স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত জামায়াতের ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও আলবদর কমান্ডার এটিএম আজাহারুল ইসলামের মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস চেয়ে আপীলের রায় ঘোষনা করা হবে বৃহস্পতিবার। মামলাটি আপীল বিভাগের কসলিষ্টে এক নম্বরে রাখা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট আপীল বেঞ্চ এ রায় ঘোষনা করবেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মো: নুরুজ্জামান।এটিএম আজাহারুল ইসলামের মামলাটি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষনার জন্য ১০ জূলাই সিএভি (অপেক্ষমান) রাখা হয়।
আপীল বিভাগে এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলাটি হবে অষ্টম মামলা। এর আগে আপীল বিভাগে ৭টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এই সাতটি মামলার মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয় ।যার মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ , বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপীল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
এটিএম আজাহারুল ইসলামের আপীল আবেদনের তার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং তাকে সহযোগিতা করেন এ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির। এছাড়া এ সময় আজহারুলের পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আইনজীবী জয়নুল আবেদীন তুহিন, এ্যাডভোকেট কামাল হোসেন ও মো. মতিউর রহমান মল্লিক উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও মো. মাসুদ হাসান চৌধুরী পরাগ।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনাল-১ একাত্তরে রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ৫টি অভিযোগই প্রমানিত হয়।এর মধ্যে ৩টি অভিযোগে ফাঁসি , ২টিতে ৩০ বছরের কারাদন্ড ও একটিতে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এ রায় ঘোষনা করেন। ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপীল করেন আজহারুল ইসলাম। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবীরা এ আপীল করেন। আপীলে খালাস চান তিনি। মোট ৯০ পৃষ্ঠার আপীলে খালাসের পক্ষে ১১৩টি যুক্তি তুলে ধরা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার রায়ের পর্যবেক্ষনে বরেছে, বীরঙ্গনারা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মতো জাতির অহঙ্কার। কারণ তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত এবং সম্মানিত বীরঙ্গনা। সমাজে তাদেরকে গ্রহণ, স্বীকৃতি এবং সম্মনিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। বীরঙ্গনাদের আত্মত্যাগকে বিবেচনায় নিয়ে তাদের ত্যাগ ও কষ্টকর অভিজ্ঞতার ইতিহাসকে স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করতে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: