ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে তৃতীয় আসরের শিরোপা নির্ধারণী দ্বৈরথ মাঠে গড়াবে আজ সন্ধ্যা ৬টায়, ট্রফি ছাড়া অন্য কোন ভাবনা নেই দু’দলেরই

ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনীর সামনে টেরেঙ্গানু

প্রকাশিত: ১১:৫০, ৩১ অক্টোবর ২০১৯

 ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনীর সামনে টেরেঙ্গানু

জাহিদুল আলম জয়, চট্টগ্রাম থেকে ॥ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে দু’দলই বলেছিল, ‘আমাদের লক্ষ্য শিরোপা জয়’। বুধবার এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনেও অভিন্ন লক্ষ্যের কথা জানিয়েছে দল দু’টি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। শেষ হাসিটা হাসার দৃঢ় প্রত্যয় সবার মাঝে। এমন যুদ্ধংদেহী অবস্থার মধ্যে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলের তৃতীয় আসরের ফাইনাল ম্যাচ মাঠে গড়াতে যাচ্ছে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে আয়োজক চট্টগ্রাম আবাহনী ও মালয়েশিয়ান ক্লাব টেরেঙ্গানু এফসি। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে বহু কাক্সিক্ষত ফাইনাল মহারণ মাঠে গড়াবে আজ সন্ধ্যা ৬টায়। পারফর্মেন্সের বিচারে টুর্নামেন্টের সেরা দু’টি দলই ফাইনাল মঞ্চে উঠে এসেছে। চট্টগ্রাম আবাহনী ‘এ’ গ্রুপ ও টেরেঙ্গানু এফসি ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়। শেষ পর্যন্ত দু’টি দলই সেমিফাইনালের বাধা টপকে ট্রফির লড়াইয়ে জায়গা করে নিয়েছে। দুই দলেরই কোচ ও অধিনায়ক প্রতিপক্ষকে সমীহ করছেন। তবে নিজেদের সেরাটা দিয়ে জিততে চান স্বপ্নের ট্রফি। ফাইনাল ম্যাচ উপলক্ষে উৎসবের ঢেউ চলছে বন্দরনগরীতে। দর্শকদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। চট্টলার দর্শকরা আশা করছেন তাদের প্রিয় দলই শিরোপা পুনরুদ্ধার করবে। ফাইনাল মহারণের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলের তৃতীয় আসরের। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম আসরে ভারতের ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বন্দরনগরীর জায়ান্টরা। দুই বছর পরপর হওয়া এই আসরের দ্বিতীয় সংস্করণ হয় ২০১৭ সালে। সেবার আর ট্রফি ধরে রাখতে পারেনি আয়োজকরা। দক্ষিণ কোরিয়ান ক্লাব এফসি পোচেয়নকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস ক্লাব। এবার তৃতীয় আসরে আবারও ফাইনালে উঠে এসেছে স্বাগতিক দল। এখন দলটির একমাত্র লক্ষ্য হারানো মুকুট পুনরুদ্ধার করা। অনেকটা ভাড়ালে দল হলেও পুরো টুর্নামেন্টে দাপুটে ফুটবল খেলেই ফাইনাল মঞ্চে নাম লিখিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে কোচ মারুফুল হকের দল উড়িয়ে দেয় টিসি স্পোর্টস ও ইয়ং এলিফ্যান্টকে। শেষ গ্রুপ ম্যাচে মোহনবাগানের কাছে হারলেও সেদিন সেরা একাদশের ছয়জনকে বাইরে রেখেছেন স্বাগতিক কোচ। সেমিফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ভারতীয় ক্লাব গোকুলাম কেরালাকে অতিরিক্ত সময়ের গোলে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কেটেছে প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নরা। ফাইনাল মঞ্চে ওঠার পর এখন চট্টগ্রাম আবাহনীর ধ্যান-জ্ঞান শুধুই ট্রফি নিয়ে। দলটির কোচ মারুফুল হক বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, আমাদের লক্ষ্য ট্রফি পুনরুদ্ধার করা। এখন সেই মিশনের শেষ ধাপে পৌঁছে গেছি। আমরা জানি প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা, দুর্বলতা সম্পর্কে। আমরা আমাদের সেরাটা দিতে পারলে কাজটা কঠিন হবে না। আশা করছি শিরোপা জয় করেই মিশন শেষ করতে পারব’। কোচের মতো আবাহনীর অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়াও ভাড়াটে। তবে তাতে ভালবাসা ও আবেগ বিন্দুমাত্র কমেনি। জাতীয় দলের তারকা এই মিডফিল্ডারও ট্রফি ছাড়া কিছুই ভাবছেন না, ‘সবাই জানেন চট্টগ্রাম আবাহনীর লক্ষ্য কি। আমরা শুরু থেকে বিষয়টা মাথায় নিয়ে খেলছি। আমরা যে কোন মূল্যে শিরোপা জিততে চাই। তবে টেরেঙ্গানু খুব ভাল দল। ওদের হারাতে হলে আমাদের সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে। আমার বিশ্বাস আমাদের দলের সেই সামর্থ্য আছে।’ স্বাগতিকদের চেয়ে বরং দু’টি ক্ষেত্রে এগিয়ে টেরেঙ্গানু। এখন পর্যন্ত তারা কোন ম্যাচ হারেনি অর্থাৎ অপরাজিত আছে। যে কারণে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ আছে অধিনায়ক লি টাকের দলের। এছাড়া গ্রুপপর্ব ও সেমিফাইনালে আবাহনীর চেয়ে গোলও বেশি করেছে মালয়েশিয়ান ক্লাবটি। তবে গোল যেমন তারা বেশি করেছে তেমনি হজমও করেছে অনেকগুলো। ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে চেন্নাই সিটিকে ৫-৩ গোলে হারানোর পর দ্বিতীয় খেলায় গোকুলামের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। এরপর শেষ গ্রুপ ম্যাচে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসকে উড়িয়ে দেয় ৪-২ গোলে। গ্রুপসেরা হয়ে সেমিফাইনালে উঠে সেখানেও একই ব্যবধানে জয় পায় কোচ নাফুজি বিন জাইনের দল। এবার টেরেঙ্গানুর তেলেসমাতিতে বিদায়ঘণ্টা বাজে আরেক ভারতীয় ক্লাব মোহনবাগান এ্যাথলেটিক ক্লাবের। একে একে জায়ান্টদের হারানো মালয়েশিয়ান ক্লাবটির এবারের চ্যালেঞ্জ চট্টগ্রাম আবাহনী। প্রথমবার টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েই শিরোপার সুবাস পাচ্ছে দলটি। জিততে পারলে দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো ট্রফি জয়ের রেকর্ড গড়বে টেরেঙ্গানু। এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে নারাজ দলটির কোচ নাফুজি বিন জাইন, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই এখানে এসেছি। ছেলেরা শুরু থেকে ভাল খেলে ফাইনালে উঠে এসেছে। চট্টগ্রাম আবাহনী অনেক শক্তিশালী দল। গ্যালারিভর্তি দর্শকের সমর্থনও তারা পাবে। কিন্তু তাদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সামর্থ্য আমার দলের আছে।’ প্রায় অভিন্ন বক্তব্য টেরেঙ্গানু অধিনায়ক লি টাকের, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, বাংলাদেশে আরেকবার চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। সেই সুযোগ এসেছে। সবাই সুযোগটা কাজে লাগাতে মুখিয়ে আছে’।
×