ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে পানির ব্যবহার ॥ নামছে স্তর

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ৩১ অক্টোবর ২০১৯

বাড়ছে পানির ব্যবহার ॥  নামছে স্তর

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ দেশে পাতালের (ভূতল বা ভূগর্ভস্থ) পানি ব্যবহার বেড়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। অপরিকল্পিতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলনের ফলে পাতালের পানি আশঙ্কাজনক হারে নিচে নামছে। চাপ পড়েছে ভূ-অভ্যন্তরে। স্বাভাবিক থাকছে না ভূগর্ভের কাঠামো। চাষাবাদে ব্যবহৃত সেচের পানির ৮০ শতাংশ ভূগর্ভের। সুপেয় (খাওয়ার) পানির পুরোটাই (বা শতভাগ) মেটাতে হয় পাতালের উৎস থেকে। পাতালের পানি অপচয় রোধে সেচ যন্ত্র স্থাপনে ‘সমন্বিত ক্ষুদ্র সেচ নীতিমালা’ অনুমোদন পেয়েছে। আরেকদিকে ভূ-উপরিস্থ পানি (সারফেস ওয়াটার) ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে নীতিমালা ও সারফেস ওয়াটার ব্যবহার বিধি বাস্তবায়নে ভাটা পড়েছে। বর্তমানে গোসল ও গৃহস্থালি কাজেও পাতালের পানির ব্যবহার বেড়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলা রুক্ষ মাটির অঞ্চলে পরিণত। জেলাগুলো বরেন্দ্র অঞ্চলের আওতায় এসেছে। শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদের সেচে গভীর ও অগভীর নলকূপে পানি উত্তোলন বেড়ে যায়। উত্তোলিত হয় পাতাল থেকে। বোরো আবাদ সম্পূর্ণ সেচ নির্ভর। খাদ্য চাহিদা মেটাতে দেশে বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ব্রি) উদ্ভাবিত মৌসুমভিত্তিক নানা জাতের ধান চাষ হচ্ছে। কোন চাষে শুকনো মৌসুমের পরও সেচ প্রয়োজন হয়। কখনও বৃষ্টিনির্ভর আমন আবাদ খরায় পড়লে কৃষককে সেচ যন্ত্র নামাতে হয় মাঠে। এভাবে পাতালের পানির ব্যবহার নিত্য বছর বাড়ছে। গভীর ও অগভীর কোন টিউবওয়েলই দূরত্বের নিয়ম মেনে বসানো হয়নি। ফলে পাতালের পানি স্তর নামতে থাকে। প্রতি বছর বৃষ্টিতে যে পরিমাণ রিচার্জ (পুনর্ভরণ) হয় তা যথেষ্ট নয়। দেশে বর্তমানে অন্তত ৬০ লাখ গভীর, অগভীর ও অন্যান্য নলকূপ ব্যবহার হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে পাতালের পানির স্তর নিচে নেমে গেলে অন্তত ৬ লাখ নলকূপ অকেজো থাকে। শ্যালো ইঞ্জিন মাটি খুঁড়ে ৫ থেকে ৭ ফুট নিচে নামাতে হয়। সত্তরের দশকের মধ্যভাগে গভীর নলকূপের পানি ৫০ ফুট (প্রায় ১৭ মিটার) নিচে মিলত। বর্তমানে গভীর নলকূপের পানি পেতে এলাকাভেদে পাতালের দেড় শ’ থেকে ২শ’ ফুট (৫০ থেকে ৭০ মিটার) নিচে ড্রিলিং করতে হয়। অগভীর নলকূপের পাইপ আগের চেয়ে নিচে নামাতে হচ্ছে। মৌসুমি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানির যে রিচার্জ হচ্ছে তা পাতালের পানি উত্তোলনের চেয়ে কম। শুষ্ক মৌসুমে গ্রামে সুপেয় পানির জন্য হস্তচালিত টিউবওয়েলের পাইপ নিচে নামাতে হচ্ছে। শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ বাড়িতে সুপেয় পানির জন্য ব্যবহার হচ্ছে সাব-মার্জিবল পাম্প। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সূত্র জানায়, শুকনো মৌসুমের আবাদে সেচের ৮০ শতাংশ পানি সংগ্রহ করা হয় পাতালের উৎস থেকে। বাকি ২০ শতাংশ পানি মেলে ভূ-উপরিস্থ (সারফেস) থেকে। বিএডিসির গ্রাউন্ড ওয়াটার জোনিং ম্যাপ অনুযায়ী দেশের ৩৬ জেলার পাতালের পানির স্তর প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নিচে নেমে যাচ্ছে। যার মধ্যে উত্তরাঞ্চলের জেলা বেশি। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকা বিস্তৃত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাতালের পানির স্তর নিত্য বছর ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। একজন পানি বিশেষজ্ঞ জানান, কৃষিতে যন্ত্রশৈলী প্রবেশের পর থেকে আজ পর্যন্ত পাতালের পানি ব্যবহার কয়েক শ’ গুণ বেড়েছে। এই ব্যবহার আর সীমিত করা যায়নি। সমন্বিত ক্ষুদ্র সেচ নীতিমালার যে খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে তাতে বলা হয়, পাতালের পানির ব্যবহার এবং সেচ কার্যক্রম তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সেচ কমিটি থাকবে। ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১৬ জনের কমিটি এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১৬ জনের কমিটি গঠিত হয়েছে। পাতালের পানির চাপ কমাতে ভূ-উপরিস্থ (সারফেস) পানির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
×