ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর থানায় দুর্নীতি, হয়রানির চিত্র পাল্টে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ২ নভেম্বর ২০১৯

 রাজধানীর থানায় দুর্নীতি, হয়রানির চিত্র পাল্টে যাচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর ৫০ থানায় মামলা বা জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে যাতে হয়রানির শিকার বা ঘুষ প্রদানে বাধ্য করার বিরুদ্ধে তদারকির জন্য গঠন করা হয়েছে স্বতন্ত্র সেল বা ক্রাইম সেল। একজন এডিসির নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে ৬ সদস্যের একটি টিম। রাজধানীর থানাগুলোতে হয়রানি, ঘুষ, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহারকারীদের মনিটরিং করার ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এমনকি থানায় মিথ্যা মামলা হলেও জবাবদিহি করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। রাজধানীর জোনের ডিসিদের থানাগুলোতে দুই ঘণ্টা করে তদারকি করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম। রাজধানীর থানাগুলোর জন্য ক্রাইম সেল গঠন করে তদারকি টিম গঠনের মাধ্যমে মনিটরিং করার নির্দেশ দেয়ার পর ঘুষ, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহার, হয়রানির আগেকার চিরাচরিত চালচিত্র পাল্টে যেতে শুরু করেছে। ডিএমপি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে মোঃ শফিকুল ইসলাম প্রায় এক মাস আগে দায়িত্ব নেয়ার পর রাজধানীর ৫০ থানার চালচিত্র পাল্টে যাচ্ছে। হয়রানি, ঘুষ, দুর্নীতি, দুর্ব্যবহারকারী পুলিশ কর্মকর্তারা আছেন আতঙ্কে। রাজধানীর থানায় জিডি বা মামলা করতে গেলে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন তার জন্য থানাগুলোকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশের থানাগুলোতে জিডি বা মামলা করতে গেলে ঘুষ না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়Ñ এটা দীর্ঘদিনের অভিযোগ। দীর্ঘদিনের এই অভিযোগের প্রতিবারে এগিয়ে এসেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ৫০ থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত তদারকি করবে পুলিশের একটি স্বতন্ত্র সেল। এই সেলের দায়িত্বে থাকবেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতরের ক্রাইম সেলের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। কোন ঘটনায় থানায় জিডি বা মামলা হলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে বাদীর নম্বর ও মামলা-সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রীয় ওই সেলে পাঠাতে হবে। ডিএমপির সদর দফতর থেকে এ ধরনের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে থানাগুলোতে। থানায় মামলা-জিডি হলে পরবর্তী করণীয় কী হবে এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় মানুষজনের ভোগান্তি-হয়রানির অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজধানীর থানাগুলোতে কোন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন টাকা পয়সা লেনদেন হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়টি তদারক করবে ডিএমপি সদর দফতরের একটি টিম। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, প্রয়োজনে আমি ওসির চেয়ারে বসব। আমি নিজে মামলার বাদী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব। তদন্তের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেব। থানাকে অবশ্যই হয়রানিমুক্ত ও জনবান্ধব করতে হবে। প্রতিটি থানার পরিবেশ বদলাতে সম্ভাব্য সব কিছু করা হবে। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সব কিছু নজরদারি করবেন। থানায় বসে কেউ পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে- এটা চলতে দেয়া যাবে না। এরই মধ্যে থানার সেবার মান বাড়াতে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় এডিসি ও এসি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা থানায় বসবেন। তারা থানার সেবার মান বাড়ানো ও জনবান্ধব করতে সব ধরনের পরামর্শ দেবেন। ডিএমপি সূত্র জানায়, রাজধানীর ৫০ থানায় প্রতি মাসে গড়ে দুই সহস্রাধিক মামলা রুজু হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকায় মোট মামলা হয়েছে দুই হাজার ১৫৩টি, ফেব্রুয়ারিতে দুই হাজার ৪০টি, মার্চে দুই হাজার ৪৩৩টি, এপ্রিলে দুই হাজার ৫১৫টি, মে মাসে দুই হাজার ৬৩৭টি, জুনে ১ হাজার ৯৩৭টি। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা মামলার মধ্যে বেশির ভাগই মাদক-সংক্রান্ত বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি মিডিয়া মোঃ মাসুদুর রহমান বলেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলামের নির্দেশে রাজধানীর থানাগুলোতে জিডি বা মামলা করতে গেলে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন তার জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। একজন এডিসির নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। যারা প্রত্যেকটি থানায় প্রতিদিন যাচ্ছেন গোপনে। থানায় যারা মামলা বা জিডি করেন, তাদের জিজ্ঞাস করছেন আপনারা পুলিশকে টাকা দিয়েছেন কি? মামলা করতে গিয়ে কোন হয়রানির শিকার হয়েছেন ইত্যাদি। এমনকি জিডির বা মামলার কপিতে যে টেলিফোন নম্বর থাকে সেখানেও ডিএমপি হেডকোয়ার্টার থেকে টেলিফোনে খোঁজ নেয়া হয়। কোন ধরনের অসুবিধা হয়েছে কিনা। এটি তিনি নিজেও করেন বলে জানান ডিএমপি কমিশনার। প্রায় এক মাস আগে নতুন পুলিশ কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত কোন থানায় যাওয়া কোন লোকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। প্রতিদিনই ৬ সদস্যের মনিটরিং টিমের সঙ্গে বসেন ডিএমপি কমিশনার। তাদের কাছ থেকে থানার রিপোর্ট নেন। কতগুলো মামলা হয়েছে। জিডি হয়েছে। প্রতিদিনই রাজধানীর থানাগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন, উন্নত সেবার মান, জনবান্ধবের বিষয়গুলো খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
×