তি নেই। কিন্তু আইনের কিছু ধারা সংস্কার করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরবর্তিতে আইনের কিছু কিছু ধারা সংশোধনের জন্য সংসদে পাঠানো প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। এই মুহূর্তে আইন সংশোধন সম্ভব না হলেও পরবর্তিতে সুযোগ আছে।
×