মিথুন আশরাফ ॥ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। এক বছর কোন ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারবেন না সাকিব। দ্বিতীয় বছর খেলতে পারবেন। তবে আইসিসির পর্যবেক্ষণে থাকবেন সাকিব। সাকিবের এ নিষিদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর থেকেই কার্যকর হওয়া শুরু হয়ে গেছে।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে যখন বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুইয়েকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ হয় তখন প্রথম ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব পান সাকিব। কিন্তু আইসিসির কাছে তা জানাননি। একই সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো প্রস্তাব পান। তাও আইসিসির এ্যান্টি করাপশন বিভাগকে জানাননি। একই বছর এপ্রিলে আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ম্যাচেও গড়াপেটার প্রস্তাব পান। কিন্তু এবারও আইসিসিকে জানাননি সাকিব। তিনবার আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিটের কাছে ঘটনা লুকিয়েই এমন নিষিদ্ধ হয়েছেন সাকিব।
আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী কোডের তিনটি আইন লঙ্ঘনের অপরাধ সাকিব মেনে নেয়ার পর এ শাস্তি দিয়েছে আইসিসি। আকসুর কাছে তথ্য না জানানোয় এ শাস্তি পেয়েছেন সাকিব। দুই বছর আগে তিনটি ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও সেটি গোপন রাখেন সাকিব। অপরাধ স্বীকার করে নেয়ায় এক বছরের শাস্তি স্থগিত করা হয়েছে। আগামী বছরের ২৯ অক্টোবর পুনরায় সবধরনের ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন সাকিব। আইসিসিকে দেয়া বিবৃতিতে নিজের ওপর আসা এ শাস্তি তথা নিষেধাজ্ঞা মেনে নিয়েছেন সাকিব। একই সঙ্গে অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন, আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিটের সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার। আইসিসিতে সাকিব বলেন, ‘আমি সত্যিই খুব মর্মাহত। যে খেলাটাকে এত ভালবাসি সেখানে নিষিদ্ধ হলাম। তবে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব আইসিসিতে না জানানোয় আমি আমার নিষেধাজ্ঞা মেনে নিচ্ছি। আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিট খেলোয়াড়দের দুর্নীতিমুক্ত রাখতে প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি আমার অংশটা ঠিকঠাক পালন করতে পারিনি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘বিশ্বের সব খেলোয়াড়ের মতো আমিও চাই ক্রিকেট খেলাটা যেন দুর্নীতিমুক্ত থাকে। সামনের দিনগুলো আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিটের সঙ্গে তাদের দুর্নীতিবিরোধী প্রোগ্রামে কাজ করতে আগ্রহী। আমি এটি নিশ্চিত করতে চাই যে, আমার মতো ভুল যেন কোন তরুণ খেলোয়াড় ভবিষ্যতে না করে।’
এ বিষয়ে আইসিসির মহাব্যবস্থাপক এ্যালেক্স মার্শাল বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘সাকিব আল হাসান একজন অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। আইসিসির করা অনেক দুর্নীতি বিরোধী প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিল সে। সকল নিয়ম-কানুন ভালই জানা রয়েছে তার। তবুও সে তিনটি প্রস্তাবের কথা গোপন রেখেছে। এসব বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবেই জানানো উচিত ছিল।’ আইসিসির মহাব্যবস্থাপক আরও বলেন, ‘সাকিব তার নিজের ভুলগুলো মেনে নিয়েছে এবং তদন্তের স্বার্থে সম্পূর্ণ সহায়তা করেছে। এমনকি ভবিষ্যতে এ্যান্টি করাপশন ইউনিটের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে। যাতে করে তরুণ খেলোয়াড়রা এ ভুল করতে না পারে। আমি তার এই প্রস্তাবে খুশি।’
সাকিবের অপরাধ বুকির কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়ে তাৎক্ষণিক তা নাকচ করে দিলেও বিষয়টা অবহিত করেননি আইসিসিকে। গুরুত্ব না দিয়ে নিয়েছিলেন হাল্কাভাবে। ভারত সফরের ঠিক আগে অস্বস্তি বাংলাদেশ ক্রিকেটে। দুঃসংবাদ ঘিরে ধরেছে। একের পর এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় আপাতত ভারত সফর যেন চলে গেছে পিছনের সারিতে। বাংলাদেশ ক্রিকেট উত্তাল এক সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। ১১ দফা দাবি নিয়ে শুরু হওয়া ক্রিকেটারদের খেলা বর্জনের মধ্যে দিয়ে গোটা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিবের নেতৃত্বেই শুরু হওয়া ক্রিকেটারদের বিদ্রোহ দক্ষতার সঙ্গেই মোকাবেলা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। উভয় পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে ভারত সফরের ক্যাম্পে ও চলমান জাতীয় লীগে ফেরেন ক্রিকেটাররা। এই রেশ কাটতে না কাটতেই যোগ হয়ে গেল আরেক ইস্যু, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে সাকিবকে। এ নিয়ে এখন উত্তাল গোটা বাংলাদেশ। ক্রীড়াপ্রেমীদের কৌতূহল, আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন সাকিব। আইসিসির দুর্নীতি দমন কমিশনের (আকসু) কাছে প্রথমে ম্যাচ পাতানোর ফোন পাওয়ার কথা মনে করতে পারেননি সাকিব। কিন্তু আকসু থেকে পরিষ্কার তথ্য প্রমাণ উপস্থাপনের পর স্বীকার করেন সাকিব। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী কোন ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ, আম্পায়ার, স্কোরার যদি বুকিদের কাছ থেকে কোন ধরনের প্রস্তাব পান তাহলে আইসিসি বা সংশ্নিষ্ট দেশের ক্রিকেট বোর্ডের দুর্নীতি দমন কর্তাদের তা জানানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু বুকির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর সাকিব গোটা ব্যাপারটা গোপন করেন।
আইসিসি বিষয়টি জানতে পারে আন্তর্জাতিক জুয়াড়িদের কল রেকর্ড ট্র্যাক করে। এ ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণও উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে যে বুকির কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব, সে আইসিসির কালো তালিকাভুক্ত। বিষয়টি সম্পর্কে পুরোদস্তুর নিশ্চিত হওয়ার জন্যই আইসিসির এ্যান্টি করাপশন এ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিট প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’-এর সঙ্গে আলাদা করে কথাও বলেন। তারপর সাকিব নাকি তাদের কাছে নিজের ভুল স্বীকার করেন। তিনি বলেছেন বুকির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। বিষয়টিকে হাল্কাভাবে নেয়াতেই সাকিব এখন কঠিন বিপদের মুখে পড়ে যান। দুই বছর নিষিদ্ধ হয়েছেন। তবে অপরাধ স্বীকার করে নেয়ায় শাস্তি এক বছর স্থগিত হয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: