ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-বরিশাল রুটে নৌ চলাচল ব্যাহত

প্রকাশিত: ০৮:০৭, ২ নভেম্বর ২০১৯

ঢাকা-বরিশাল রুটে নৌ চলাচল ব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে নাব্য সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে একটি চ্যানেল। বিকল্প চ্যানেল হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোকে। তারমধ্যে বরিশাল নৌবন্দর সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে পলি জমে নাব্য সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গত কয়েকদিন থেকে প্রায় প্রতিদিন রাতেই আটকে যাচ্ছে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ। নির্ধারিত সময়ের দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিলম্বে ঘাট ত্যাগ করতে হচ্ছে বিলাসবহুল লঞ্চগুলো। এমন পরিস্থিতিতে জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো। বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা (যুগ্ম পরিচালক) আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, খুব শীঘ্রই ঢাকা-বরিশাল নৌরুট নিরাপদ করে তুলতে চ্যানেলগুলোতে ড্রেজিং কার্যক্রমের মাধ্যমে নাব্য সঙ্কট দূর করা হবে। জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চবাসীর রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নৌপথ। রাত্রীকালীন নৌভ্রমণ আরামদায়ক বিধায় নৌরুটের বিলাসবহুল লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের পদচারণাও বেশি। কিন্তু চলতি মৌসুমে নাব্য সঙ্কটের কারণে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঢাকা-বরিশাল নৌপথ। এমনকি নাব্য সঙ্কটের কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সহজ ও নিরাপদ নৌরুটগুলো। ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বিলাসবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চ সার্ভিস এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চের মাস্টার আলমগীর হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে বরিশাল নদী বন্দর থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয়টি পয়েন্ট নাব্য সঙ্কটের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব পয়েন্ট হয়ে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করতে গিয়ে কখনও কখনও দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নাব্য সঙ্কটের কারণে ইতোমধ্যে মিয়ারচর চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে গেছে। গত দুই মাস ধরে ওই চ্যানেল হয়ে লঞ্চ চলাচল করতে পারছেনা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সম্প্রতি সময়ে মিয়ারচর চ্যানেলের প্রবেশ মুখে একটি বাল্কহেড ডুবে যায়। সেটি উদ্ধার না করায় চ্যানেলটির বিভিন্ন পয়েন্টে পলি মাটি জমে নদীর গভীরতা কমে গেছে। এ কারণে বিকল্প চ্যানেল মেঘনার উলানিয়া-কালিগঞ্জ হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে করে গন্তব্যে পৌঁছতে দুই ঘণ্টা সময় বেশি লাগার পাশাপাশি কমপক্ষে তিন ব্যারেল (ছয়শ’ লিটার) তেল বেশি লাগে। বর্তমানে বিকল্প ওই চ্যানেলটিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এক সময়ের উত্তাল ওই চ্যানেলটির প্রায় একশ’ মিটার এলাকাজুড়ে জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ দুই মিটার পানি থাকছে। অথচ যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো চলাচলের সময় তলদেশ অন্তত দুই মিটার পানিতে ডুবে থাকে। এ কারণে ওই চ্যানেলে মাটি ঘেঁষে লঞ্চ চলাচল করতে হয়। তারমধ্যে ওই চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচরে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে থাকায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও রয়েছে। এ চ্যানেলটিও বন্ধ হয়ে গেলে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের লঞ্চগুলোকে চলাচল করতে হবে ভোলার ইলিশা হয়ে। এতে করে গন্তব্যে পৌঁছতে আরও এক ঘণ্টা সময় বেশি লাগবে। বেড়ে যাবে জ্বালানি খরচও। অপরদিকে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বাউশিয়া-নলবুনিয়া চ্যানেলে ইতিপূর্বে ৭-৯ মিটার পর্যন্ত পানি থাকতো। বর্তমানে ওই চ্যানেলে জোয়ারের সময় দুই থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত পানি থাকছে। আর ভাটার সময় থাকে মাত্র এক মিটার পানি। যে কারণে ভাটার সময় বড় নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। বাকিটা পলি মাটি জমে নদীর গভীরতা কমে গেছে। একই অবস্থা বরিশাল শহরের উপকণ্ঠ শায়েস্তাবাদের কীর্তনখোলা ও আড়িয়াল খাঁসহ তিন নদীর মোহনায়। সেখানে পলিমাটি জমে চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিন নদীর ওই মোহনায় ভাটার সময় চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই নৌযানগুলো আটকে যাচ্ছে। ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বিলাসবহুল এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের মাস্টার মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বর্তমানে বরিশাল লঞ্চঘাটেও নাব্য সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে প্রায় প্রতিরাতেই যাত্রীবাহী লঞ্চ ঘাটে আটকে যাচ্ছে। জোয়ারের অপেক্ষায় অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ২৬ অক্টোবর রাতে এক সঙ্গে দুটি লঞ্চ এমভি কীর্তনখোলা-১০ ও এ্যাডভেঞ্চার-৯ বরিশাল নৌবন্দরে আটকে যায়। যে কারণে রাত নয়টায় লঞ্চ ছাড়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। রাত ১০টার পরে জোয়ার আসলে একে একে দুটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। তাছাড়া ২৭ অক্টোবর রাতে আটকে যায় এমভি মানামী লঞ্চ।
×