ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিবকে দুই বছর নিষিদ্ধ করল আইসিসি

প্রকাশিত: ১০:২২, ৩০ অক্টোবর ২০১৯

 সাকিবকে দুই বছর নিষিদ্ধ করল  আইসিসি

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বাংলাদেশের ক্রিকেট সবচেয়ে বড় ধাক্কাই খেয়েছে মঙ্গলবার। বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইসিসি) দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসানকে। জুয়াড়িদের কাছ থেকে ৩ বার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও তা আইসিসির কাছে না জানানোয় তাকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সাকিবও অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় সাকিব ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবেন। এই ১ বছরে কোন ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারবেন না তিনি। তবে আগামী বছর ২৯ অক্টোবর থেকে পুনরায় খেলতে পারবেন। এই এক বছরের মধ্যে আবারও একই কর্মকান্ডে যুক্ত হলে আরেক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হবেন তিনি। আর যদি আগামী বছর ৩০ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এমন কিছু করেন সাকিব তবে আইসিসি তার পরবর্তী নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে ভাববে। আইসিসির এই সিদ্ধান্তের আগেই বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজারবাইজান থেকে ফিরে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন সাকিবের পাশে থাকার এবং আরও জানিয়েছিলেন আইসিসি আইন অনুসারে কোন ব্যবস্থা নিলে সে বিষয়ে করণীয় কিছু থাকে না। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলও তা বলেছেন। আর মঙ্গলবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন খুব ভালভাবে ফিরে আসবেন সাকিব। সার্বিক সহযোগিতায় তার পাশে থাকবে বিসিবি এমন প্রতিশ্রুতিও দেন। সাকিব নিজেও দুঃখ প্রকাশ করে ভালভাবে ফেরার প্রত্যয় জানিয়েছেন। সাকিব আসন্ন ভারত সফরে যাবেন কিনা তা নিয়ে গুঞ্জন গত দুদিন ধরেই ছিল। সোমবার একাধিক গণমাধ্যমে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দাবি করেন অনেক ক্রিকেটারই যেতে চাইছেন না ভারত সফরে। এরপরই সিাকিবকে নিয়ে গুঞ্জন আরও বেড়ে যায়। মঙ্গলবার আরেক গণমাধ্যমে লেখা হয় ফিক্সিং প্রস্তাব পেয়েও তা না জানানোর কারণে আইসিসি থেকে ১৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন সাকিব। তারপর থেকেই দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে ছিল উৎকণ্ঠাপূর্ণ অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যায় আইসিসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২ বছরের জন্য সাকিবকে নিষিদ্ধের কথা নিশ্চিত করে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে জিম্বাবুইয়ে, শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে বাংলাদেশ যে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে সে সময় তাকে দুইবার ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। আর একই বছর ২৬ এপ্রিল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) টি২০ আসরে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবেন মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচের আগেও এক জুয়াড়ি প্রস্তাব দিয়েছিলেন সাকিবকে। সব ক্ষেত্রেই তিনি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু নিয়ম অনুসারে আইসিসির কাছে বিষয়টি প্রকাশ করা লাগত। তা করেননি সাকিব। আর সে কারণেই শাস্তির খড়গ নেমে আসল তার ওপরে। সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, হাবিবুল বাশার সুমন এবং সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানও দুঃখ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে তারা আশা জানান বেশ ভালভাবেই ফিরে আসতে পারবেন সাকিব। সাকিব ২ বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার কারণে ১ বছরে কোন ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। তবে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১ বছরের নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ৩০ অক্টোবর থেকে আবার খেলতে পারবেন তিনি। সাকিব তার বিরুদ্ধে আনীত ৩টি অভিযোগই স্বীকার করে নেয়ার পর আইসিসি এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাকি ১ বছর তার নিষেধাজ্ঞাটি মূলত অকার্যকর থাকবে। এ সময় কড়া নজরদারিতে থাকবেন তিনি আইসিসি আকসুর। এ সময়ের মধ্যে আবার একই ধরনের কিংবা আইসিসি আইনবহির্ভূত কোন কিছু করলে আরেক বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে। পরবর্তী বছরের মধ্যে যদি কোন আইনবহির্ভূত কাজে যুক্ত হন সেক্ষেত্রে তার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেবে আইসিসি। গত ১৭ অক্টোবর ভারত সফরের জন্য ১৫ সদস্যের টি২০ দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচকরা। ২৫ অক্টোবর থেকেই ঘোষিত দলটির অনুশীলন ক্যাম্প শুরু হয়ে যায়। কিন্তু প্রথম দিনই অনুপস্থিত ছিলেন সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় দিন তিনি অনুশীলনে আসলেও জাতীয় দলের দুটি প্রস্তুতিমূলক টি২০ ম্যাচ খেলেননি। তখন থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়ে যায় সাকিবের ভারত সফরে যাওয়া নিয়ে। কারণ কিছুদিন আগে ক্রিকেটারদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ কয়েক দফা দাবিতে ধর্মঘটে গিয়েছিল তার নেতৃত্বে এবং সাকিব বিসিবির নিয়ম ভঙ্গ করে টেলিকম প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। বিসিবি সেজন্য তাকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিস পাঠায়। এরপর আবার গত বছর আইপিএলে ও জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েছিলেন এমনটা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় সোমবার। পরিস্থিতি হয়ে পড়ে আরও ঘোলাটে। সাকিবের ভারত সফরে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যদিও সাকিব জুয়াড়ির সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি, কিন্তু আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটের (আকসু) নিয়ম অনুসারে প্রস্তাব পেলেও তা জানাতে হয় স্বীয় বোর্ড এবং আইসিসিকে। অনেক আগে থেকেই আইসিসি বিশ^ ক্রিকেটে দুর্নীতি, ম্যাচ পাতানোর বিষয়গুলোর দিকে কড়া নজরদারি করছে। আইসিসির দুর্নীতি বিষয়ক আইনের ২.৪.৪ ধারায় আছে কোন ধরনের অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব ছাড়া দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ব্যপারে কেউ প্রস্তাবনা কিংবা আমন্ত্রণ জানালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সার্বিক ব্যাপারগুলো জানাতে হবে। আর তা জানাতে ব্যর্থ হলে আইসিসি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে আকসু কর্তৃক তদন্ত পরিচালনা শেষে ঘটনার সত্যতা পেলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সাকিব সেই নিয়ম অনুসরণ করেননি। এর আগে ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ চলার সময়েও সাকিব ম্যাচ এ ধরনের প্রস্তাব পেয়েছিলেন তা জানাননি সাকিব। তাই আইন অনুসারে ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞার শঙ্কায় পড়েন বিশে^র অন্যতম এ অলরাউন্ডার। শেষ পর্যন্ত সেই শঙ্কায় সত্য হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আইসিসি জানিয়ে দেয় সাকিবকে দুই বছর নিষিদ্ধ করার বিষয়টি। এ বিষয়ে আইসিসি জেনারেল ম্যানেজার এ্যালেক্স মার্শাল বলেছেন, ‘সাকিব অনেক আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ক্রিকেটার। সে অনেক শিক্ষামূলক কার্যকলাপে অংশ নিয়েছে এবং এই ধারার অধীনে তার দায়দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তার উচিত ছিল প্রতিটা প্রস্তাবনা সম্পর্কে জানানো। সাকিব তার ভুলগুলো স্বীকার করেছে এবং পুরো তদন্তে পূর্ণ সহায়তা করেছে। তাকে ভবিষ্যৎ অনুপ্রেরণামূলক প্রচারণায় অংশ নেয়ার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে তরুণ ক্রিকেটারদের তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য। আমি খুশি সে এই প্রস্তাব মেনে নেয়ার জন্য।’ গত ২/৩ দিন আগেই হুট করে বিসিবি সভাপতি পাপনকে একান্তে বিষয়টি জানিয়েছিলেন সাকিব। এ বিষয়ে পাপন বলেন, সে আমাকে আগেই বলেছে, ২/৩ দিন আগে যখন ওদের ধর্মঘটে সমাপ্তি আসে। কিন্তু আমাদের আসলে কিছুই করার ছিল না। কারণ অনেক আগে থেকেই এ বিষয়ে আকসু তদন্ত করছিল। আমি খুশি যে সাকিব তার এখানে যে ত্রুটি ছিল তা স্বীকার করেছে এবং তাদের পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। আমাদের আসলে এখানে কিছুই করার ছিল না। কিন্তু আমি একই সঙ্গে অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছি। কারণ আমাদের দুইজন খেলোয়াড় মাশরাফি ও সাকিবের কোন বিকল্প হয় না। আশা করছি সে খুব শক্তভাবে ফিরে আসবে এবং দেশের জন্য অবদান রাখতে পারবে। আমরা সবসময় তার পাশে থাকব এবং প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়ে যাব। উল্লেখ্য, এর আগে মোহাম্মদ আশরাফুল ২০১২ ও ২০১৩ সালের বিপিএলে ফিক্সিংয়ের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন। রাতে সাকিবও আসেন বিসিবি কার্যালয়ে। নিষেধাজ্ঞা নিশ্চিত হওয়ার পর রাতে বিসিবিতে এসে সভাপতি পাপনের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে তার সঙ্গেই সংবাদ সম্মেলনে আসেন সাকিব। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি যেই খেলাটি এত ভালবাসি, সেখান থেকে নিষিদ্ধ হওয়াতে আমি অত্যন্ত দুঃখবোধ করছি। কিন্তু আমি এই প্রস্তাবের বিষয়ে কোন রিপোর্ট না করায় পুরোপুরিভাবে এই শাস্তি মাথা পেতে নিচ্ছি। দুর্নীতির বিপক্ষে আইসিসির আকসু সবসময় আস্থা রাখে যে খেলোয়াড়রা এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে, কিন্তু আমি সেই দায়িত্ব এক্ষেত্রে পালন করিনি। অধিকাংশ খেলোয়াড় এবং বিশ্বব্যাপী ভক্তদের ন্যায় আমিও চাই দুর্নীতি মুক্ত ক্রীড়া এবং আমি এখন আইসিসি আকসুর দলটির সঙ্গে থেকে তাদের শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নেয়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছি। তাদের মাধ্যমে আমি নিশ্চিত করতে চাই তরুণ খেলোয়াড়রা যেন আমার মতো ভুল না করে।’ এরপর ফিরে আসারও প্রত্যয় জানান সাকিব। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব এতদিন আমাকে যে শতকোটি ভক্তরা সমর্থন দিয়ে গেছেন তারা এভাবেই দিয়ে যাবেন। ইনশাআল্লাহ আমি খুব ভালভাবে আবার ফিরে আসব এবং এখনকার চেয়ে আরও ভাল কিছু অবদান রাখতে পারব দেশের জন্য।’ সোমবার রাত থেকেই সাকিবের নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি চাউর হলে এ নিয়ে দেশজুড়েই সাড়া পড়ে যায়। মঙ্গলবার তাই ন্যাম সম্মেলনে যোগ দিতে আজারবাইজান সফরে থাকা বাংলাদেশের ক্রীড়ানুরাগী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন, এখানে সে একটা ভুল করেছে। এক্ষেত্রে আপনারা জানেন, আইসিসি যদি কোন ব্যবস্থা নেয়, এখানে আমাদের খুব বেশি কিছু করার সুযোগ থাকে না। তবু আমরা বলব, বিশ্ব ক্রিকেটে তার একটা অবস্থান আছে। একটা ভুল সে করেছে এবং সেটা সে বুঝতেও পেরেছে। এখানে খুব বেশি কিছু করার নেই আমাদের। বিসিবি সাকিবের পাশে আছে এবং সব রকমের সহযোগিতা দেবে। এ ধরনের ক্রিকেটারদের সঙ্গে জুয়াড়িরা যোগাযোগ করে। ওর (সাকিবের) যেটা উচিত ছিল, যখনই ওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, ও খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। ফলে সে আইসিসিকে বিষয়টি জানায়নি। নিয়মটা হচ্ছে, ওর সঙ্গে সঙ্গে জানানো উচিত ছিল। দুপুরে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এ বিষয়ে বলেন, ‘ক্রিকেট বোর্ড আমাকে জানিয়েছে তারাও কিছু জানতেন না। তারা সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সাকিব হয়তো হালকাভাবে নিয়েছেন, কেউ এটা সেভাবে গুরুত্ব দেননি। এটা যে এতদূর গড়িয়েছে, কেউ সেভাবে বুঝতে পারেনি। আইসিসি আসলে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, সেটা তো কোন নির্ভরযোগ্য রিপোর্ট নয়, তবে কোন কঠোর সিদ্ধান্ত যদি আসে বা না আসে, অবশ্যই আমরা সাকিবের পাশে থাকব। এটা অবশ্য আকসুর বিষয়। এখানে আমাদের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তবে খবরে আসার পর থেকে পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি।
×