ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিরোপা জয়ের আগে নির্ভার হওয়ার সুযোগ নেই ॥ মারুফুল

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

শিরোপা জয়ের আগে নির্ভার হওয়ার সুযোগ নেই ॥ মারুফুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অভিমত চট্টগ্রাম আবাহনী কোচ মারুফুল হকের, কোনো অজুহাত দেখাতে চাননা শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের একমাত্র দেশী এই কোচ, জিততে চান ট্রফি বর্তমানে দেশীয় কোচদের মধ্যে শীর্ষ নাম মারুফুল হক। আরেকবার এ প্রমাণ মিলছে চট্টগ্রামে চলমান শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলে। এই আসরে তিনি একমাত্র বাংলাদেশী কোচ হিসেবে ডাগআউটে আছেন। তাও আবার আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ থেকে ধাঁরে। অতিথি হিসেবে আসলেও দায়িত্বে কোনো গাফিলতি রাখছেন না ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের এই কৃতি কোচ। বুয়েটের শরীরচর্চা বিভাগের এই শিক্ষক স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনীকে পৌঁছে দিয়েছেন টুর্নামেন্টের ফাইনালে। প্রথম দক্ষিণ এশিয়ান কোচ হিসেবে উয়েফা 'এ' লাইসেন্স পাওয়া মারুফুলের এখন একটাই লক্ষ্য, শিরোপা পুনরুদ্ধার। এ লক্ষ্য পূরণে তার দল প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। তবে মিশন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নির্ভার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন মারুফুল। তারকা এই কোচ মঙ্গলবার ফাইনাল ছাড়াও নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। সে সবের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো। প্রশ্ন : সেমিফাইনালে কঠিন ম্যাচ ছিল। জামাল ভুঁইয়াকে শেষ মুহূর্তে চোটের কারণে তুলে নিয়েছেন। এখন দলের কি অবস্থা, ইনজুরি আছে কিনা? মারুফুল : আসলে টিমটাকে যখন রেডি করা হচ্ছিল তখন এ বিষয়ে আমাদের ভাবনা ছিল। এটা যেহেতু টুর্নামেন্ট সেহেতু আমাদের প্রস্তুতি ছিল সেমিফাইনাল, ফাইনাল ১২০ মিনিট যেতে পারে। এমন প্রস্তুতি আমাদের ছিল। আর জামাল ভুঁইয়ার যেটা হয়েছে এটা তার পায়ে প্রতিপক্ষের আঘাত ছিল। ট্রিটমেন্ট চলছে। আশা করি ফাইনালের আগেই সুস্থ্ হয়ে যাবে। প্রশ্ন : ফাইনালের আগে আপনার খেলোয়াড়দের শারিরীক প্রস্তুতি কেমন? মারুফুল : ফিজিক্যাল প্রিপারেশনের আগে প্রয়োজন হলো ফিজিক্যালি রিকভারি করা। এছাড়া মেনটেইনেন্সের প্রয়োজন রয়েছে। ম্যাচের আর একদিন বাকি। ফিজিক্যালি রিকভারি করার পাশাপাশি আমরা উদ্যোম ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। মানসিকভাবে শুরু থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়ে আসছিলাম ফাইনালের আগে এটা (মানসিক প্রস্তুতি) চেঞ্জ হবেনা। এখন ক্লান্তি দূর করে নিজেদের ম্যাচ ফিট করে তোলাই বড় চ্যালেঞ্জ। প্রশ্ন : ফাইনালের আগে কি আপনারা নির্ভার? মারুফুল : ফাইনালের আগে নির্ভার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ট্রফিটা হাতে পেয়েই নির্ভার হবো। এখনও প্রধান কাজটা বাকি। যে কারণে উদযাপনের কোনা সুযোগই নেই। আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ণশিপ পুনরুদ্ধার করা। খেলোয়াড়দের মাথাতেও বিষয়টা আছে। সেমিফাইনাল জেতার পর উদযাপন যা একটু হয়েছে ড্রেসিংরুমেই। এরপর থেকে খেলোয়াড়েরা আবার ফাইনাল নিয়ে ভাবছে। প্রশ্ন : তাহলে কি ফাইনাল নিয়ে চাপে আছেন? মারুফুল : ফাইনালে চাপ থাকবেই। চ্যাম্পিয়শিপ পুনরুদ্ধারের চাপ আছে। কিন্তু সেই চাপ জয় করে খেলাটাকে উপভোগ করতে পারলেই আপনি সত্যিকারের পারফর্মার হবেন। প্রশ্ন : ফাইনালের প্রতিপক্ষ সম্পর্কে বলুন মারুফুল : মোহনবাগের বিরুদ্ধে অলরেডি খেলেছি আমরা। তাদের বিরুদ্ধে আমার দল পারফর্ম করেছে মনে করি। যদি সবাই থাকতো তাহলে হয়তোবা জয়ও পেতাম। আর টেরেঙ্গানু গোল পেয়েছে কিন্তু তাদের ধারাবাহিকতার অভাব আছে। গোকুলামের বিরুদ্ধে তাদের খেলাটা দেখলে দেখবেন যে, তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ক্লাবটিই বেশি সুযোগ সৃষ্টি করেছে। শেষ ম্যাচে আবার টেরেঙ্গানু যথেষ্ট ভাল খেলেছে। সবকিছু মিলিয়েই তাদের শক্তিশালী দিক, দুর্বল দিক আমাদের বিবেচনায় আছে। প্রশ্ন : সেমিফাইনাল খেলার মাত্র ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে ফাইনাল খেলতে হবে। সময়টা পর্যাপ্ত কিনা মারুফুল : না, এটা পর্যাপ্ত সময় না। ৪৮ ঘন্টায় একটা খেলোয়াড় মাত্র ৮০ শতাংশ রিকোভার করে। শতভাগ করেনা। তারপরও আমাদের কিছু রিকোভারি প্রক্রিয়া আছে। কিছু অ্যাকটিভ রিকোভারি আছে, কিছু স্ট্যাটিক রিকোভারি আছে। এগুলোর মাধ্যমে আমি চেষ্টা করছি যে ফাইনালোর আগে যেন শতভাগ ফিট করা যায়। সাথে অবশ্যই খাদ্যাভাস থাকবে। প্রশ্ন : আপনার দলের কম্বিনেশন সম্পর্কে বলুন। মারুফুল : কম্বিনেশনের কথাটা আমি শুধু একবারই বলেছি। বেশি বললে সেটা অজুহাতের মতো হয়ে যায়। আমি কেনো অজুহাত রাখতে চাইনা। এরা যেহেতু পেশাদার খেলোয়াড়, আমি মনে করিনা এদের সঙ্গে একটা ম্যাচ খেলা, একটা ট্রেনিং সেশন করার পর বোঝাপোড়ায় কোনো সমস্যা হওয়া উচিত। যদি আমি এটা বারবার বলি তাহলে এটা অজুহাতের মতো হয়ে যাবে। আর খেলোয়াড়েরাও রিলাক্সড হয়ে যাবে। কারণ তখন একটা অজুহাত রেডিই থাকে যে, আমাদের কম্বিনেশন নেই আমরা একসথে বেশি ম্যাচ খেলতে পারিনি। এটা প্রথম ম্যাচে একটু সমস্যা হলেও হতে পারে। কিন্তু এটা খেলোয়াড়েরা মানিয়ে নিয়েছে। এখন আর কোনো সমস্যা হচ্ছে না। প্রশ্ন : আপনি আপনার প্রতিপক্ষকে ঠিকমতো খেলতে দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে কিছু বলুন। মারুফুল : এটাই তো কোচিং। প্রতিপক্ষকে বিচার বিশ্লেষন করা তাদের শক্তিমত্তা, দুর্বলতা সম্পর্কে জানা এবং নিজের সম্পদকে সে অনুপাতে ব্যবহার করা এই কৌশলকে আমি প্রয়োগ করবো। অন্য কোনো জটিল ও কঠিন কৌশল তাদের উপর চাপিয়ে দিবনা। প্রশ্ন : প্রায় সব গোলই বিদেশীরা ফুটবলাররা করছে। দেশীয় ফুটবলারদের পিছিয়ে থাকার কারণ কি? মারুফুল : এখানে দেখা গেছে যে বিদেশীরাই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। কিন্তু দল যদি একতাবদ্ধ হয়ে কাজ না করে তাহলে কিন্তু বিদেশীরাও কিছু করতে পারবেনা। কালকে (সোমবার) গোল তিনটি বিদেশীদের পায়ে এলেও যোগান এসেছিল দেশীয় তিন খেলোয়াড়ের পা থেকে। একটা জিনিস আমি সবসময় বলি যে, খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। সেটা কখনও মাত্রা ছাড়িয়ে যাবেনা,একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকবে। সেটা বেশি হয়ে গেলে খেলোয়াড়দের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসে। যেমন ধরুন লুকা রটকোভিচ। লুকা গতকাল (সেমিফাইনালে গোকুলামের বিরুদ্ধে)। অতিরিক্ত উত্তেজিত ছিল। এ কারণে ভুল হবেই। কিন্তু আত্মবিশ্বাস একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকলে উত্তেজনাটা কম আসে, কৌশল অনুপাতে পারফর্ম করতে পারে। প্রশ্ন : মালয়েশিয়া ও ভারতীয় ক্লাবগুলোর মান কেমন? মারুফুল : আমি তিনটা আসরই দেখেছি। এবারের টিমগুলোই বেশি শক্তিশালী এবং ম্যাচগুলো বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে। আপনি ভারতের কথা বলছেন, ভারত তো আমাদের লেভেলে নেই। আমরা পঞ্চম টায়ারে আছি, আর ওরা আছে তৃতীয় টায়ারে। একই কথা মালয়েশিয়ার লীগের জন্যও প্রযোজ্য। তাদের লীগের কোয়ালিটিও যথেষ্ট ভাল। আমাদের এখানে লীগে চার-পাঁচটি টিমের পর আর বাকিরা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনা। কিন্তু ওদের ওখানে সবাই কিন্তু চ্যালেঞ্জ জানায়।
×