ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুশাসনের জন্য শুদ্ধি অভিযান চলমান রাখতে হবে ॥ ইনু

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১ নভেম্বর ২০১৯

 সুশাসনের জন্য শুদ্ধি  অভিযান চলমান  রাখতে হবে ॥ ইনু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ-অশান্তির রাজনীতিকে দমন-মোকাবেলা-কোণঠাসা করে শান্তি-স্থিতিশীলতা-উন্নয়ন-অগ্রগতি-সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে বাংলাদেশ আজ রাজনীতির এক নতুন পর্বে উপনীত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এ কথা বলেন। সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন পর্বে রাজনীতির চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুর্নীতি দমন, সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। দুর্নীতিবাজ, লুটেরারা ইঁদুর-উঁইপোকার মতো উন্নয়নের সাফল্য, রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পদ এবং জনগণের হক যেন খেয়ে ফেলতে না পারে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জানানো হয় সারাদেশের সব জেলা উপজেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে দলের কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী পালন করেন নেতাকর্মীরা। আলোচনা সভায় ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। এদিকে জাসদ বর ও আম্বিয়ার পক্ষ থেকে সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনসহ জাতীয় প্রেসক্লাবে পৃথক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা দুর্নীতি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ওপর বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ভর করছে। যে কোন মূল্যে জাতীয় বদনাম থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলে বিশ^বাসীর কাছে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। আলোচনাসভায় অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন খান বাদশা, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এম এ করিম, দৈনিক সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, সাবেক সচিব হাবিবুল্লাহ মজুমদার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ (অব), সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ও পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশিষ বিশ্বাস সাধন প্রমুখ। সুশাসন ও আইনের শাসনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতিবাজ লুটেরা, অসৎ রাজনীতিক ও দুর্নীতিবাজ অফিসারদের ‘অপরাধী সিন্ডিকেট’ মন্তব্য করে সাবেক তথ্য মন্ত্রী ইনু বলেন, এই অপরাধী সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে ত্রিমুখী অভিযান পরিচালনা করতে হবে। নতুন পর্বের রাজনীতিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠাকেই জাসদ প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য বলে গ্রহণ করেছে। জাসদের ‘সুশাসনের জন্য আন্দোলন’ ও শেখ হাসিনার ‘শুদ্ধি অভিযান’ একে অপরের পরিপূরক। ইনু বলেন, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় যেমন রাজনৈতিক ঐক্য জরুরী ছিল ঠিক তেমনই সুশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও শুদ্ধি অভিযানের পক্ষেও রাজনৈতিক ঐক্য অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযান শুধুমাত্র তারা একার অভিযান নয়, এ শুদ্ধি অভিযান সব দেশপ্রেমিক-গণতান্ত্রিক শক্তি ব্যক্তি ও মহলের জাতীয় কর্তব্য। তিনি বলেন, শুদ্ধি অভিযান প্রমাণ করেছে দুর্নীতিবাজ-লুটেরা-অপরাধীরা যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন, তাদের গায়ে যে দলেরই জার্সি থাকুক না কেন তারা কেউই ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়। ইনু বলেন, যে সব অপরাধী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না তাদের দমন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারসহ সব গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিককে সুশাসনের জন্য রাজনৈতিক চুক্তিতে উপনীত হতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার অগ্নি পরীক্ষায় ফেল করার কোন সুযোগ নাই। এ সময় ইনুসহ নেতাকর্মীরা স্লোগানে বলেন, ‘সুশাসনের বিকল্প নাই দুর্নীতির অবসান চাই’, ‘সুশাসনের চুক্তি চাই-দুর্নীতির অবসান চাই’, ‘সুশাসনের পথ ধর সমাজতন্ত্রের লড়াই কর’, ‘রাখতে হবে চলমান শুদ্ধি অভিযান’, ‘রাখতে হবে চলমান দুর্নীতি দমন অভিযান’, ‘দুর্নীতিবাজদের ঠিকানা জেলখানা জেলখানা’। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে ইনু বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে মাথার তাজ বানিয়ে রেখে শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযানের সমালোচনা করা বিএনপির নেতাদের মুখে শোভা পায় না। জাসদ নামে যারা বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক পার্টনারশিপ করে বা বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলে তারা আর যাই হোক জাসদ না। তিনি বলেন, জাসদের কর্মীরাই সব ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন-বিভ্রান্তি মোকাবেলা করে জাসদকে ধারণ করে আছেন। প্রমাণ হয়েছে, জাসদ নেতাদের দল না, কর্মীদের দল। কর্মীরাই জাসদের মালিক। নেতারা ভুল করলেও কর্মীরা কখনই ভুল করে না। নেতারা দল ছেড়ে চলে গেলেও কর্মীরা দল ধরে রাখে। হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও পুনর্মিলনীতে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, মীর হোসাইন আখতার, নুরুল আখতার ও নাদের চৌধুরী প্রমুখ। দেশের মধ্যে বৈষম্য বিরাজ করছে ॥ মেনন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে। কিন্তু মানুষগুলো অনেক পিছিয়ে। দেশের মধ্যে বৈষম্য বিরাজ করছে। এটি কোনভাবেই কাটছে না। এই বৈষম্য দূর করতে জাসদ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাসদের অপর অংশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন মেনন। মেনন বলেন, টেবিলে বসে ঐক্য হবে না। ঐক্য করতে গেলে মাঠে নামতে হবে। সহিংসতা, যৌন হয়রানি, মানসিক নির্যাতন, নারী নির্যাতন, সম্প্রদায়িক বিরোধ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করতে হবে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ নুরুল আম্বিয়া। অংশ নেন সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবু সাঈদ খান, পংকজ ভট্টাচার্য, ড. মুশতাক হোসেন, দিলীপ বড়ুয়া, ইসমাইল হোসেন, করিম শিকদার, নাজমুল হক প্রধান, মোহাম্মদ খালেদসহ ১৪ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা দুর্বল হলেও শেষ হয়ে যায়নি। তারা আন্তর্জাতিক চক্রের সহযোগিতায় চক্রান্ত চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
×