ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিকিউরিটি কোম্পানি নীতিমালার মধ্যে আসছে

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ৩০ অক্টোবর ২০১৯

 সিকিউরিটি কোম্পানি নীতিমালার মধ্যে আসছে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানিগুলোকে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে আনার প্রক্রিয়া চলছে। সিকিউরিটি কোম্পানিগুলোর পোশাক দেখতে অনেকটাই বিভিন্ন সরকারী বাহিনীর পোশাকের মতো। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। এমন সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাকের কারণে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এমন বিভ্রান্তি দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশের অধিকাংশ বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন প্রকার নীতিমালা মানা হয় না। এমনকি সারাদেশে কি পরিমাণ বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানি রয়েছে তার সুনির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান নেই। কোম্পানির অনেক সদস্য মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বেশিরভাগ সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই চাকরি দেয়া হচ্ছে। যেটি নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা পড়া একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিষয়টি দেখভালের জন্য উচ্চপর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে দেশের প্রতিটি সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যদের একই পোশাক চালুর বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে গৃহীত প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। সূত্র বলছে, প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানি খোলার ক্ষেত্রে বেসরকারী নিরাপত্তা বিধিমালা মানতে হবে। অথচ তা মানা হচ্ছে না। জেলাভিত্তিক সিকিউরিটি কোম্পানি গঠনের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনার বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানি খোলার জন্য লাইসেন্স ইস্যু করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত। সিকিউরিটি কোম্পানিতে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো বাধ্যতামূলক। নিরাপত্তা কোম্পানিগুলোর সদস্যদের পোশাক কোন সরকারী বাহিনীর মতো বা সাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারবে না। পোশাকে কোন র‌্যাঙ্ক ব্যাজ ব্যবহার করতে পারবে না। এমন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। এমনকি দেশে কি পরিমাণ বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানি রয়েছে, তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। এমনকি কোম্পানিগুলো তেমন কোন বিধিমালাই মানছে না। অনেক সময় সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যরা চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি বা অন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। দেশের অনেক নামকরা বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যদের ডাকাতি করে ধরা পড়ার রেকর্ড আছে। বিভিন্ন সরকারী বাহিনীর পোশাকের সঙ্গে অনেক বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যদের পোশাকের মিল আছে। আচমকা দেখলে মনে হবে, কোন সরকারী বাহিনীর সদস্য। এতে করে মানুষের মধ্যে রীতিমতো বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অনেক সময় বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যরা অপরাধ করার পর, মানুষ মনে করছে কোন সরকারী বাহিনী ওই অপরাধ করছে। অনেকেই এসব নিয়ে ফেসবুকে নানা ধরনের পোস্টও দিচ্ছে। এতে করে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন সরকারী বাহিনী সর্ম্পকে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হচ্ছে। সিকিউরিটি কোম্পানিগুলোতে চাকরিরত অধিকাংশ সদস্যের পুলিশ ভেরিফিকেশন হয় না। যাচাই-বাছাই ছাড়াই লোক নিয়োগের কারণে অনেক সময় অনেক সিকিউরিটি কোম্পানিতে দাগি অপরাধীরা চাকরি পাচ্ছে। আবার অনেকেই নিজেকে আড়াল করতে চাকরি নিচ্ছে। পরবর্তীতে এসব অপরাধী অনেক সময়ই আবারও নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সূত্রটি বলছে, সিকিউরিটি কোম্পানিতে কর্মরতরা যাতে নিয়মমাফিক সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এমন নির্দেশের পর সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শক, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতরের (এনএসআই) মহাপরিচালক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক, র‌্যাব মহাপরিচালক, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, ডিএমপি কমিশনার, কোস্টগার্ড, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), ঢাকা জেলার প্রশাসক ও মেট্রোপলিটন সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস গ্রুপের চেয়ারম্যান বা মহাসচিব বরাবর নোটিস পাঠানো হয়েছে। এদিকে প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানি সর্ম্পকে জানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো মেট্রোপলিটন সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্টের অফিসের দেয়া ঠিকানা মোতাবেক ৫৩ নম্বর মতিঝিলের মর্ডান ম্যানসনের নবম তলায় গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ১৪তলা মর্ডান ম্যানসনের নবম ফ্লোর ছাড়াও পুরো ভবনের ফ্লোর ঘুরেও এ নামে কোন অফিসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পঞ্চাশোর্ধ বয়সী ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, এ নামে কোন অফিসই নেই ভবনটিতে। কোন দিন ছিল কি-না তা তার জানা নেই। অন্তত ৫ বছর ধরে এখানে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করছেন বলেও জানান ওই নিরাপত্তা কর্মী। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এমন নোটিস জারির পর সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দেশের অনেক বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানির পোশাক, র‌্যাঙ্ক ব্যাজ ও টুপি অনেক সরকারী বাহিনীর মতো এবং সাদৃশ্যপূর্ণ বলে জানানো হয়। এজন্য দেশের প্রতিটি বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানিকে একই পোশাক ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। শুধু পোশাকে নির্দিষ্ট সিকিউরিটি কোম্পানির উজ্জ্বল মনোগ্রাম বা লোগো ব্যবহার করতে পারবে। পোশাকে ও বাহিনীর সদস্যের বুকে লাইসেন্সিং প্রতিষ্ঠানের নাম, মনোগ্রাম স্থায়ী কালি বা সুতা দ্বারা লিখতে হবে। যা সহজেই দেখা যায়। মাথার টুপিতে কোন মনোগ্রাম থাকতে পারবে না। টুপির রং কোন সরকারী বাহিনীর মতো বা সাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারবে না। এজন্য সারাদেশের সিকিউরিটি কোম্পানিকে একই ধরনের পোশাক ব্যবহার করলে সরকারী বাহিনীর সদস্যদের সর্ম্পকে বিভ্রান্তি দূর হবে। পাশাপাশি বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানি সর্ম্পকে সাধারণ মানুষ জানতে বা বুঝতে পারবে এমনকি অন্য কাজেও সুবিধা হবে। সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে। সিকিউরিটি কোম্পানিগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং করার কথাও আলোচিত হয়েছে।
×