ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রামেক হাসপাতালে নারী দালালদের দৌরাত্ম্য

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ২ নভেম্বর ২০১৯

 রামেক হাসপাতালে নারী দালালদের দৌরাত্ম্য

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠছে দালালচক্র। তবে এ চক্রে যুক্ত হয়েছে নারীরা। এখন এই নারী দালালদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী-স্বজন ও কর্মরত চিকিৎসকরা। নারী দালালরা এখন শুধু হাসপাতালে রোগী-স্বজনদের জিম্মি করছে না, কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণ করার চেষ্টায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের দুইজন চিকিৎসক জানান, নারী দালালদের ভয়ে পুরো হাসপাতাল জুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক। শুধু রোগী বা তার স্বজনরাই না, অনেক চিকিৎসক এর প্রতিবাদ জানালে, চিকিৎসকদের চেম্বারে গিয়ে শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ তুলবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমার চেম্বারের সামনে এরা এমনভাবে ভিড় জমায় যে রোগীরা সহজে চেম্বারে প্রবেশ করতে পারে না। এটা নিয়ে একদিন কড়া কথা বলায় পুরুষ দালালদের ডেকে নিয়ে এসে মহিলা দালালরা আমাকে গালিগালাজ শুরু করে। এর প্রতিবাদ জানানো হলে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয়।’ ওই চিকিৎসক আরও জানান, চেম্বারে ঢুকে ওই নারী দালাল শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলবে বলেও হুমকি দেয়। এমন অভিযোগ হাসপাতালে কর্মরত অনেক চিকিৎসকরাই জানিয়েছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে তাদের ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না। এই অবস্থায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দালালরা। আর আগের চেয়ে এখন প্রকাশ্যে রোগী ও স্বজনদের মারধরের ঘটনাও ঘটছে। জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ আগে নওগাঁ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজনকে বহির্বিভাগ থেকে প্রকাশ্যে সবার সামনে বাইরে নিয়ে চড় মারতে থাকে এক নারী দালাল। পরে লোকজন এগিয়ে এলে দালাল পালিয়ে যায়। রবিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহীসহ দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা অসহায় রোগীরা এই নারী দালালদের কথা না শুনলে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিনই অনেক নারী রোগী-স্বজনদের ব্যাগে থাকা মোবাইল-টাকা পয়সা চুরি হচ্ছে। অনেকে সব হারিয়ে চিকিৎসা না নিয়ে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তার উপরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে এই দালালরা। দালালদের দৌরাত্ম্যে নীরব ভূমিকা পালন করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের সামনেই চলছে এই সব কার্যক্রম। আনসার সদস্যরা বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দালাল সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা নারী রোগী ও তাদের স্বজনদের লক্ষ্মীপুরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়াই তাদের প্রধান কাজ। বর্তমানে রামেক হাসপাতাল ও এর আশেপাশে নারী দালালের সংখ্যা ১০০শ’র বেশিতে ঠেকেছে। সবাই শতকরা ৫০ শতাংশ কমিশনে কাজ করে। সূত্র মতে, রামেক হাসপাতালকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুর ও ঘোষপাড়া মোড়সহ আশপাশের দুই শতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে ১০-১২টি ছাড়া সবগুলোই এখন দালাল নির্ভর। সেসব প্রতিষ্ঠানে রোগী আনতেই রামেক হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে আড়াই শতাধিক দালাল কাজ করে। এর মাঝে নারী দালাল শতাধিক।
×