ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিসির কড়া নজরদারিতে সাকিব

প্রকাশিত: ১১:৫২, ৩১ অক্টোবর ২০১৯

 আইসিসির কড়া নজরদারিতে সাকিব

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা, তবে শর্তসাপেক্ষে এক বছর পার হতেই খেলতে পারবেন সাকিব আল হাসান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) আনীত ৩টি অভিযোগ স্বীকার করে নেয়া এবং তদন্তে সার্বিক সহযোগিতার জন্য ১ বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞার বিশেষ সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশের এই সেরা ক্রিকেটার। তবে আগামী বছর ২৯ অক্টোবর আসতে এখনও অনেক দেরি। এর মধ্যে সাকিব কোন ধরনের ক্রিকেট খেলার সুযোগ না পেলেও পুনরায় যদি জুয়াড়িদের কাছ থেকে এমন কোন প্রস্তাবনা পেয়ে যান, সেক্ষেত্রে তা গোপন করলেই আরেক বছরের জন্য শাস্তি কার্যকর হবে। তাই আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিটের কড়া নজরদারিতে থাকবেন তিনি। সতর্ক থাকতে হবে সাকিবকে। এই এক বছরে সাকিব বাংলাদেশের হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ম্যাচেই অংশ নিতে পারবেন না। তবে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়লেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মঙ্গলবার রাতেই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এবং একাডেমিতে অনুশীলনের সব সুযোগ-সুবিধাই পাবেন সাকিব। তবে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় নিয়ম অনুসারে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়বেন তিনি এবং বেতনভাতাও পাবেন না। ২০১৩ সালের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দোষ স্বীকার করে মোহাম্মদ আশরাফুল ৫ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন। ৩ বছরের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটসহ কোন ধরনের ক্রিকেটে অংশ নিতে পারেননি তিনি। সেই সময় আশরাফুলকে এমনকি ফিটনেস ধরে রাখার জন্য কোন সুযোগ-সুবিধা দেয়নি বিসিবি। মিরপুর একাডেমির জিমনেসিয়াম ব্যবহার করতে পারেননি, মাঠে অনুশীলন করতে পারেননি। তবে আশরাফুল অপরাধ করেই ফেলেছিলেন। সাকিবের বিষয়টি ভিন্ন, তিনি জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু তা গ্রহণ করেননি। তবে নিয়মমাফিক বিসিবি কিংবা আইসিসির কাছে বিষয়টি গোপন করে গেছেন। আইসিসির ২.৪.৪ ধারা মোতাবেক তা শাস্তিযোগ্য বলেই নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন সাকিব। ১ বছর সবধরনের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হবে তাকে। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে আইসিসি সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার পর রাতে সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আমরা তাকে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দেব এবং যে কোন সহযোগিতার জন্য বিসিবি সাকিবের পাশে থাকবে।’ টানা এক বছর খেলার মধ্যে না থাকলেও নিশ্চিতভাবেই যে কোন খেলোয়াড়ের জন্য ফিটনেস ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে সাকিব বিসিবির মাঠ, জিমনেসিয়াম, ইনডোরের সুযোগ-সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে পারবেন। এ বিষয়ে বিসিবির এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আশরাফুল এবং সাকিবের ঘটনা পুরোপুরি আলাদা। আশরাফুল ফিক্সিং করে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। সাকিব নিষিদ্ধ হয়েছেন ফিক্সিং প্রস্তাবের কথা না জানিয়ে। সবকিছু বিবেচনা করে সাকিবকে সবধরনের লজিস্টিক সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি।’ কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি বাতিল হবে সাকিবের। এ বিষয়ে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেছেন, ‘নিয়ম তো তাই জানাচ্ছে যে, সাকিবের সঙ্গে বিসিবির চুক্তিটা আর থাকছে না।’ তবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেছেন, ‘এটা অবশ্যই বাতিল হওয়ার কথা। যে নিয়ম আছে সেই অনুযায়ী এটা ২৯ অক্টোবর (মঙ্গলবার) থেকেই বাতিল হওয়ার কথা। তবে বোর্ড এখনও এ বিষয়ে যেহেতু কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি।’ পরের বছর ক্রিকেটে ফিরতে হলে প্রথম কাজটা করার জন্য বিসিবির কাছ থেকেই সহায়তা পাবেন সাকিব। তবে আরেকটি বড় কাজ হচ্ছে সাবধানতা অবলম্বন। ২০০৮ সালেও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও তার পেছনে লেগেছিলেন জুয়াড়িরা। তখন সবেমাত্র আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে যাত্রা শুরু সাকিবের। তিনি সেই প্রস্তাবের কথা বিসিবিকে তৎক্ষণাৎ জানিয়ে ঝামেলামুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে পাওয়া ৩টি প্রস্তাবের কথাই চেপে গিয়ে ফেঁসে গেলেন তিনি। এখন সতর্ক থাকতে হবে একই ধরনের ঝামেলায় এই ১ বছর না জড়িয়ে, আইসিসির নিদের্শনা মোতাবেক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানে অংশ নিতে হবে তাকে। তরুণ ক্রিকেটারদের শিক্ষাদান কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সচেতন করতে হবে। এই এক বছরে তাকে সবচেয়ে বড় যে ইভেন্টে দর্শক হয়ে থাকতে হবে সেটি হচ্ছে আগামী বছরের টি২০ বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আগামী বছর ১৮ অক্টোবর থেকে ১৫ নবেম্বর এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। ২৯ অক্টোবর আসরের মাঝপথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার সুযোগ থাকবে সাকিবের। কিন্তু খেলার সুযোগ পাবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। এছাড়া আগামী বছর এশিয়া কাপও খেলা হবে না তার। এছাড়া সাকিব আগামী মাস থেকে বাংলাদেশ দলের শুরু হওয়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে থাকা হবে না। বাংলাদেশ দলের ঐতিহাসিক প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট ম্যাচও খেলা থেকে বঞ্চিত হবেন তিনি। এফটিপি অনুযায়ী টি২০ বিশ্বকাপ ছাড়াও সাকিব ১৩ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে এবং ২০ টি২০ মিস করবেন। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ দল আগামী ফেব্রুয়ারিতে আতিথেয়তা দেবে অস্ট্রেলিয়াকে (যদিও তা পিছিয়ে গেছে জুনে)। স্মিথ ও ওয়ার্নাররা ২টি টেস্ট খেলবে। মার্চে জিম্বাবুইয়ে আসবে দেশে। এক টেস্টের পর দুই দল খেলবে ৫ টি২০। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে ২০২০ সালের ১৮ থেকে ২১ মার্চের মধ্যে অলস্টার এশিয়া ও বিশ্ব একাদশ ২টি টি২০ খেলবে বাংলাদেশের মাটিতে। বিশেষ এই আয়োজনটাতেও দর্শক হয়ে থাকতে হবে সাকিবকে। এরপর আয়ারল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ একটি টেস্টের পর ৩টি করে ওয়ানডে ও টি২০ খেলবে। জুলাইয়ে বাংলাদেশের সফর শ্রীলঙ্কায়। সেখানে শুধু হবে ৩ টেস্ট। আগস্টে বাংলাদেশ ২ টেস্ট খেলবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে। সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ টি২০ এবং নিউজিল্যান্ডে ঝটিকা সফরে ৩ টি২০ আছে বাংলাদেশের, সেখানেও খেলা হবে না সাকিবের। এর বাইরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ, এবার বিশেষ আসর বঙ্গবন্ধু বিপিএলসহ আরও কয়েকটি দেশ-বিদেশের বড় বড় ঘরোয়া আসরে খেলা হবে না সাকিবের।
×