ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদত্যাগ করলেন হারিরি

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ৩১ অক্টোবর ২০১৯

 পদত্যাগ করলেন হারিরি

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি পদত্যাগ করেছেন। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে গিয়ে মিশেল আউনের কাছে মঙ্গলবার রাতে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। হারিরি বলেন, দেশে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দেশের রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশ রক্ষা করা। লেবাননের আইন অনুযায়ী নতুন সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান মন্ত্রিসভাই দেশ পরিচালনা করবে। প্রতিবাদকারীরা একে দীর্ঘ সংগ্রামের প্রাথমিক জয় হিসেবে দেখছে। আলজাজিরা। সরকার পতনের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা এদিন দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির পদত্যাগ উদ্যাপন করে। যদিও অধিকাংশ লোকই বলেছেন দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে এটি কেবল প্রাথমিক বিজয় ছিল। ২১ বছর বয়সী পিয়েরে মৌজান্নার জানিয়েছেন, ‘এটি প্রথম ভাল একটি পদক্ষেপ তবে আমরা এখনও রাস্তায় থাকব। হারিরি এই সমস্যাগুলোর অংশ তবে তিনিই সব সমস্যা নন। আমি মনে করি না যে, কেউ ভাবছে আমরা বিক্ষোভ শেষ করেছি।’ রাজধানীর বহু বিক্ষোভকারীদের জন্য হিজবুল্লাহ ও আমাল আন্দোলন দলের সমর্থকরা রাস্তায় বিক্ষোভের একদিন পরেই প্রায় দু’সপ্তাহের প্রতিবাদ আন্দোলনে হারিরির পদত্যাগ গুরুত্বপূর্ণ উৎসাহ ছিল। হারিরির টেলিভিশনে পদত্যাগের ভাষণের আগে কয়েক শ’ মানুষ বেশিরভাগ কালো পোশাক পরে বিক্ষোভকারীদের মারধর করে এবং বৈরুতের কেন্দ্রস্থলের বিক্ষোভ শিবিরগুলো ধ্বংস করে দেয়। প্রতিবাদকারীদের একজন বলেন, ‘হারিরি সেই ব্যক্তি নন যিনি আমাদের লোকদের মারধর করতে এবং আমাদের যা আছে তা ধ্বংস করার জন্য তার লোক পাঠাচ্ছেন। এখনও সময় রয়েছে এবং আমরা এখানে যা শুরু করেছি তা শেষ করা দরকার।’ অর্থনৈতিক সমস্যা নিরসনসহ নানা দাবিতে গত ১৩ দিন ধরে লেবাননে বিক্ষোভ চলছে। তবে সাদ হারিরির পদত্যাগের ফলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করেন না দেশটির সংসদ স্পীকার নাবি বেরি। তিনি বলেছেন, লেবাননের সরকারের পদত্যাগের ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, লেবাননে নয়া সরকার গঠন হতে দীর্ঘ সময় লাগে। এবারও এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর হোয়াটসএ্যাপ এবং একই ধরনের এ্যান্ড্রয়েড এ্যাপসগুলোতে কর আরোপ প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানিয়ে লেবাননে বিক্ষোভ শুরু করে আন্দোলনকারীরা। এই প্রতিবাদের সঙ্গে যুক্ত হয় অর্থনৈতিক সঙ্কট, বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। হোয়াটসএ্যাপে কর বাতিলের আন্দোলন পরিণত হয় তীব্র সরকারবিরোধী আন্দোলনে। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া ও জীবনমানের অবনতির জন্য সরকারের পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভের মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। সাদ হারিরি লেবাননের রাজনীতিতে সৌদি সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে জোট সরকার গঠনের তাগিদে তার সরকারের শরিক হয় দেশটির ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে এক পর্যায়ে হারিরির প্রতি ক্ষুব্ধ হয় রিয়াদ। ২০১৭ সালে নিজ দেশে ডেকে নিয়ে বিমানবন্দরেই তাকে আটক করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কেড়ে নেয়া হয় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন। সৌদিতে আটক অবস্থাতেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন হারিরি। তবে রিয়াদ যে তাকে বলপূর্বক পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য করেছে, এটি স্পষ্ট হয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সৌদি আরব। একপর্যায়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর তৎপরতায় মুক্ত হন হারিরি। ম্যাক্রোঁ নিজে সৌদি সফরে গিয়ে হারিরির লেবাননে ফেরার ব্যবস্থা করেন। রিয়াদ তাকে বলপূর্বক পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য করায় সেটি কার্যকর হবে না বলে জানিয়ে দেন লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন। ওই ঘটনায় নিজের বড় পৃষ্ঠপোষক সৌদি আরবের সঙ্গে হারিরির দূরত্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। হিজবুল্লাহ বরাবরই তার সরকারের শরিক। তবে সম্প্রতি বৈরুতে বিক্ষোভকারীদের একটি ক্যাম্পে হিজবুল্লাহ সমর্থকদের হামলা ও ভাংচুরের পরই পদত্যাগের ঘোষণা দেন সাদ হারিরি।
×