ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পক্স ভাইরাসের প্রকোপ

বগুড়ায় আক্রান্ত ৪ হাজার পশু

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ২ নভেম্বর ২০১৯

বগুড়ায় আক্রান্ত ৪ হাজার পশু

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ায় ব্যাপক আকারে গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বগুড়ায় এবারই প্রথম গবাদিপশুর শরীরে এই রোগ দেখা দেয়। নদী তীরবর্তী এলাকায় এই রোগের প্রকোপ বেশি। এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৪ হাজারের বেশি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে আক্রান্ত খামারের সংখ্যা ৫৯টি। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস বলছে, এটি নিয়ন্ত্রণে এবং প্রকোপ কমছে। দ্রুতই আরও কমে যাবে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে খামার পরিদর্শন, উঠোন বৈঠকসহ কৃষকের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়,লাম্পি স্কিন ডিজিজ এক ধরনের পক্স ভাইরাস। দেশে এটি নতুনভাবে আবির্ভূত । সংশ্লিষ্টরা বলছেন,অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে ইতোপূর্বে এ রোগ ছড়িয়েছিল। এই রোগে গরু বা মহিষের চামড়ার নিচে শরীরজুড়ে গুঁটি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বগুড়ায় লাম্পি স্কিন ডিজিজের প্রাদুর্ভব দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। খামার আক্রান্ত হলেও সাধারণ কৃষকের গবাদিপশুই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যানুযায়ী ১৬ আক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্ত গরুর সংখ্যা ৭৭৮টি। পরের সপ্তাহে তা বেড়ে যায়। সর্বশেষ তথ্যানুয়ায়ী জেলায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত গরুর সংখ্যা ৪ হাজার ১৭১টি। অনেক এলাকায় গবাদিপশুর মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয় বলে সূত্র জানায়। এটি মারত্মক আকার ধারণ করেছে নদী তীরবর্তী উপজেলাগুলোয়। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গবাদিপশু আক্রান্ত হয়েছে যমুনাতীরবর্তী উপজেলা সারিয়াকান্দীতে। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৩২। এর পরে রয়েছে ধুনট উপজেলায়। এই উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২৮টি গরু। এছাড়া সোনাতলা উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮৯, গাবতলিতে ৪৬৪,শিবগঞ্জে ৩৪৬ এবং বগুড়া সদরে ২০৫টি গরু। জেলার ৫ উপজেলায়ও লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত গবাদিপশু রয়েছে। ধুনট উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ভেটেরিনারি সার্জন মনিরুল ইসলাম জানান, তার এলাকায় আক্রান্ত গবাদিপশুর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। নতুন করে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রকোপ আগের মতোই রয়েছে, বাড়েনি আবার কমেও যায়নি। বগুড়া সদরের খামারি চাঁন মিয়া জানালেন, তার খামারে ২২টি গরু ছিল। অক্টোবরের প্রথমদিকে ২টি গুরু ওই রোগে আক্রান্ত হলে ভয়ে দ্রুত তিনি খামারের সব গুরু লোকসানে বিক্রি করে দেন। পরে এই রোগ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আক্রান্ত গরু ভাল হয়। এতে তিনি আবারও গরু কেনেন। তবে আবারও তার ৩টি গরু আক্রান্ত হয়। এগুলো ভাল হতে দেরি হচ্ছে। বগুড়া জেলা প্রাণিম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান,উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকলেও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জনের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন। দ্রুতই এর প্রকোপ কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করে জানান, বগুড়া এবারই প্রথম গাবদিপশু এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হলেও এ নিয়ে কৃষক ও খামারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত কোন গরুর মৃত্যু হয়নি। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার কমে যাবে। নদীতীরবর্তী এলাকায় এই রোগের প্রকোপ অন্য এলাকার তুলনায় বেশি হয় বলে তিনি জানান। রাজশাহী স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, হঠাৎ করে গবাদিপশুর খামারে হানা দিয়েছে ভাইরাস জনিত সংক্রামক ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ছে। জেলার ছয়টি উপজেলায় এ রোগ ছড়ালেও অবস্থা ভয়াবহ চারঘাট ও দুর্গাপুরে। এছাড়া পাশের নওগাঁ জেলার মান্দায় শতশত গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে খামারিদের মধ্যে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে খামারিদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগ। চারঘাট উপজেলার নিমপাড়ায় এক মাসে ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৩০০ গরু। এখন এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গাপুর, পুঠিয়া, বাঘা, বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলায়। এর মধ্যে এই ছয় উপজেলায় লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজারের বেশি গরু। এদিকে নওগাঁর মান্দায় লাম্পি স্কিন ডিজিজে শতশত গরু আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে মারা গেছে বেশ কিছু গরু। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর বলছে, লাম্পি স্কিন ডিজিজ একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। সময়মতো সঠিক চিকিৎসায় এ রোগে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে উঠবে। রাজশাহী প্রাণিসম্পদ দফতরের উপ-পরিচালক কল্যাণ কুমার ফৌজদার বলেন, এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠপর্যায়ে কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই আক্রান্ত এলাকাগুলোতে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে প্রাণিসম্পদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।
×