ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৩ নভেম্বর ২০১৯

প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে

উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় সবাইকে পেছনে ফেলে জোর কদমে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) হিসাব-নিকাশ বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ। এই সময়ে পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া, প্যাসিফিক অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে সর্বোচ্চ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশের পেছনে থাকবে ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো। এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি মনমোহন প্রকাশ বলেছেন, অনেক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব। এ জন্য অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। পদ্মা সেতুসহ বড় প্রকল্পগুলো এবং ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া গ্রাম উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, রফতানি বহুমুখীকরণ, বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ আরও কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হবে। উন্নয়ন প্রচেষ্টা ঢাকা ও চট্টগ্রাম নির্ভর না রেখে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। আউটলুক প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতিও সহনীয় পর্যায়ে অর্থাৎ ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে। বাংলাদেশ সরকার চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করেছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ আন্তরিক হলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মোটেও কঠিন হবে না। রফতানি আয় ক্রমাগত বাড়ছে। প্রথম দুই মাসে তা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়ছে। শিল্পায়নের জন্য অত্যন্ত জরুরী বিদ্যুতের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা গেছে। খুব শীঘ্রই আরও কয়েকটি বড় বিদ্যুতকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। দক্ষ জনসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার কাজেও দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছে। এ সবই ভাল লক্ষণ। আর এসবের সম্মিলিত ফলের প্রকাশ দেখা যাচ্ছে জিডিপির ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধিতে। এই ধারা ধরে রাখতে হবে। স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের হাত ধরেই দেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতার কাক্সিক্ষত সুফল পেতে যাচ্ছে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করা এ দেশের মানুষ। এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে তা-ও নিশ্চিত করতে হবে এই সরকারকেই। সম্ভাবনাময় খাতগুলোকেও শক্তিশালী করতে হবে চীন, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো দেশকে পেছনে ফেলে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বাংলাদেশ। এই সময়ে পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া, প্যাসিফিক অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশের। এই বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবেই ইতিবাচক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। তবে সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেয়া দরকার, শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি পতনমুখী হবে ২০২০ সালে। আর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২০১৯ সালে দাঁড়াবে ৮ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০২০-এ কমে দাঁড়াবে ৮ শতাংশে। সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজেদের দফতরে এশিয়া মহাদেশের পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া, প্যাসিফিক অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জিডিপির প্রবৃদ্ধির হালনাগাদ তথ্যের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি। তাদের প্রকাশিত ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৯ আপডেট’ নামের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রসঙ্গত বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা ভাল অবস্থায় রয়েছে- বিষয়টি বাংলাদেশে নিযুক্ত এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়া দরকার, ভাল অবস্থা ধরে রাখতে হলে শুধু পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। সেই সঙ্গে অন্যান্য খাতকেও শক্তিশালী করতে হবে। পোশাকের মতো অন্যান্য খাতকে শক্তিশালী না করতে পারলে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে তার পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক খাতের অগ্রগতি বজায় রাখতে সামগ্রিক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অন্যান্য খাতকে এগিয়ে নিতে এবং শক্তিশালী করতে করণীয় নির্ধারণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। মনে রাখা জরুরি, তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি অনেক সম্ভাবনাময় খাতও আছে যেগুলোকে শক্তিশালী করা জরুরী। উল্লেখ্য, হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশ হবে। ২০২০ সালে গিয়ে দাঁড়াবে ৮ শতাংশ। সেখানে চীনের প্রবৃদ্ধি ২০১৯ সাল শেষে হবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ, ২০২০ সালে তা আরও কমে ৬ শতাংশে দাঁড়াবে। ভারতের প্রবৃদ্ধি ২০১৯ এ ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২০-এ হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ২০১৯-এ ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২০২০ সালে দাঁড়াবে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। উল্লেখ্য, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ওপরের দিকে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, মধ্য এশিয়ার আজারবাইজান ও কাজাখস্তান এবং প্যাসিফিক অঞ্চলের ফিজি। স্থির রয়েছে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধির হার। ২০১৯ সালে মালয়েশিয়ার জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২০ সালেও তা অব্যাহত থাকবে। ২০১৯ সালে ভিয়েতনামের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০২০ সালের শেষেও তা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া জিডিপির প্রবৃদ্ধির নিচের দিকে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীন, হংকং, কোরিয় ও চীনের তাইপে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ার, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত ও পাকিস্তান এবং প্যাসিফিক অঞ্চলের পাপুয়া নিউগিনি। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনের প্রশ্নে অর্থনীতির অগ্রগতির কোন বিকল্প নেই। ফলে পোশাক খাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাতগুলো শক্তিশালী করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা বজায় রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। প্রতিবেদেনের সামগ্রিক চিত্র পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টরা করণীয় নির্ধারণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ জারি রাখবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।
×