ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লীর বায়ু দূষণে অতিষ্ঠ টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২ নভেম্বর ২০১৯

 দিল্লীর বায়ু দূষণে অতিষ্ঠ টাইগাররা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বায়ু দূষণের নগরী ভারতের রাজধানী শহর দিল্লীর পরিবেশ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পড়েছে। এ বছর মার্চে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে খেলেছে একটি ওয়ানডে। দুই বছরের মধ্যে এটিই ছিল এ মাঠে একমাত্র আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তবে বছরের এ সময়টাতে (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) বায়ু দূষণের মাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি। সফরকারী বাংলাদেশ দলকে এখানেই প্রথম টি২০ ম্যাচ খেলতে হবে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে। বায়ু দূষণের কারণে গলা, মুখ জ্বালাপোড়া, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট, কাশি বমি ভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি প্রভাব দেখা দেয়। এ কারণে গত দু’দিন বাংলাদেশ দলের অনেক ক্রিকেটারই ‘মাস্ক’ পরে অনুশীলন করেছেন। বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো আশঙ্কা করছেন রাতে ফ্লাড লাইটের নিচে খেলা বিঘ্নিত হতে পারে অনেক ধোঁয়াটে পরিবেশ থাকার কারণে। এমন পরিস্থিতিতে রাতে ম্যাচ খেলা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে বাংলাদেশ দলের জন্য। ক্রিকেটারদের ওপরও পুরো সিরিজে এ বায়ু দূষণের প্রভাব থাকতে পারে। কিন্তু এতকিছুর পরও ভারতের টি২০ অধিনায়ক রোহিত শর্মা ম্যাচ হওয়া নিয়ে কোন আশঙ্কা দেখছেন না। আর ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলীও জানিয়েছেন ম্যাচ বাতিল বা সরিয়ে নেয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বুধবার রাত থেকেই দিল্লীতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এ দু’দিন ইতোমধ্যে প্রথম টি২০ ম্যাচের ভেন্যু ফিরোজ শাহ কোটলায় (অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম)। আর তা করতে গিয়ে বেশ বিপাকেই পড়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। অনেকে মুখে মুখোশ পরে অনুশীলন করেছেন বায়ু দূষণের বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে। লিটন কুমার দাস, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আল-আমিন হোসেনসহ কোচ ডোমিঙ্গো, স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরি মুখোশ পরেই অনুশীলনে ছিলেন। দিল্লীতে অনেক আগে থেকেই আশঙ্কাজনক মাত্রার বায়ু দূষণ রয়েছে। বায়ুর গুণগত মান নির্ণায়কের মাত্রা যেখানে ৬০ হলেই তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে, সেখানে গত দু’দিনে তা ৪০০ ছাড়িয়েছে। এমনকি বৃহস্পতিবার সরকারী হিসেবে এই মাত্রাটা ৪২৩ দেখা গেছে। অবশ্য এবার বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ আয়োজনের জন্য কয়েকদিন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রাইভেট গাড়িসমূহ চলাচল, নির্মাণ কর্মকা- ও কয়লাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু বুধবার স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে অন্তত ২৪,০০০ কৃষি খামারে আগুন জ্বলতে। আর এসবই মূল উৎস দিল্লীর বায়ু দূষণের। এছাড়া অক্টোবরে দিওয়ালি উৎসবের জন্য যে পরিমাণ বাজি পোড়ানো, আগুন জ্বালানো হয় তাতে করে কয়েক মাস ধরে এর প্রভাব মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। আর কয়েকদিনের জরিপে স্পষ্ট হয়ে গেছে তার মাত্রাটা কতখানি বেড়েছে। দূষণ নির্ণয়ের পিএম লেভেল এখন ২.৫ যা স্বাভাবিকের চেয়েও ৫ গুণ বেশি। এছাড়া বদরপুর তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র, বিপুল পরিমাণ যন্ত্রযানের চলাচল বায়ু দূষণের হার বাড়িয়েই চলেছে। আর এর মধ্যেই এবার ভারত সফর শুরু করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। দিওয়ালি উৎসব ও শীত পড়ার কারণে কুয়াশার প্রভাবে যে ধোঁয়াটে পরিবেশ তৈরি হয়েছে তাতে করে রাতে ম্যাচ স্বাভাবিকভাবে হওয়া নিয়েই শঙ্কা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কোচ ডোমিঙ্গো বলেন, ‘আমরা অভিযোগ করছি না, তবে জানি না কেমন হবে যখন লাইটের আলোয় খেলতে হবে। আসন্ন দিনগুলোর আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখছি আমরা, সেখানে ভাল সঙ্কেত পাওয়া যাচ্ছে।’ সর্বশেষ গত মার্চে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল একটি ওয়ানডে খেলেছে। ২০১৬ সালের পর সেটিই ছিল এ মাঠে প্রথম ওয়ানডে। আর ২০১৭ সালের নবেম্বরে এখানে সর্বশেষ টি২০ খেলেছে নিউজিল্যান্ড দল। একই বছর ডিসেম্বরে সফরকারী শ্রীলঙ্কা টেস্ট খেলেছিল। উভয় দলের অধিকাংশ ক্রিকেটার মাস্ক পরে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু সেই ম্যাচের তৃতীয়দিন ধোঁয়াটে পরিবেশের কারণে আলোর স্বল্পতায় ম্যাচ বন্ধ করতে হয়েছিল। মাঠেই বমি করে দিয়েছিলেন অলরাউন্ডার দনাঞ্জয়া ডি সিলভা। লাহিরু গামাগে ও সুরাঙ্গা লাকমাল বদহজমে ভুগেছিলেন এবং ড্রেসিং রুমে বমি করে দেন, কোচ নিক পোথাস জানিয়েছিলেন অনেকেই নানাবিধ সমস্যায় ভুগেছিলেন। বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরে বায়ু দূষণের মাত্রাটা ১০১-২০০ থাকে। আর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে তা ৩০১ থেকে ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে প্রায় ৫০০ পর্যন্ত পৌঁছে। এ কারণে শিকাগোর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে দিল্লীর মানুষের গড় আয়ু ৭ বছর কমে গেছে। তবে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশী ক্রিকেটারদেরও হতে পারে। আর এ ম্যাচ দিয়ে সিরিজ শুরু হওয়াতে পুরো সফরেই একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে যেতে পারে ক্রিকেটারদের ওপর। কিন্তু ডোমিঙ্গো বললেন, ‘আমরা জানি শেষবার শ্রীলঙ্কাও এই দূষণের সঙ্গে লড়েছে। বাংলাদেশের বায়ুও কিছুটা দূষিত। তাই খুব সমস্যা হওয়ার কথা না। ছেলেরা এটার সঙ্গে ভালভাবেই মানিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু আপনার গলা এবং চোখে যন্ত্রণা হওয়া ভাল কিছু নয়।’ এমন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে খেলা অসম্ভব বলেই মনে করেন সাবেক ভারতীয় ওপেনার ও দিল্লীর ভারতীয় জনতা পার্টির বিধায়ক গৌতম গম্ভীর। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসার আগে দিল্লীতে কোন ম্যাচ হওয়া উচিত।’ তবে এ সিরিজে ভারতের টি২০ অধিনায়কত্ব পাওয়া রোহিত শর্মা বললেন, ‘আমি জানি খেলাটা এখানে ৩ তারিখে হবে এবং আমরা ৩ তারিখেই তা খেলব।’ পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচীতে কোন পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন বিসিসিআই সভাপতি গাঙ্গুলীও। কারণ আর মাত্র একদিন বাকি মাঝে। তিনি বলেন, ‘এখন বিকল্প কিছু ভাবার সময় নেই। ম্যাচের ব্যাপারে অনেক ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়ে গেছে। টিকেটও বিক্রি হয়ে গেছে। শেষ মুহূর্তে দিল্লীতে ম্যাচ বাতিল করা সম্ভব নয়। দিল্লীর জেলা ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা এই ম্যাচটি চালিয়ে নিতে পুরোপুরি প্রস্তত।’
×